এ বারের আইপিএলে নজর কেড়েছেন মহসিন ছবি: আইপিএল
ছোট বেলায় চেয়েছিলেন ব্যাটার হতে। কিন্তু দৈহিক উচ্চতা দেখে কোচ জোরে বোলার হওয়ার পরামর্শ দেন। টেনিস বলের ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল অন্য দিকে। কিন্তু লকডাউনে ভারতীয় পেসার মহম্মদ শামির সঙ্গে অনুশীলন বদলে দিল মহসিন খানকে। এ বারের আইপিএলের অন্যতম সেরা প্রতিভা বলা হচ্ছে তাঁকে। উমরান মালিক, কুলদীপ সেনদের সঙ্গে একই সারিতে উচ্চারণ করা হচ্ছে তাঁর নাম। কারণ তাঁর গতি। বাঁহাতি এই পেসারের একটাই লক্ষ্য। দ্রুত গতিতে বল করে ব্যাটারের স্টাম্প উড়িয়ে দেওয়া। তাঁর বিষাক্ত গতি থেকে রেহাই পাননি ডেভিড ওয়ার্নার, ঋষভ পন্থের মতো মারকুটে ব্যাটাররাও।
উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের বাসিন্দা মহসিনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর। বড় ছেলে ক্রিকেট খেলতেন। ছোট ছেলে মহসিন তখনও খেলা শুরু করেননি। দাদা এক দিন তাঁকে নিয়ে যান কোচ বদরুদ্দিনের কাছে। এই বদরুদ্দিনের হাত থেকেই বেরিয়েছে মহম্মদ শামির মতো ক্রিকেটার। পোড়খাওয়া কোচ বুঝেছিলেন এই ছেলে ভাল বোলার হতে পারবে। তিনি মহসিনকে বোলিংয়ের দিকে নজর দিতে বলেন। পাশাপাশি ব্যাটিং অনুশীলনও চলতে থাকে। উত্তরপ্রদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে মাত্র তিন ম্যাচে ১৭ উইকেট নেন মহসিন। কিন্তু তত দিনে তাঁর অন্য খেলার দিকে আগ্রহ জন্মেছে।
বদরুদ্দিন জানতে পারেন টেনিস বলের ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন মহসিন। সেখানে নাকি ব্যাটারদের সঙ্গে বাজি ধরে বল করেন তিনি। কোচ বুঝতে পারেন এই নেশা লাগলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মন দিতে পারবেন না মহসিন। তাঁর পরামর্শে ফের খেলায় মন দেন মহসিন। তত দিনে উত্তরপ্রদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে মহসিনের নাম ছড়িয়েছে। ২০১৮ সালে আইপিএলের নিলামে তাঁকে কেনে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সে বছরই উত্তরপ্রদেশের হয়ে লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। ২০১৯ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সুযোগ পান এই বাঁ হাতি পেসার।
আইপিএলে মুম্বই কিনলেও প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি মহসিন। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বাধ্য হয়ে ফোন করে বসেন কোচকে। সব কথা শুনে বদরুদ্দিন তাঁকে পরামর্শ দেন জাহির খান ও লাসিথ মালিঙ্গার সঙ্গে কথা বলতে। তাঁদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব শিখতে। ঠিক যে ভাবে শিখেছিলেন তাঁর আর এক ছাত্র। কলকাতা নাইট রাইডার্স কিনলেও প্রথম দু’বছর আইপিএলে খেলার সুযোগ পাননি শামি। কিন্তু ওয়াসিম আক্রমের কাছে শিখেছিলেন খুঁটিনাটি। সেই শিক্ষা তাঁকে ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা পেসার তৈরি করেছে।
কোভিডের কারণে লকডাউন হওয়ায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই লকডাউন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় মহসিনের কাছে। আমরোহাতে নিজের বাড়ির কাছে পিচ বানিয়ে অনুশীলন করছিলেন শামি। সেখানে তিনি মহসিনকে ডেকে নেন। দু’জনে মিলে বেশ কয়েক মাস অনুশীলন করেন। বদরুদ্দিন তখন মহসিনকে বলেছিলেন, শামির কাছ থেকে যতটা সম্ভব শিখে নিতে। সেটাই করেছেন মহসিন। তরুণ পেসারের প্রতিভায় মুগ্ধ শামিও জানিয়েছেন, মহসিন এক দিন তাঁর থেকেও ভাল বোলার হবেন।
এ বারের আইপিএলে মহসিনকে কেনে লখনউ সুপার জায়ান্টস। প্রথম একাদশে সুযোগও পান। সাত ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৬.০৮। দিল্লির বিরুদ্ধে মাত্র ১৬ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। তাঁর বাবা-মার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে আইপিএলে খেলতে দেখবেন। সেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে। আর থামতে চান না তিনি। এগতে চান সামনের দিকে। তাঁর লক্ষ্য জোরে বল করে যাওয়া। এত দিন ধরে যা শিখেছেন মাঠে নেমে তার প্রতিফলন ঘটানোই এখন লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই প্রতি দিন মাঠে নামেন মোরাদাবাদের মহসিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy