উইকেট নিয়ে কেকেআর ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
আইপিএলে জয়ের হ্যাটট্রিক কলকাতার। দিল্লি, মুম্বইয়ের পর লখনউকেও হারিয়ে দিল শ্রেয়স আয়ারের দল। পর পর দু’টি অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতে অনেক খোলা মনে কলকাতায় শেষ হোম ম্যাচে খেলতে আসতে পারবে কেকেআর। আগে ব্যাট করে ২৩৫/৬ তুলেছিল কলকাতা। জবাবে আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইনের বোলিংয়ে লখনউ থেমে যায় ১৩৭ রানে। অর্থাৎ ৯৮ রানে জিতল কেকেআর। আইপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল কেকেআর। ১১ ম্যাচে এখন তাদের ১৬ পয়েন্ট। ১০ ম্যাচে রাজস্থানের পয়েন্ট সমান থাকলেও রান রেটে শীর্ষে চলে গেল কেকেআর।
ম্যাচের আগে পিচ রিপোর্ট দিতে এসে অ্যারন ফিঞ্চ এবং রবি শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই পিচে ১৯০-২০০ রান লড়াকু স্কোর। কারণ তখনও লখনউয়ের মাঠে ২০০ ওঠার ইতিহাস তৈরি হয়নি। সেটাও তৈরি হয়ে গেল কেকেআরের হাত ধরে। শুধু তা-ই নয়, পঞ্জাব-কলকাতার সেই নজিরের ম্যাচের পর আর ২০০ রান উঠছিলই না আইপিএলে। সেই ধারাও ভাঙল কেকেআরের হাত ধরেই। চলতি মরসুমে ৬ বার ২০০ বা তার বেশি রান করল কেকেআর। বাকি দলগুলির থেকে বেশি।
এ দিন টসে আবার হারতে হয় শ্রেয়স আয়ারকে। এই নিয়ে টানা ছ’টি ম্যাচে টসে হারলেন তিনি। বলেই দিলেন, কোনও ভাবেই এই ভাগ্য বদলাতে পারছেন না তিনি। শ্রেয়সের প্রতিযোগিতা হতে পারে চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের সঙ্গে, যিনি ১১টি ম্যাচের ১০টিতেই টসে হেরেছেন। তবে দলের পারফরম্যান্সে দিনের শেষে তিনি বলতেই পারেন, ‘ইট ওয়াজ় আ গুড টস টু লুজ়’।
এ বার বেশির ভাগ ম্যাচেই কেকেআরের শুরুটা ভাল হচ্ছে তাদের ওপেনিং জুটির সৌজন্যে। লখনউ ম্যাচও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রথম বলেই মার্কাস স্টোয়নিসকে চার মারেন ফিল সল্ট। সেই ওভার থেকে এল দশ। পাওয়ার প্লে যত এগোল, তত কেকেআরের ওপেনারদের হাত খুলতে লাগল। যথারীতি বেশি আগ্রাসী ছিলেন সল্টই।
তবে নারাইনও কম যাননি। তৃতীয় ওভারে নবীন উল হককে নারাইন এবং সল্ট দু’জনেই দুটি করে চার মারলেন। চতুর্থ ওভারে মহসিন খানকে চারের হ্যাটট্রিকের পর একটি ছয় মারলেন নারাইন। এই ওভারেই কেকেআরের ওপেনিং জুটি ৫০ পেরিয়ে যায়। চলতি মরসুমে ষষ্ঠ বার তা দেখা গেল। তবে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফেরেন সল্ট। নবীনের ধীর গতির বল বুঝতে পারেননি।
তিন নম্বরে অঙ্গকৃশ রঘুবংশী নামলেও তিনি খুব একটা চালিয়ে খেলতে অভ্যস্ত নন। সেই দায়িত্ব নিলেন নারাইনই। মাঝে কয়েকটা ওভারে খুব একটা চালিয়ে খেলতে পারেনি কেকেআর। খেলা ঘুরল নবম ওভার থেকে। ওভারপ্রতি উঠতে থাকল দশ রানের বেশি। অর্ধশতরান করে ফেলেন নারাইন।
তার পরে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটার। ১১তম ওভারে স্টোয়নিসকে তিনটি ছয় মারেন তিনি। তবে আরও একটি শতরানের ইচ্ছা পূরণ হয়নি। রবি বিষ্ণোইকে তুলে খেলতে গিয়ে লং অফে পাড়িক্কলের হাতে ক্যাচ দেন। বল মারার পর নারাইনের মুখের ভঙ্গিই বলে দেয় যে খারাপ শট খেলেছেন। তার আগে ৩৯ বলে ৮১ রান হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
রানের গতির মুখে কেকেআর বুদ্ধি করে নামিয়ে দেয় আন্দ্রে রাসেলকে। তবে রাসেল খুব একটা কাজের কাজ করতে পারেননি। যা খেলছিলেন অঙ্গকৃশই। কেকেআরের রানের গতি আবার কমে যায়। চালাতে গিয়ে আউট হন রাসেল। তবে সেই আউটের নেপথ্যে পরিবর্ত ফিল্ডার কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের ক্যাচটিও ভোলার মতো নয়। অনেকটা পিছনে ছুটে ক্যাচ নেন তিনি। তখন কে জানত, কেকেআরের ফিল্ডিংয়ের সময় সব ছাপিয়ে যাবেন রমনদীপ সিংহ!
১৬ ওভারের পর থেকে আবার বাড়ে কেকেআরের রানের গতি। রান রেটের কারণে নিজেকে অনেকটা পিছনে নামিয়েছিলেন শ্রেয়স। রাসেলের পর রিঙ্কু সিংহকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর থেকে রিঙ্কুর ব্যাটে রান নেই। এ দিনও তাঁর সামনে বড় রান করার সুযোগ ছিল। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তুলনায় নজর কাড়লেন রমনদীপ। সাধারণত শেষের দিকে তাঁকে নামানোই হয় চালিয়ে খেলার জন্য। এই নিয়ে দু’-তিনটি ম্যাচে সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজ করলেন রমনদীপ। ১৯তম ওভারে যুদ্ধবীর সিংহকে দু’টি ছয় মারলেন। শেষ ওভারে যশ ঠাকুরকেও একটি চার এবং ছয় মারলেন। ৬ বলে ২৫ রান কেকেআরকে দুশো পার করিয়ে দিল। লখনউয়ের মাঠে যা এত দিন বিশ্বাসই করা যেত না।
লখনউও শুরুটা খারাপ করেনি। প্রথম বলেই বৈভব অরোরাকে চার মারেন রাহুল। দ্বিতীয় ওভারে মিচেল স্টার্ক-কে জোড়া চারে স্বাগত জানান আর্শিন কুলকার্নি। এর পরেই অপেক্ষা করছিল চমক। স্টার্কের একটি বল ব্যাটের কানায় লেগে একস্ট্রা কভারের দিকে উঠে যায়। কভারে ফিল্ডিং করছিলেন রমনদীপ। ২১ মিটার দৌড়ে একস্ট্রা কভারে গিয়ে ক্যাচ ধরেন। ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীও উল্লসিত হয়ে বলে ওঠেন, “এটাই কি আইপিএলের সেরা ক্যাচ?” সহমত হন সহ-ধারাভাষ্যকারও।
তবে লখনউয়ের তখনও ঘাবড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রাহুল তো ছিলেনই। যোগ দেন স্টোয়নিস। চতুর্থ ওভারে স্টার্ককে তিনটি চার মেরে রানের গতি বাড়াতে থাকেন অসি ব্যাটার। পাওয়ার প্লে-তে এ বারের আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তোলে লখনউ। এত বড় রান তাড়া করতে দরকার ছিল একটা জুটির। সেটাই তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন রাহুল-স্টোয়নিস।
কেকেআরের সমর্থকদের মনে আবার জাঁকিয়ে বসতে শুরু করে ভয়। এ বারও বড় রান তুলে হারতে হবে না তো? সেই পরিস্থিতি আসেনি। অষ্টম ওভারে হর্ষিতকে তুলে মারতে গিয়ে সেই রমনদীপের হাতেই ক্যাচ দেন রাহুল (২৫)। পরের ওভারে বরুণ ফিরিয়ে দেন দীপক হুডাকেও (৫)।
যেটুকু চিন্তা বেঁচেছিল, তা দূর করে দেন রাসেল। প্রথম ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই স্টোয়নিসকে (৩৬) তুলে নেন রাসেল। তার পর থেকে লখনউ ব্যাটারদের মধ্যে আসা-যাওয়া চলতেই থাকে। আর এক বিপজ্জনক ব্যাটার নিকোলাস পুরানও ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। আয়ুষ বাদোনি (১০) বা অ্যাশটন টার্নারেরাও (১৬) উইকেটে বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। লখনউয়ের বাকি ব্যাটারেরাও কেউ কেকেআরের চিন্তা বাড়াননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy