সঞ্জীব গোয়েন্কা এবং লোকেশ রাহুল। —ফাইল চিত্র।
আইপিএল মানেই টাকার পাহাড়। সেখানে মিচেল স্টার্কের মতো কোনও ক্রিকেটার ২৫ কোটি টাকা পেয়ে যান, আবার অনামী ক্রিকেটারও কোটিপতি হয়ে যান। এই টাকা দেন বিভিন্ন মালিকেরা। আর তাঁরাই যে শেষ কথা, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন সঞ্জীব গোয়েন্কা। মাঠের মধ্যে লোকেশ রাহুলকে যে ভাবে তিরস্কার করছিলেন, তাতে আগামী দিনে আইপিএলে কোনও দলের অধিনায়ক হওয়ার আগে ক্রিকেটারেরা দু’বার ভাববেন। বিশেষ করে রাহুলের মতো ক্রিকেটারকে যদি এমন ভাবে কথা শুনতে হয়, তাহলে তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কী হতে পারে!
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে বুধবার ম্যাচ ছিল লখনউ সুপার জায়ান্টসের। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ১৬৫ রান করেন লোকেশ রাহুলেরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৯.৪ ওভারে জয়ের রান তুলে নেয় হায়দরাবাদ। ৬২ বল বাকি থাকতে ১০ উইকেট ম্যাচ জিতে নেন ট্রেভিস হেড এবং অভিষেক শর্মা। তাঁদের সেই ব্যাটিং দেখে অবাক ক্রিকেটমহল। কিন্তু গোয়েন্কা খুব সহজ ভাবে এই হার হজম করতে পারেননি। তিনি দলের অধিনায়কের সঙ্গে মাঠের মধ্যেই বেশ যুদ্ধং দেহি মেজাজে কথা বলেন। রাহুল তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেও পারেননি। বৃহস্পতিবারও তার রেশ রয়ে গেল। সন্ধের দিকে রাহুলের আগামী ম্যাচে অধিনায়ক থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। পরের আইপিএলে হয়তো বদলে যাবে দলও।
কী ঘটেছিল বুধবার?
বুধবার ম্যাচের পরেই গোয়েন্কা নেমে আসেন মাঠে। বাউন্ডারির ধারে দাঁড়িয়ে রাহুলকে হাত নেড়ে নেড়ে অনেক কিছু বোঝাতে থাকেন। তাঁর আচরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, দলের এই হারে তিনি খুশি নন। কিছু কিছু ক্রিকেটারের দিকে হাত দেখিয়ে ইঙ্গিত করতে থাকেন গোয়েন্কা। তাঁর গলার স্বরও যে বেশ উঁচু ছিল, সেটাও বোঝা গিয়েছে ভিডিয়ো দেখে। গোয়েন্কার দাপটের সামনে রাহুল কিছু বলতেই পারেননি। তিনি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। গোয়েন্কার কথা শুনছিলেন। পরে কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারকেও বেশ কিছু কথা বলেন গোয়েন্কা। সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মাত্রই সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। ভারতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের প্রতি দলমালিকের এমন আচরণে খুশি হতে পারেননি সমর্থকেরা। তাঁদের দাবি, দলের হারে মালিকের রাগ হতেই পারে। সেটা তো সাজঘরে ফিরেও বোঝানো যেত। মাঠের মধ্যে সবার সামনে এ ভাবে রাহুলকে ‘অপমান’ করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ভাষা হারিয়েছিলেন রাহুল
গোয়েন্কার কথা শোনার আগেই যদিও ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন রাহুল। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে রাহুল বলেন, “কোনও ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। এ রকম ব্যাটিং আগে টিভিতে দেখেছি। কিন্তু আজ অবিশ্বাস্য ব্যাটিং দেখলাম। প্রতিটা বলই ব্যাটের মাঝখানে লাগছে মনে হচ্ছিল। ওদের দক্ষতাকে কুর্নিশ। ছয় মারার দক্ষতায় প্রচুর শান দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। দ্বিতীয় ইনিংসে পিচ কেমন আচরণ করেছে সেটা বোঝার সুযোগই পেলাম না। প্রথম বল থেকে ওরা যে ভাবে মারতে শুরু করল, তাতে ওদের থামানো কঠিন ছিল।”
ম্যাচ হেরে বার্তা
ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর আলাদা করে দলের পক্ষ থেকে কোনও বার্তা সাধারণত দেখা যায় না। কিন্তু বুধবারের হারের পর তেমনটাও দেখা গেল। অনেকে মনে করছেন গোয়েন্কা এবং রাহুলের বাক্যালাপের কারণেই এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে গোয়েন্কা-রাহুল বাদানুবাদের কোনও কথা লেখা নেই সেই বার্তায়। হারের পর সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া হয়েছে সেই বার্তা। লেখা হয়েছে, “এই ম্যাচের পর আমরা সবাই ব্যথিত। কিন্তু উপ্পলে (হায়দরাবাদের ঘরের মাঠ) যাঁরা নীল পতাকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এই হারের পরেও সমাজমাধ্যমে প্রত্যেকের পোস্ট মন ছুঁয়ে গিয়েছে। গত দু’বছর ধরে অনেক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে এই দল। আগামী দিনেও দেবে। এলএসজি ব্রিগেড, আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।”
সমালোচিত মালিক গোয়েন্কা
রাহুলের প্রতি গোয়েন্কার ব্যবহার ভাল ভাবে নেননি প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। জিয়ো সিনেমার স্টুডিয়োয় হাজির ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ। তিনি প্রকাশ্যে গোয়েন্কার রাগ দেখে অবাক। বলেছেন, “মানছি যে উনি দলের মালিক। দলের প্রতি আবেগপ্রবণ হওয়ারই কথা। এই মুহূর্তে একটা ম্যাচ খেলে ওরা বিধ্বস্ত। ক্রিকেটারেরাও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এমন অবস্থায়, এ ধরনের কথাবার্তা রুদ্ধ দ্বারে হওয়া উচিত ছিল।” তিনি আরও বলেছেন, “এখন চারদিকে এত ক্যামেরা রয়েছে। কোনও কিছুই দেখাতে ছাড়ছে না। কেএল রাহুল এ বার সাংবাদিক বৈঠকে যাবে। আরও অনেক কাজ রয়েছে ওর। এখন তো কোনও আলোচনার দরকারই নেই।” গোয়েন্কার আচরণে খুশি হতে পারেননি বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন কোচ মাইক হেসনও। তিনি বলেছেন, “ওঁর (গোয়েন্কার) কি মাথা ঠিক করে কাজ করছে না! নিজের চিন্তাভাবনার কথা বলছেন, সেটা তো বুঝলাম। উল্টো দিকে কেএলও তো বলছে, ‘আপনি অপেক্ষা করুন। আমাদের কী করতে বলছেন, সেটা মাথায় ঢুকছে না’।”
ধোনির নেতৃত্বে কোপ
২০১৭ সালে রাইজ়িং পুণে সুপারজায়ান্টসের অধিনায়ক ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সে বার খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে ধোনির থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়েছিলেন গোয়েন্কা। স্টিভ স্মিথকে দিয়েছিলেন নেতৃত্বের ভার। অনেকেই সেই ঘটনা ভাল ভাবে নেননি। আলোচনা এবং সমালোচনা হয় বিস্তর। তবু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন গোয়েন্কা। পরে বলেছিলেন, “সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে যে কেউ যা খুশি বলতে পারে। আমি সবার মতামতকে সমীহ করি। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা করার দরকার আছে বলে মনে করি না। সব সময় সব সিদ্ধান্ত জনপ্রিয় না-ও হতে পারে।”
নেতৃত্ব হারাতে পারেন রাহুল
প্রকাশ্যে অপমানিত হয়ে রাহুল নেতৃত্বে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। রাহুল নিজে সম্ভবত গোয়েন্কার দলের হয়ে আর খেলতে আগ্রহী নন। অন্য দিকে, আগামী বছর আইপিএলের নিলামের আগে রাহুলকে ছেড়ে দিতে পারে লখনউ ফ্র্যাঞ্চাইজ়িও। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের নেতৃত্বে ইস্তফা দেওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। আইপিএলের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘দিল্লির বিরুদ্ধে পরের ম্যাচের আগে পাঁচ দিন সময় রয়েছে। কোনও পক্ষই এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। মনে হচ্ছে, রাহুল নেতৃত্বে ইস্তফা দিয়ে দেবে। শেষ দু’টি ম্যাচে আর টস করতে যাবে না। ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি কর্তৃপক্ষও ওর ইস্তফা গ্রহণ করে নেবেন বলেই মনে হচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নিলামের আগে রাহুলের সঙ্গে রেকর্ড ১৭ কোটি টাকায় চুক্তি করেছিল লখনউ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি। বুধবারের ম্যাচের পর রাহুলের সঙ্গে গোয়েন্কার সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy