Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
IPL 2023

ক্রিকেট দুর্নীতি, ক্যানসার আক্রান্ত বাবা, সব বাধা পেরিয়ে আইপিএলে কেকেআরের সুযশ

দিল্লি ক্রিকেট সংস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ বার বার উঠেছে। তাই অনেক ক্রিকেটারের প্রতিভা থাকলেও নাকি সুযোগ পান না। সুযশের বাবা ক্যানসার আক্রান্ত। তাঁকে নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ লেগ স্পিনার।

Suyash Sharma

লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ লেগ স্পিনার। ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:০৫
Share: Save:

কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলতে নামার আগে সুযশ শর্মা কোন দলে খেলতেন? জানা যায় দিল্লির অনূর্ধ্ব-২৫ দলে খেলতেন তিনি। কিন্তু দিল্লি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নীতীশ রানা তাঁকে চিনতেন না। সে কথা বৃহস্পতিবারই জানান কেকেআর অধিনায়ক। মনে করা হয় গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা সুযশের মাথার উপর কেউ ছিল না বলেই দিল্লি দলে সুযোগ পাননি প্রতিভাবান তরুণ।

দিল্লি ক্রিকেট সংস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ বার বার উঠেছে। তাই অনেক ক্রিকেটারের প্রতিভা থাকলেও নাকি সুযোগ পান না। সুযশের বাবা ক্যানসার আক্রান্ত। তাঁকে নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ লেগ স্পিনার। পূর্ব দিল্লির ভজনপুর থেকে উঠে এসেছেন সুযশ। ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসাবে বৃহস্পতিবার মাঠে নামেন তিনি। তিনটি উইকেট নেন। প্রতি বার নাইট রাইডার্সের লোগোর উপর হাত রেখে ইঙ্গিত করেন ‘আমি আছি’। বুঝিয়ে দেন যে বড় ম্যাচে খেলার স্নায়ুর চাপ তিনি নিতে পারেন।

বিরাট কোহলিকে ছোটবেলায় প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন সুরেশ বাত্রা। তিনিই প্রথম সুযশের মধ্যে প্রতিভা দেখতে পান। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার থেকে উঠে এসেছেন সুযশ। তাঁর জন্য সুরেশ ফোন করেছিলেন করতর নাথকে। দিল্লির প্রাক্তন ক্রিকেটার ২০১৬ সালে সুরেশের থেকে ফোন পান। করতর বলেন, “ফোন পাওয়ার পরেই আমি সুযশের ট্রায়াল নেওয়ার জন্য ডেকে পাঠাই। দারুণ লেগেছিল। ওর গুগলিটা অনেকটা ঘোরে। ব্যাটারদের বুঝতে খুব অসুবিধা হত। ওর মধ্যে একটা এক্স ফ্যাক্টর ছিল। দেনা ব্যাঙ্কের ক্রিকেট দলে নেওয়া হয় সুযশকে। ডিডিসিএ লিগে খেলে ও। প্রচুর উইকেট নিয়েছিল ও সেই লিগে।” দেনা ব্যাঙ্কের হয়ে খেললেও খুব বেশি এগোতে পারছিলেন না সুযশ। করতর তাঁর জন্য প্রচুর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই রাজ্যের বয়সভিত্তিক খেলায় তাঁকে দলে নেওয়া হচ্ছিল না। দিল্লির কোচ রণধীর সিংহ বলেন, “সুযশের ক্রিকেট শেখাটা খুব মসৃণ পথে হয়নি। সুরেশের ক্লাবে খেলত। করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যাওয়ার পর আমার কাছে আসে সুযশ। মাদ্রাজ ক্লাবের হয়ে খেলে ও।”

শেষ এক বছর সুযশের জন্য খুব কঠিন ছিল। রণধীর বলেন, “ওর বাবার ক্যানসার ধরে পড়ে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের ম্যানেজার রাহুল সাংভির কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবে সুযশ। দিল্লির প্রাক্তন স্পিনার সুযশের বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। আমি বলেছিলাম যে, কোনও দরকার হলে এমসে ভর্তির ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু রাহুলকে ধন্যবাদ। মুম্বইয়েই সুযশের বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ও।”

কলকাতা, মুম্বই বা চেন্নাইয়ের মতো দিল্লির ক্লাবে খেলে খুব বেশি টাকা রোজগার করা যায় না। ক্রিকেটারদের সঙ্গে সরকারি ভাবে চুক্তিও হয় না। ফলে সুযশ দিল্লির বিভিন্ন ক্লাবে খেললেও টাকা পেতেন না। রণধীর বলেন, “ক্লাব ক্রিকেটে খেলার জন্য আমরা সুযশকে কোনও টাকা দিতাম না। কেউই টাকা পায় না। শুধু যদি ভারতের হয়ে খেলা কোনও ক্রিকেটারকে অনুরোধ করা হয় খেলার জন্য, তাকে হয়তো কিছু দেওয়া হয়।”

মাদ্রাজ ক্লাবে এর আগে বীরেন্দ্র সহবাগ এবং যুজবেন্দ্র চহালের মতো ক্রিকেটার খেলেছেন। সেই ক্লাবের হয়েই খেলতেন সুযশ।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, দিল্লি ক্রিকেটে বয়সভিত্তিক খেলায় সুযোগ পেতে হলে কোনও ক্লাব বা কোনও প্রভাবশালীকে না কি প্রয়োজন। না হলে সুযোগ পাওয়া খুবই কঠিন। রণধীর বলেন, “ডিডিসিএ চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে সাতটি উইকেট নেয় ও। সেখান থেকেই দিল্লির অনূর্ধ্ব-২৫ দলে সুযোগ পায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সুযশকে সিকে নাইডুর মতো প্রতিযোগিতায় খেলতে নেওয়া হল না। বলা হল লাল বলে নয়, সাদা বলের ক্রিকেটার ও। কাউকে যদি সুযোগই না দেওয়া হয় তা হলে কেউ জানবে কী করে যে সে কোন বলের ক্রিকেটার।”

দিল্লির অনূর্ধ্ব-২৫ দলে সুযোগ পাওয়াও সুযশের জন্য বেশ কঠিন ছিল। ভাল খেলাটা ছিল সুযশের হাতে। কিন্তু তাঁর পথে বাধা হওয়ার জন্য অনেকেই ছিলেন। দিল্লির সুযশকে তাঁরা রাজস্থানের ক্রিকেটার বলেন। তাতে সুযশের সুযোগ পাওয়াই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। মিথ্যে কথা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সুযশের নামে। সেই সব বাধা পার করেই উঠে এসেছেন তিনি। প্রাক্তন পেসার পঙ্কজ সিংহ বলেন, “কোচ হিসাবে আমি দেখেছিলাম যে ওর প্রাথমিক বিষয়গুলো ঠিক আছে কি না। ওর মধ্যে স্পিন করানোর ক্ষমতা রয়েছে। বল করার ধরনে কোনও পরিবর্তন না করেই ও লেগ স্পিন এবং গুগলি করতে পারে। এটা সত্যিই স্পেশাল। বলের গতিও কমে না ওর।”

ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলেই আইপিএলে অভিষেক হয়ে গেল সুযশের। কলকাতার ট্রায়ালে তাঁকে দেখেছিলেন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এবং সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার। পঙ্কজ বলেন, “রঞ্জি, মুস্তাক না খেলেই আইপিএলে সুযোগ পাওয়া কঠিন। ওর ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আইপিএলে খেলার চাপ ও নিতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। প্রশ্ন ছিল আমার মনে। সেই কারণে কেকেআরের ট্রায়ালে যাওয়ার আগে আমি কথা বলেছিলাম ওর সঙ্গে। নায়ার আমার বন্ধু। ওকে আমি বলেছিলাম সুযশের কথা। এক বার দেখতে বলেছিলাম ওকে। চাপ নিতে পারবে কি না সেটাও বুঝে নিতে বলেছিলাম।”

অন্য বিষয়গুলি:

IPL 2023 Suyash Sharma KKR Kolkata Knight Riders
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy