ফাইল চিত্র।
ষাট হাজার দর্শকের সামনে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। ইডেনের দর্শকঠাসা গ্যালারির সামনে প্রথম ওভারেই ব্যাট করতে নামতে হয়েছিল তাঁকে। উল্টো দিকে ছিলেন বিরাট কোহলি। যাঁর প্রত্যেকটি শটে গর্জে উঠছিল ইডেনের গ্যালারি। এলিমিনেটরের শুরুতে অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসির উইকেট হারানোর পরে দলকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ও বিরাটের কাঁধে। তিনি ক্রিজ়ে আসতেই কোহলি বলে দেন, ‘‘চাপ নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। বিপক্ষ চায়, আমরা যেন ঘাবড়ে যাই। পাল্টা আক্রমণ করতে হবে।’’ প্রাক্তন অধিনায়কের এই নির্দেশই চাঙ্গা করে দিয়েছিল রজত পাটীদারকে। তার পরে ইডেন যা দেখল, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে দর্শকদের স্মৃতিতে।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের আইপিএল যাত্রা শেষ হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের দিনই। মাত্র এক দিনের জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন রজত। রবিবার রাতেই ইনদওর থেকে উড়ে যান বেঙ্গালুরুতে। মধ্যপ্রদেশের রঞ্জি ট্রফি দলে যোগ দিতে। সোমবার সকালে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন। কর্নাটকের অনূর্ধ্ব-২৫ দলের বিরুদ্ধেও সেঞ্চুরি হাঁকান ২৮ বছর বয়সি ব্যাটার। ম্যাচ শেষে সন্ধ্যায় আনন্দবাজারকে ফোনে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। ইডেনে সেঞ্চুরির সেই মুহূর্ত ভুলতে তো পারেনইনি, বরং সেই ইনিংস যে ক্রিকেটার রজতকে আরও সম্মান দিয়েছে, তা মানতে দ্বিধাবোধ করছেন না। রজত বলছিলেন, ‘‘ব্যাট করতে নামার সময় ইডেনের গ্যালারির দিকে এক বার চোখ গিয়েছিল। একটি আসনও ফাঁকা ছিল না। মেক্সিকান ওয়েভ দেখে আমি সত্যি কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কেউ কাউকে চেনেন না, অথচ প্রত্যেকে কি সুন্দর ছন্দ মিলিয়ে উঠছেন আর বসছেন।’’ যোগ করেন, ‘‘বিরাট ভাই শুরুতেই বলে দিয়েছিল প্রতিআক্রমণ করতে। সেই অনুযায়ী ইনিংস সাজাতে শুরু করি। আমার স্বাভাবিক ক্রিকেটই আক্রমণাত্মক। তাই খেলার ধরন পরিবর্তন করতে হয়নি।’’
আইপিএলে প্রথম সেঞ্চুরি করার পরে ইডেনের দর্শকেরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। কথনও ভাবেননি, এত জন তাঁর জন্য উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেবেন। রজতের কথায়, ‘‘৯৫ রান থেকে ছয় মেরে সেঞ্চুরি করেছিলাম। সত্যি কথা বলতে, দলের রান বাড়িয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই বড় শট নিচ্ছিলাম। সেঞ্চুরি করার লক্ষ্য থাকলে কখনওই ৯৫ থেকে ছয় মারতাম না। একটি সেঞ্চুরি আমার জীবন অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। ইনদওরে ফেরার পরে আমার সঙ্গে নিজস্বী তোলার আগ্রহ দেখেই বুঝলাম, সত্যি বড় কিছু করেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রথম বারের মতো আইপিএলে এই মাইলফলকে পৌঁছে যাওয়ার পরে দেখলাম ইডেনের গ্যালারি আমার নামের ধ্বনি তুলেছে। এই মুহূর্ত যদি বাবা-মা দেখতেন, খুব খুশি হতেন। ম্যাচ জেতার পরে বিরাট ভাইয়ের সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা হয়।’’ কী বললেন বিরাট? রজতের কথায়, ‘‘আমার জীবন যেন একটি আইপিএল সেঞ্চুরিতে শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ না থাকে, সেটাই বুঝিয়েছিল। ওর মতো ক্রিকেটার দলে থাকলে প্রত্যেকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলতে পারে। আমার মধ্যেও সেটাই হয়েছিল।’’
আইপিএল নিলামে তিনি অবিক্রিত থাকার পরে কষ্ট পেয়েছিলেন। হাতে বেশ কয়েক দিন ফাঁকা সময় ছিল। বাড়ি থেকে তাই রজতের বিয়ের আয়োজন করা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন আরসিবি শিবির থেকে ফোন করে ডেকে পাঠানো হয় রজতকে। বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে আইপিএল খেলতে চলে যান তিনি। রজত বলেন, ‘‘এখনই বিয়ে করছি না। হয়তো আগামী বছরে তা হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy