আইপিএল থেকে বিদায় নিয়ে হতাশ বিরাট কোহলি। ছবি: আইপিএল।
আরও এক বার স্বপ্নভঙ্গ বিরাট কোহলির। ১৭ বছরেও অধরা থাকল আইপিএল ট্রফি। বুধবার আইপিএলের এলিমিনেটরে রাজস্থান রয়্যালের কাছে হারলেন কোহলিরা। আমদাবাদের মাঠে প্রথমে ব্যাট করে ১৭২ রান করে বেঙ্গালুরু। কোহলি করেন ৩৩ রান। রান তাড়া করতে বিশেষ সমস্যা হয়নি রাজস্থানের। বেঙ্গালুরুর বোলারেরা লড়াই করলেও দলকে জেতাতে পারেননি। ফলে আরও এক বার ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হল বেঙ্গালুরুকে। এই ম্যাচ জিতে আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে উঠল রাজস্থান। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস হারেন বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি। প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রাজস্থানের অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। পাওয়ার প্লে-র শুরুর ৩ ওভার ভাল করে রাজস্থান। বিশেষ করে ট্রেন্ট বোল্ট। তাঁর বল মারতে সমস্যা হচ্ছিল কোহলি ও ডুপ্লেসির। চতুর্থ ওভার থেকে হাত খোলেন দুই ব্যাটার। বোল্ট ভাল বল করছেন দেখে পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারেও তাঁর হাতে বল তুলে দেন সঞ্জু। সেই ওভারেই ডুপ্লেসিকে আউট করেন বোল্ট। মিড উইকেট অঞ্চলে তুলে মেরেছিলেন ডুপ্লেসি। সামনে ঝাঁপিয়ে ভাল ক্যাচ ধরেন রভম্যান পাওয়েল। ১৭ রানে ফেরেন ডুপ্লেসি।
কোহলি ভাল খেলছিলেন। কিন্তু তাঁকে হাত খোলার বেশি জায়গা দিচ্ছিলেন না রাজস্থানের বোলারেরা। বাধ্য হয়ে যুজবেন্দ্র চহালের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন কোহলি। ৩৩ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন ক্যামেরন গ্রিন ও রজত পাটীদার। ভাল খেলছিলেন তাঁরা। দলের রান ১০০-র কাছে নিয়ে যায় এই জুটি। ৯৭ রানের মাথায় বেঙ্গালুরুকে জোড়া ধাক্কা দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। পর পর দু’বলে গ্রিন (২৭) ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (০) আউট করেন তিনি।
জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পরে বেঙ্গালুরুর ইনিংস সামলান পাটীদার ও মহীপাল লোমরোর। স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভাল খেলছিলেন পাটীদার। বড় শট মারছিলেন। প্রথম স্পেলে রান দিলেও দ্বিতীয় স্পেলে এসে পাটীদারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন আবেশ খান। ৩৪ রান করেন পাটীদার। আবেশের পরের বলেই আউট হতে পারতেন দীনেশ কার্তিক। বল তাঁর প্যাডে লাগলে আম্পায়ার আউট দেন। কার্তিক রিভিউ নেন। সেখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না যে বল ব্যাটে লেগেছে না ব্যাট প্যাডে লেগেছে। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ারের মনে হয় বল ব্যাটে লেগেছে। তিনি নট আউট দেন। এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি রাজস্থানের কোচ কুমার সঙ্গকারা। বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
কার্তিক অবশ্য বেশি ক্ষণ ক্রিজ়ে থাকেননি। ১১ রান করে ফেরেন তিনি। লোমরোর করেন ৩২ রান। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান করে বেঙ্গালুরু।
জবাবে শুরুর ২ ওভারে রান করতে পারেনি রাজস্থান। স্বপ্নিল ও সিরাজের বলে সমস্যা হচ্ছিল যশস্বী জয়সওয়াল ও টম কোহলার-ক্যাডমোরের। তৃতীয় ওভারে যশ দয়ালের বলে জোরে শট মারতে যান যশস্বী। বল ব্যাটে লেগে স্লিপে যায়। ক্যাচ ধরার চেষ্টা করেন গ্রিন। কিন্তু বল তাঁর হাতে লেগে বেরিয়ে যায়। সেই ওভারে চারটি চার মারেন যশস্বী। পরের ওভারে সিরাজও রান দেন। ফলে রানের গতি বেড়ে যায় রাজস্থানের।
পাওয়ার প্লে-র মধ্যে আবার উইকেট নিতে পারতেন যশ। তাঁর বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন ক্যাডমোর। বাউন্ডারিতে সহজ ক্যাচ ফেলেন ম্যাক্সওয়েল। বার বার ক্যাচ ফস্কানোর খেসারত দিতে হয় বেঙ্গালুরুকে। আক্রমণাত্মক শট খেলা শুরু করেন রাজস্থানের দুই ওপেনার। কোহলিদের খেলায় ফেরান লকি ফার্গুসন। পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে তাঁর ইয়র্কারে বোল্ড হন ক্যাডমোর। ২০ রান করেন তিনি।
ওপেন করতে নেমে ভাল খেলছিলেন যশস্বী। সাবলীল দেখাচ্ছিল তাঁকে। তিন নম্বরে নামেন সঞ্জু। পাওয়ার প্লে-র পরে ফিল্ডিং ছড়িয়ে যাওয়ায় সহজে রান আসছিল। শিশির পড়ায় বল ধরতে সমস্যা হচ্ছিল বোলারদের। ক্রিজ় থেকেও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছিলেন না তাঁরা। সেই সুবিধা কাজে লাগায় রাজস্থান।
বেঙ্গালুরুকে খেলায় ফেরান গ্রিন। ৪৫ রানের মাথায় যশস্বীকে আউট করেন তিনি। পরের ওভারেই আউট হন সঞ্জু। কর্ণ শর্মার বল এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউট হন তিনি। অল্প রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটারকে হারায় রাজস্থান। দলকে জেতানোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে রিয়ান পরাগ ও ধ্রুব জুরেলের কাঁধে। ভাল বল করছিলেন গ্রিন। চাপ কিছুটা বাড়ছিল। তখনই আরও এক বার তাড়াহুড়ো করে উইকেট হারায় রাজস্থান। ২ রান নিতে যান দুই ব্যাটার। বাউন্ডারি থেকে ভাল থ্রো করেন কোহলি। রান আউট হয়ে যান জুরেল।
তখনও ক্রিজ়ে ছিলেন পরাগ। চলতি আইপিএলে ফর্মে রয়েছেন তিনি। আরও এক বার রাজস্থানের হয়ে ফিনিশারের কাজ করছিলেন পরাগ। ঠান্ডা মাথায় একের পর এক বড় শট খেলছিলেন। তাঁকে সঙ্গ দেন ছ’নম্বরে নামা শিমরন হেটমায়ার। যে গ্রিন ভাল বল করছিলেন তাঁকেই শেষ ওভারে নিশানা করলেন রাজস্থানের দুই ব্যাটার। শেষ ২৪ বলে দরকার ছিল ৩০ রান। পরাগ ও হেটমায়ার জানতেন, বুদ্ধি করে ব্যাট করলেই জিতে যাবেন তাঁরা।
সব তাস ব্যবহার করেন ডুপ্লেসি। কিন্তু শিশিরের ফলে বোলারদের বল ধরতেই সমস্যা হচ্ছিল। ফলে দ্রুত রান উঠছিল। ৩৬ রানের মাথায় সিরাজের বলে আউট হন পরাগ। তত ক্ষণে অবশ্য খেলা রাজস্থানের হাতে চলে গিয়েছে। কিন্তু লড়াই ছাড়েনি বেঙ্গালুরু। সেই ওভারে ২৬ রানের মাথায় হেটমায়ারকেও আউট করেন সিরাজ।
শেষ ১২ বলে রাজস্থানের জিততে দরকার ছিল ১৩ রান। ফার্গুসনের প্রথম বলেই চার মারেন পাওয়েল। পরের বলে আবার চার মারেন পাওয়েল। সেখানেই ম্যাচ বেরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৬ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেট ম্যাচ জিতে যায় রাজস্থান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy