সেরা: আইপিএল ট্রফিতে চুম্বন বৈভবের। রবিবার চেন্নাইয়ে। ছবি: এক্স।
মিচেল স্টার্ক যদি আইপিএলের সেরা ডেলিভারিতে ফিরিয়ে থাকেন অভিষেক শর্মাকে, বৈভব অরোরা ততটাই চমক দিয়েছেন ফাইনালে ট্র্যাভিস হেডকে আউট করে। লেগস্টাম্প থেকে তাঁর বল সুইং করে অফস্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল রহমনুল্লা গুরবাজ়ের হাতে। শেষ মুহূর্তে লোভ সামলাতে না পেরে ব্যাট বাড়িয়ে দেন হেড।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের নতুন তারা এখনও সেই মুহূর্ত ভুলতে পারেননি। সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত সতীর্থদের সঙ্গে উৎসব করার পরে দুপুরে ঘুম থেকে উঠেছেন। লাঞ্চ করার পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন মেরিনা বিচ-এ। হোটেলে ফেরার পরে লবিতে আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়ে যান তিনি। হেডের উইকেট নেওয়ার ঘোর এখনও কাটেনি তাঁর। এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে যে এতটা সুইং পাবেন, আশাও করেননি। বৈভব বলছিলেন, ‘‘স্বপ্নের ডেলিভারিতে আউট করেছি হেড-কে। আইপিএলের প্রথম দিন থেকে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে এই বলটা করতে চেয়েছি। নিখুঁত হচ্ছিল না সেটা। আসল দিনেই সেই ডেলিভারিটা হাত থেকে বেরোল।’’ যোগ করেন, ‘‘হেড ওই বলটায় ব্যাট বাড়াতে চায়নি। কিন্তু ওর গায়ের এত কাছ দিয়ে বলটি যায় যে, ও বাধ্য হয় খেলতে। এটাই চেয়েছিলাম।’’
এ বারের আইপিএলে সব চেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের নাম হেড। তাঁকে ফেরানোর পরেই কি মনে হয়েছিল এই কাপ কেকেআরের? বৈভবের উত্তর, ‘‘ক্লাসেন আউট হওয়ার পরে মনে হয়েছিল এখান থেকে আমরা আর হারছি না। তার আগে এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়িনি। এ রকম একপেশে ফাইনাল অনেকেই আশা করেননি।’’
মিচেল স্টার্কের মতো অভিজ্ঞ জোরে বোলার ছিলেন দলে। একেবারে নিজের ভাইয়ের মতো সাহায্য করে গিয়েছেন বৈভবদের। স্টার্কের বিস্ময় ডেলিভারিই যে বিপক্ষের মনোবল ভাঙতে সাহায্য করেছে, তা মানছেন বৈভব। তাঁর কথায়, ‘‘অসাধারণ বল ছিল। আমি তো শর্ট থার্ডম্যান অঞ্চলে ফিল্ডিং করছিলাম। পরিষ্কার দেখেছি বল কত দেরিতে সুইং করেছে। অভিষেকের কিছু করার ছিল না। ও রকম একটি বলের পরে যে কোনও দলের মনোবল বেড়ে যেতে বাধ্য।’’
বৈভব অরোরার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার লড়াইটা অনেকেরই অজানা। পঞ্জাবের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল হিমাচল প্রদেশে। কারণ, যুবরাজ সিংহের রাজ্য তাঁকে সুযোগ দেয়নি। ট্রায়াল থেকেই বাদ দেওয়া হয়েছিল। কী করতেন তার পরে? ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন তাঁকে রীতিমতো তাড়া করত। কিন্তু বাবার সামর্থ ছিল না। বাড়ি বাড়ি দুধ বেচতেন। ভোর চারটের সময় উঠে পড়তে হত তাঁর বাবাকে। এক বার ভেবেছিলেন ক্রিকেটই ছেড়ে দেবেন। বলছিলেন, ‘‘কী করব, বুঝতে পারতাম না। বাড়িতে খুব অভাব ছিল। সকলেই বলছিল, এই সব করে কী হবে? তাই ধীরে ধীরে বাবাকে সাহায্য করতে শুরু করি। দুধ বিক্রি করতে শুরু করি। কিন্তু আমার কোচ রবি কুমার বর্মা হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তার পর থেকে কিছুটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করি।’’
আরশদীপ সিংহ, রামনদীপ সিংহদের সঙ্গে ক্রিকেটজীবন শুরু করেছিলেন বৈভব। কিন্তু একটি বাইক দুর্ঘটনা পিছিয়ে দেয় তাঁকে। আরশদীপের সঙ্গেই বাইকে করে অনুশীলনে আসতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। ভোর পাঁচটায় উঠে অনুশীলনে আসতে হচ্ছিল। তখনও ভাল করে আলো ফোটেনি। কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না বৈভবরা। বাইক থেকে পড়ে গিয়ে কাঁধে চোট পান বৈভব। সেরে উঠতে সময় লাগে কয়েক মাস। তাঁর কথায়, ‘‘এই দুর্ঘটনা আমাকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছিল। সেরে ওঠার পরে অনূর্ধ্ব-১৯ পঞ্জাব দলে ট্রায়াল ছিল। আরশদীপ সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু আমাকে পঞ্জাব ছাড়তে হয়। সেই দিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ক্রিকেটার হতেই হবে।’’
লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। কিন্তু পরের বার যে বড় নিলাম। কেকেআরে যদি না ফিরতে পারেন? বৈভব বলেন, ‘‘না পারলে তো কিছু করার নেই। কিন্তু নাইট জার্সিতে ট্রফি জয়ের মুহূর্ত সারা জীবন মনে গেঁথে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy