সৌজন্য: বাটলারের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন শাহরুখ। ছবি: রাজস্থান রয়্যালস।
জোড়া শতরানের ইডেন। উৎসব ও হতাশার ইডেন। অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার ইডেন। মঙ্গলবার যাঁরা টিকিট কেটে মাঠে এসেছিলেন, তাঁরা হয়তো এ বারের আইপিএলের অন্যতম সেরা ম্যাচটি দেখে গেলেন। শাহরুখ খানের সামনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ডেরায় একা কুম্ভ হয়ে শতরানে রাজস্থান রয়্যালসকে লিগ তালিকার শীর্ষেই রাখলেন জস বাটলার। অপরাজিত থাকলেন ১০৭ রানে। সুনীল নারাইনের ১০৯ রানের ইনিংসও যার সামনে হার মানল। ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক জানিয়ে গেলেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও বিরাট কোহলিই তাঁর অনুপ্রেরণা।
সাংবাদিক বৈঠকে এ দিন আসার ক্ষমতা ছিল না বাটলারের। প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কলকাতার তীব্র আর্দ্রতা তাঁকে কাহিল করে দিয়েছে। অথচ তাঁরই বিধ্বংসী শতরানে বিধ্বস্ত কেকেআর সমর্থকেরা। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে বাটলার বলেন, ‘‘বিশ্বাস হারাইনি। ব্যাটে বল ঠিক মতো লাগছিল না। কিন্তু নিজের উপরে বিশ্বাস ছিল, আমি থাকলে ম্যাচ ঘুরে যেতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘ধোনি, কোহলি যেমন শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জেতায়, আমিও সেই চেষ্টাই করেছি। দেখলাম, সাফল্য এ ভাবেই আসে।’’
পুরস্কার নিতে যাওয়ার মতোও শক্তি ছিল না বাটলারের গায়ে। মঞ্চের কাছে গিয়ে তিনি বসে পড়েন। তাঁর দিকে এগিয়ে যান শাহরুখ খান। কষ্ট হলেও উঠে দাঁড়িয়ে কিং খানের অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন তিনি। অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে বাটলার তাঁর দলকে হারিয়ে দিলেও মুখের হাসি কেড়ে নিতে পারেনি শাহরুখের। বুকে টেনে নেন বাটলারকে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান নাইট সমর্থকেরাও। এই মুহূর্ত দেখার জন্যই তো ম্যাচের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। বাড়ি ফেরার চিন্তা মাথায় নিয়েও বসে থাকা সেরা ছবির জন্য। এটাই ইডেন। এখানে নায়ক বিপক্ষ দলের হলেও তাঁকে কুর্নিশ জানাতে ভোলে না।
সাংবাদিক বৈঠকে এসে রভম্যান পাওয়েলও প্রশংসা করে গেলেন দর্শকদের। জানিয়ে গেলেন, ১৭তম ওভারে নারাইনকে আক্রমণ করে বাটলারের সাহস ফিরিয়ে দেন তিনি। পাওয়েল বলছিলেন, ‘‘বাটলার বলছিল ওর ব্যাটে ঠিক মতো লাগছে না। ওকে বলি, তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। নারাইনের ওভারে আমি রান বার করে দিচ্ছি। ঝুঁকি আমি নিচ্ছি। তুমি শেষ পর্যন্ত থাকো।’’ যোগ করেন, ‘‘নারাইনের ওভারে ১৬টি রান বেরিয়ে যাওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় বাটলার। তার পরে আর কোনও দিকে তাকাতে হয়নি।’’
নাইট তারকা রিঙ্কু সিংহ মনে করেন, এই হারে তাঁদের কোনও ভুল নেই। পুরো কৃতিত্বই বাটলারের। বলছিলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য ম্যাচ। আমিও যে দিন পাঁচ ছক্কা মেরেছিলাম, বিপক্ষের কিছু করার ছিল না। একই সুতোয় বাঁধা যায় বাটলারের এই ইনিংস।’’ চলতি আইপিএলে দ্বিতীয় শতরান এল বাটলারের ব্যাটে। দু’টি ক্ষেত্রেই জয়ী রাজস্থান। কিন্তু তাই বলে নারাইনের ইনিংসকে কি উপেক্ষা করা যায়? আইপিএলের ইতিহাসে বেগুনি টুপি থেকে কমলা টুপির দিকে পৌঁছনোর কীর্তি কারও নেই। সুনীল নারাইন সেই পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন। এক সময় তাঁর ঘূর্ণির জন্য বন্দিত ছিলেন। কিন্তু গৌতম গম্ভীরের ভরসায় ভিন্ন দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে অন্য ঘরানার ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর প্রথম শতরান এল ইডেনেই। স্বয়ং শাহরুখ খানের সামনে। স্বামীর শতরান দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না নারাইনের স্ত্রী।
বিরাট কোহলিকে আউট করার পরেও নির্বিকার থাকতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু শতরানের পরে উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারলেন না। শিশুর মতো লাফিয়ে উঠলেন। স্ত্রীর দিকে ব্যাট তুলে বুঝিয়ে দিলেন, ফুরিয়ে যাননি।
ক্যারিবিয়ান তারকার ইনিংসে মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কও। ধারাভাষ্য দিতে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অকল্পনীয় ইনিংস খেলেছে। পাওয়ারহিটিংয়ের আদর্শ উদাহরণ দিয়ে গেল নারাইন। এই ইনিংস সত্যি অপূর্ব।’’
আইপিএল শুরু হওয়ার আগে নারাইনকে যদি কেউ বলতেন, এ বারের আইপিএলে কমলা টুপির জন্য তিনি লড়াই করবেন, হয়তো বিশ্বাসও করতেন না। কিন্তু মঙ্গলবারের ইডেন তাঁর মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করেছে, অসম্ভব বলে কিছুই হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy