দুই-মেরু: শিক্ষক বিরাট, ছাত্র আফগান ওপেনার গুরবাজ়। নিজস্ব চিত্র।
ইডেন ঘরের মাঠ কলকাতা নাইট রাইডার্সের। কিন্তু বুধবার মাঠের ভিতর ও বাইরের দৃশ্য দেখলে মনে হবে না, কলকাতায় ম্যাচ খেলতে এসেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। যেন বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেই প্রস্তুতি চলছে নাইট শিবিরের!
ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন দেখার জন্য এসেছিলেন বেশ কিছু দর্শক। কেকেআরের অনুশীলন চলছিল ‘বি’ ব্লকের সামনে। সেখানে কোনও ভিড়ই চোখে পড়ল না। তার ঠিক উল্টো প্রান্তে অনুশীলন চলছিল আরসিবির। সেই গ্যালারির সামনে উপচে পড়া ভিড়। মোবাইল ক্যামেরা বার করে ভিডিয়ো মোড অন করে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কারণ, তাঁদের সামনেই নেটে ব্যাট করছিলেন স্বয়ং বিরাট কোহলি।
টিকিটের এতটাই হাহাকার যে, বৃহস্পতিবার তাঁদের মধ্যে হয়তো অনেকেই মাঠে আসতে পারবেন না। তাই বুধবার প্রাণ ভরে দেখে নিলেন তাঁদের প্রিয় তারকার ব্যাটিং। বিরাট একটি করে শট হাঁকাচ্ছেন, পেছন থেকে ধ্বনি উঠছে, ‘‘কোহলি... কোহলি...’’। কেকেআর শিবির থেকেও উমেশ যাদব, শার্দূল ঠাকুরদের নজর বারবার চলে যাচ্ছিল আরসিবি নেটের দিকে। হতে পারে তাঁরা ভাবছিলেন, ‘‘নিজেদের রাজত্বেও আসল রাজার উপর থেকে নজর সরছে না।’’
নেটে রীতিমতো ক্ষুধার্ত দেখাল বিরাটকে। মোট তিনটি নেটে ব্যাট করেন তিনি। শুরুতে ‘থ্রো ডাউন’ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তাঁর মহড়া চলে ১৫ মিনিট। তার পরে চলে যান পেসারদের নেটে। সেখানে প্রায় আধ ঘণ্টা ব্যাট করেন বিরাট। ফিরে আসেন স্পিনারদের নেটে। সেখানেও তাঁর প্রস্তুতি চলে ১৫ মিনিট। মঙ্গলবার বিশ্রাম নিয়েছিলেন তিনি। এ দিন সর্বশক্তি নিয়ে নেটে ফেরেন। নাইটদের বিরুদ্ধে নামার আগে তরতাজা মেজাজে ‘কিং কোহলি’। শেষ ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ৮২ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। অনুশীলনও যেন শুরু করেন সেই মেজাজেই। প্রথম বল থেকেই মারমুখী বিরাটকে দেখা যায় ইডেনে। বিরাট ও ফ্যাফের অনুশীলনেই স্পষ্ট হয়ে গেল আরসিবির পরিকল্পনা। প্রথম বল থেকেই আক্রমণ করার মেজাজে রয়েছেন দুই ওপেনার। কারণ, আরসিবি শিবিরে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। অন্য দিকে কেকেআর শিবির প্রথম ম্যাচ হেরে বেশ অস্বস্তিতে। শুরুতেই বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় মগ্ন দুই ওপেনার। যেমনটা দেখা গিয়েছিল মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে।
ইডেনের পিচে আগের চেয়ে বাউন্স বেড়েছে। তাই বিরাটকে এ দিন আড়াআড়ি শট খেলার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেল। রিস টপলির পরিবর্তন বাঁহাতি পেসার ডেভিড উইলি একের পর এক খাটো লেংথের বল করছিলেন বিরাটকে। যা কখনও পয়েন্ট অঞ্চল, কথনও মিড উইকেট অঞ্চলে মারতে দেখা গেল প্রাক্তন আরসিবির অধিনায়ককে। তাঁর ঝুলিতে যে সব শট আছে, তাতে স্কুপ ও আপার কাট মারার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ইডেনের দর্শকদের আনন্দ দিতে সে সব শটও মারতে ভোলেননি।
ইডেনে বরাবরই সফল বিরাট। কেকেআরের বিরুদ্ধে ইডেনে শেষ সাক্ষাতে শতরান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে যান তিনি। ক্রিকেটের মক্কায় শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও অর্ধশতরান করেছিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে কিংবদন্তিকে তাঁর পুরনো মেজাজে দেখার আশায় মাঠ ভরলে অবাক হওয়ার থাকবে না। যতই কেকেআর চার বছর পরে ফিরুক ইডেনে, মাঠ কিন্তু ভরবে বিধ্বংসী বিরাটকে দেখতেই।
ম্যাচের মধ্যের বিরাটের সঙ্গে ম্যাচের বাইরের বিরাটের অনেক তফাত। ম্যাচের আগের দিন বিপক্ষ ওপেনার, আফগানিস্তানের রহমনুল্লা গুরবাজ়কে পরামর্শ দিতেও দেখা গেল তাঁকে। শার্দূল ঠাকুর, উমেশ যাদবদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলছিলেন বিরাট। তাঁদেরই মধ্যে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন গুরবাজ়। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কথা বলতে বেশ ইতস্তত বোধ করছিলেন আফগান ওপেনার। কিছুক্ষণ পরে শার্দূল তাঁকে আলাপ করিয়ে দেন বিরাটের সঙ্গে। সেখানেই শুরু হয় ক্লাস। শেষ ম্যাচে নাইট ওপেনারও অর্ধশতরান করেছিলেন। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি। আরসিবি ম্যাচের আগে তাই আধ ঘণ্টা বিরাটের সঙ্গে ক্লাস করতে দেখা যায় তাঁকে। দূর থেকে বোঝা যাচ্ছিল, গুরবাজ় বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করছিলেন বিরাটকে। তার প্রত্যেকটি উত্তরই অধ্যাপকের মতো শান্ত মেজাজে দিচ্ছিলেন বিরাট। মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নেট বোলারদের ভিড়ে আটকে যান তিনি। তাঁদের আবদার, স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে একটি নিজস্বী। সেই আবদার মিটিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরে যান কিংবদন্তি।
সাংবাদিক বৈঠকে আকাশ দীপ এসে জানিয়ে দেন, তাঁদের শিবির পুরোপুরি তৈরি। কেকেআরের ঘরের মাঠে খেলতে এলেও তাঁদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আকাশ বলছিলেন, ‘‘ইডেন আমারও ঘরের মাঠ। এখানে আইপিএলের কোনও ম্যাচ না খেললেও রাজ্যের হয়ে একাধিক ম্যাচ খেলেছি। উইকেট কী রকম আচরণ করতে পারে, জানি। পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ঘাস নেই। প্রচুর রান হবে। কিন্তু এই মাঠে এত দিন খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পেসাররা শুরুতে সাহায্য পাবেই। দলের সকলকে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’’
বিরাট ছাড়াও আরসিবি শিবিরে রয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ফ্যাফ ডুপ্লেসিদের মতো তারকা। তাঁদের মধ্যে যে কোনও একজন ক্রিজ়ে দাঁড়িয়ে গেলে ম্যাচ হাতছাড়া হতে পারে নাইটদের। ফ্যাফ যদিও মারমুখী মেজাজে ছিলেন না। ব্যাটের মাঝখানে বল লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। ম্যাক্সওয়েল কোনও শটই বাকি রাখেননি। রিভার্স স্কুপ থেকে সাধারণ স্কুপ, সুইচ হিট থেকে রিভার্স সুইপ, সব কিছুই তুলে ধরেন নেটে। আকাশ বলছিলেন, ‘‘আমাদের দল কখনও একজনের উপরে নির্ভর করে না। প্রত্যেকের দায়িত্ব ভাগ করা আছে। আমারও আছে।’’
আরসিবি শিবির তৈরিই হয়ে এসেছে। কিন্তু আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন নির্ভর দলের সামনে বিরাট-ভক্তদের ভুল প্রমাণিত করার পরীক্ষা আজ। অধিনায়ক নীতীশ রানার কাছেও নেতা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার মঞ্চ। মরসুমের প্রথম জয়ের খোঁজে ইডেনে চার বছর পরে নামছে কেকেআর। উপস্থিত ডিজে নিশ্চয়ই ‘‘কেকেআর... কেকেআর...’’ ধ্বনি তুলবেন। উপস্থিত দর্শকরা সেই ধ্বনিতে গলা মেলাবেন তো? না কি ‘‘আরসিবি.. আরসিবি’’ ধ্বনিতে গমগম করবে ক্রিকেটের নন্দনকানন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy