আইপিএলের পিচ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ছবি: আইপিএল।
আইপিএলের পিচ যেন বোলারদের বধ্যভূমি। তাঁদের জন্য কিছুই নেই ২২ গজগুলিতে। মনের সুখে রান করে যাচ্ছেন ব্যাটারেরা। রানের উৎসব চলছে। তার সঙ্গে ছোট করে দেওয়া হয়েছে বাউন্ডারি। ব্যাট-বলের লড়াই দেখাই যাচ্ছে না। আইপিএল নিয়ে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন বিভিন্ন দলের বোলারেরা। রবিচন্দ্রন অশ্বিন তো সরাসরি মুখ খুলেছেন। কেন এমন একপেশে ক্রিকেটের আয়োজন?
গত শুক্রবার ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৬১ রান তুলেও হেরে গিয়েছে পঞ্জাব কিংসের কাছে। আট বল বাকি থাকতে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে পঞ্জাব। আইপিএলের ইতিহাসে এত রান তাড়া করে এর আগে জয় পায়নি কোনও দল। এই নজির তৈরি হওয়ার পরেই আইপিএলের পিচের মান নিয়ে প্রশ্ন আরও তীব্র হয়েছে। ছোট মাঠ, আধুনিক ব্যাট, আগ্রাসী মানসিকতা, গরম আবহাওয়া— সব কিছু মেনে নিয়েও বোলারদের দুর্দশা দেখে পিচ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা। একাংশ ক্ষুব্ধ ক্রিকেটের মূল আকর্ষণ নষ্ট হওয়ায়। স্পিনারেরা সামান্য কিছু সাহায্য পেলেও মাঠে অসহায় দেখাচ্ছে জোরে বোলারদের। ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ মনে করছেন, এমন হলে অদূর ভবিষ্যতে আইপিএল খেলার আগ্রহ হারাবেন বোলারেরা।
কেন এমন পিচ তৈরি করা হল বিশ্বের সব থেকে দামি ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়? তার উপর যে প্রতিযোগিতা বিসিসিআইয়ের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস? এক পিচ প্রস্তুতকারী বলেছেন, ‘‘এ বার দেশে গরম পড়েছে অত্যন্ত বেশি। এর ফলে দেশের পিচগুলিতে আর্দ্রতার পরিমাণ অত্যন্ত কম। কোথাও কোথাও নেই বললেই চলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা প্রভাব ফেলছে। আকাশে মেঘের পরিমাণের উপর কিছুটা নির্ভর করে পিচের চরিত্র। মেঘও প্রায় নেই কোথাও। বৃষ্টি হচ্ছে না। দিন এবং রাতের তাপমাত্রার তেমন পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। অন্য বারের থেকে এ বারের পিচগুলি আলাদা হওয়ার প্রধান কারণ আবহাওয়া।’’
শুধুই কি তাই? প্রকৃতিকে কাঠগড়ায় তুলে দায় এড়াতে পারে বিসিসিআই? পিচ প্রস্তুতকারক বলেছেন, ‘‘জোরে বোলারেরা বেশি সমস্যায় পড়ছে। স্পিনারেরা অল্প কিছু সাহায্য পেলেও জোরে বোলারদের জন্য সত্যিই এ বারের পিচগুলোয় কিছু নেই। ব্যাটারেরা সহজে ওদের বিরুদ্ধে রান তুলতে পারছে। বল খুব ভাল ব্যাটে আসছে। তবে একটু ধীর গতির উইকেটে কিছুটা সাহায্য পাচ্ছে জোরে বোলারেরা।’’
এ বারের আইপিএলে ৭০০-র বেশি ছক্কা হয়েছে এখনও পর্যন্ত। ওভার প্রতি গড়ে প্রায় ১০ রান করে উঠছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিচ প্রস্তুতকারী বলেছেন, ‘‘আমরা কখনও চাই না খেলা একপেশে হোক। আমরা যারা পিচ প্রস্তুত করি, তারা এই পরিস্থিতিতেও স্পিন সহায়ক ২২ গজ তৈরি করতে পারি। তা হলেই আর এত রান উঠবে না।’’ তা হলে কেন বোলারেরাও সাহায্য পেতে পারে এমন পিচ দেওয়া হচ্ছে না আইপিএলে? তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথম দিকে কয়েকটি মাঠের পিচে হালকা ঘাস রাখা হয়েছিল। তাতে পিচের আর্দ্রতা কিছুটা বজায় রাখা যায়। জোরে বোলারদের সুবিধা হয়। ব্যাটারদের পক্ষেও রান করা কঠিন হয় কিছুটা। আমরা সব সময় চাই ব্যাট-বলে ভাল লড়াই হোক। আসলে আবহাওয়ার জন্যই এ বার এমন হচ্ছে।’’
প্রশ্ন উঠেছে ইডেনের ২২ গজ নিয়েও। সিএবির পিচ প্রস্তুতকারী সুজন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ইডেনে তো সুনীল নারাইন বল স্পিন করাচ্ছে। ওর তো সমস্যা হচ্ছে না। ইডেনে শুধু ব্যাটারেরাই সুবিধা পাচ্ছে এমন নয়। এখন যে সব ব্যাট ব্যবহার করা হয়, সেগুলিতে বড় শট মারা সহজ। তাই ছয়ের সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সব সময় ভাল পিচ তৈরির চেষ্টা করি। ব্যাট-বলের লড়াই হবে এমন পিচ তৈরির নির্দেশই দেয় বিসিসিআই। ইডেনের পিচ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে।’’
সমালোচনা হলেও পিচ প্রস্তুতকারীরা মূলত দুষছেন এ বারের গরমকে। তাঁদের দাবি, গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়াতেই বদলে যাচ্ছে পিচের চরিত্র। সুবিধা হচ্ছে ব্যাটারদের। সমস্যায় পড়ছেন বোলারেরা। রানের পাহাড়ে উঠছে আইপিএল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy