শুধু ‘করব, লড়ব’-তে আটকে থাকলে চলবে না, ‘জিতব রে’-র উৎসবও যোগ করতে হবে। না হলে এ বারও কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের জন্য কেকেআর নয়, অপেক্ষা করে থাকবে বেদনার সেই ‘কেকেহার’!
ফাইল চিত্র।
সময় ফুরিয়ে আসছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের। দ্রুতই তাদের জয়ের রাস্তায় ফিরতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার ঋষভ পন্থদের দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ম্যাচ। টানা চারটি ম্যাচ হারার পরে শাহরুখ খানের দলকে যদি প্লে-অফের দৌড়ে ফিরে আসতে হয়, দিল্লি দূর অস্ত থাকলে চলবে না।
শুধু তাই নয়, শ্রেয়স আয়ারদের জন্য এখন কার্যত সব ম্যাচই নক-আউট দ্বৈরথ। তাঁরা আটটির মধ্যে জিতেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচ। ঝুলিতে ৬ পয়েন্ট, সোমবার রাতের ম্যাচে পঞ্জাব কিংস বনাম চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচের পরে তাঁরা নেমে গিয়েছেন টেবলের আট নম্বরে। পঞ্জাব উঠে এসেছে সাতে। আইপিএলের আবির্ভাব লগ্ন থেকে সাফ সাফ হিসাব হচ্ছে, প্লে-অফের জন্য ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৪ পয়েন্ট। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সেই কবে এই অঙ্ক বলে দিয়েছিলেন— প্লে অফে যেতে গেলে ১৪ পয়েন্ট নিশ্চিত করে ফেলো।
কেকেআরকে যদি সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হয়, তা হলে আর কোনও ভুলচুক করা চলবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রেন্ডন ম্যাকালামদের প্রথম একাদশটাই যে এখনও স্থির হল না। শুরুতে অজিঙ্ক রাহানেকে দিয়ে ওপেন করানো হল। রাহানে সাদা বলের ক্রিকেট থেকেই বাতিল হয়ে গিয়েছেন, টি-টোয়েন্টিতে কেউ তাঁকে নিতে চায়নি। নাইট রাইডার্স ম্যানেজমেন্ট, তাদের ভিন রাজ্যের সব স্পটারেরা বা অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামেরা তাঁকে কোন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ছোঁয়ায় আইপিএলের নায়ক করে তুলবেন ভেবেছিলেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।
বেঙ্কটেশ আয়ারকে দিয়ে ওপেন করানো হচ্ছিল, তার পরে তাঁকেও ভারতীয় দলের মতো নীচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও অ্যারন ফিঞ্চকে আগের ম্যাচে বসানোর কারণ ক্রিকেটীয় নয়, অস্ট্রেলীয় ওপেনার পুরোপুরি ফিট ছিলেন না বলেই খেলানো যায়নি। তাঁর জায়গায় স্যাম বিলিংসকে ফেরানো হয়।
দিল্লি ম্যাচ বৃহস্পতিবার, তাই হাতে সময় রয়েছে। ফিঞ্চ তার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন বলেই আশা করা যায়। আর সে ক্ষেত্রে তিনি যে প্রথম একাদশে ফিরবেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ফিঞ্চকে খেলানো মানে ভারতীয় উইকেটকিপার নামানো ছাড়া উপায় নেই। চার বিদেশি হতে পারেন ফিঞ্চ, সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল এবং টিম সাউদি। অস্ট্রেলিয়া দলে সতীর্থ ফিঞ্চের মতো চোট ছিল না প্যাট কামিন্সের। শুনতে ধাক্কা লাগতে পারে কিন্তু আগের ম্যাচে বসিয়েই দেওয়া হয়েছিল কামিন্সকে। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার পরে আইপিএলে প্রথম একাদশে জায়গা না পাওয়া নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। তার উপর ব্যাট হাতে এই আইপিএলের দ্রুততম অর্ধশতরান করেছেন তিনি। কামিন্স তাঁর পূর্বসূরি স্টিভ স্মিথদের তালিকায় নাম লেখালেন। যাঁরা দেশের ক্রিকেট আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। কিন্তু আইপিএলের নির্মম দুনিয়ায় এসে হাসিমুখে রিজার্ভ ক্রিকেটারের জার্সি পরে ডাগআউটে বসতে বাধ্য হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিল্লির বিরুদ্ধেও সাউদিকে বসিয়ে তাঁকে ফেরানোর সম্ভাবনা কম। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়দের রক্তাক্ত করতে যে ছাড়েনি!
নাইটদের সব চেয়ে বড় সমস্যা এখন বিস্ময় স্পিনার সি ভি বরুণ। নিলামের আগে যে চার জন পুরনো ক্রিকেটারকে ধরে রাখার প্রক্রিয়া ছিল, সেই তালিকায় বরুণকে রেখেছিল কেকেআর। এতটাই তাঁর উপরে আস্থা রাখছিল তারা। কিন্তু চলতি আইপিএলে তাঁর সব বিস্ময়, সব কারিকুরিই যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। বরুণকে নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্তের লগ্নে দাঁড়িয়ে কেকেআর। ছন্দ হারানো বোলারকে কি খেলিয়ে যাব? না নতুন বিকল্পের খোঁজ করা হবে? কারাই বা হতে পারেন বিকল্প? ঝাড়খণ্ডের ২৩ বছরের বাঁ হাতি স্পিনার অনুকূল রায় আছেন। বাঁ হাতে ব্যাটও করতে পারেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ১৫৩। হর্ষিত কৌশিক নামে সম্পূর্ণ অনামী এক তরুণ নাইট রাইডার্স নেটে খুব নজর কেড়েছেন। সাহস করে তাঁকে খেলানোর কথা ভাববেন কি শ্রেয়সরা? সম্ভবত নারাইনকে দিয়ে ওপেন করানোর ভাবনাও বন্ধ হবে।
দেখার যে, বেঙ্কটেশ আয়ারকে ওপেনে ফেরানো হয় কি না। বেঙ্কটেশ গত বারের আইপিএলে আমিরশাহিতে দ্বিতীয় পর্বে ওপেন করে দারুণ সফল হয়েছিলেন। আবার ভারতীয় দলে রাহুল দ্রাবিড়রা তাঁকে নীচের দিকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। সেই ভূমিকায় সফল হয়েছিলেন তিনি। এ বারে নাইট রাইডার্স প্রথমে তাঁকে ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করলেও পরে ভারতীয় দলের মতোই নীচের দিকে পাঠৈানো হচ্ছে ‘ফিনিশার’-এর ভূমিকা পালনের জন্য। বেঙ্কটেশ সেই আস্থা পূরণ করতে পারেননি এখনও।
কারও কারও মনে হচ্ছে, ঘনঘন প্রথম একাদশ পরিবর্তন এবং সঠিক ক্রিকেটার নির্বাচন করতে না পারাই ভোগাচ্ছে নাইটদের। খুব খারাপ পর্যবেক্ষণ বলে উড়িয়েও দেওয়া যাচ্ছে না কারণ দলের মধ্যে স্থিরতা এবং বিশ্বাস ধাক্কা খাচ্ছে। গুজরাত টাইটান্সের মহম্মদ শামিরা আবার দেখিয়ে দিয়েয়েছেন, শর্ট পিচ্ড বলের বিরুদ্ধে কতটা দুর্বল কেকেআর ব্যাটসম্যানেরা। অন্তত চার থেকে পাঁচটা উইকেট শামিরা তুলেছেন শর্ট বলে। আন্দ্রে রাসেলকেও শর্ট বলেই আউট করেন আলজ়ারি জোসেফ। বাউন্ডারি লাইনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন লকি ফার্গুসন। এই ফর্মুলা ধরে দিল্লি যদি বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার এক্সপ্রেস বোলার অনরিখ নখিয়াকে প্রথম একাদশে ফেরত আনে অবাক হওয়ার থাকবে না। রিকি পন্টিংও নিশ্চয়ই চাইবেন দিল্লির ফাস্ট বোলারেরা ‘চিন মিউজ়িক’ বাজাক তাঁর পুরনো দলের বিরুদ্ধে। ম্যাচ ওয়াংখেড়েতে তাই পেসারেরা বাড়তি বাউন্সও পেতে পারেন।
আইপিএল টেবলের যা অবস্থা তাতে, গুজরাত টাইটান্স (৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট) শীর্ষে রয়েছে এবং প্লে-অফের দিকে এক পা বাড়িয়ে ফেলেছে। এর পরে চারটি দল রয়েছে ১০ পয়েন্টে। সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ, রাজস্থান রয়্যালস, লখনউ সুপার জায়ান্টস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। দিল্লি এবং কলকাতার সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট করে কিন্তু দিল্লি একটি ম্যাচ কম খেলেছে। যদি দিল্লি হারিয়ে দেয় কলকাতাকে, তারা প্লে-অফের দৌড়ে এগিয়ে যাবে।
দশ দল হয়ে যাওয়ায় আরওই যেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই যোগ হয়েছে আইপিএলে। টেবলের সাপ-লুডো খেলা জমে উঠেছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ধাপে কারা মই বেয়ে উঠবে, কারা সাপের মুখে পড়বে, নাটক বাড়ছে। নাইট রাইডার্সকে খুবই সন্তর্পণে, প্রত্যেক ম্যাচ নক-আউট ধরে নিয়ে নামতে হবে। শুধু ‘করব, লড়ব’-তে আটকে থাকলে চলবে না, ‘জিতব রে’-র উৎসবও যোগ করতে হবে। না হলে এ বারও কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের জন্য কেকেআর নয়, অপেক্ষা করে থাকবে বেদনার সেই ‘কেকেহার’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy