—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
রবি শাস্ত্রী বলছেন, ‘দ্য বল ওয়েন্ট টু দ্য বাউন্ডারি লাইক এ ট্রেসার বুলেট।’ অর্থাৎ, বলটি বুলেটের গতিতে বাউন্ডারিতে পৌঁছে গেল। কিংবা পরবর্তীতে হিন্দি ধারাভাষ্যে আকাশ চোপড়া। কেকেআরের সুনীল নারাইন ছক্কা মারলেই যিনি বলে ওঠেন, ‘নারায়ণ, নারায়ণ।’ টেলিভিশনের পর্দায় বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে খেলা দেখতে বসলে এই শব্দগুলি প্রায়ই শোনা যায়। দর্শকদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে সব ছাপিয়ে যাচ্ছে আইপিএলের বাংলা ধারাভাষ্য। জিয়ো সিনেমা অ্যাপে যে ভাবে খেলার ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে ক্রিকেটীয় বিষয়ের বাইরে নানা রকমের সংলাপ বা গানের লাইন শোনা যাচ্ছে, তাতে অবাক দর্শকেরা। এই ধারাভাষ্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সমাজমাধ্যমে। বিভিন্ন ম্যাচের ধারাভাষ্যের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কেউ প্রশ্ন তুলছেন, একে কি ধারাভাষ্য বলে? আবার কেউ বলছেন, শুনতে বেশ অন্য রকম লাগছে।
জিয়ো সিনেমা অ্যাপে বাংলায় কারা ধারাভাষ্য দিচ্ছেন? তালিকাটা বেশ লম্বা। রয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় ও ঝুলন গোস্বামী। রয়েছেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। ম্যাচ চলাকালীন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বাংলার বিনোদন জগতের অনেকে। সম্প্রতি সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ খেলে ফেরা তারকারাও ধারাভাষ্যে যোগ দেন। অর্থাৎ, ক্রিকেট ও বিনোদন জগতের মিশেল রয়েছে বাংলা ধারাভাষ্যকারদের তালিকায়।
ঠিক কী ধরনের ধারাভাষ্য দেখা যাচ্ছে এ বারের আইপিএলে? মূলত তিনটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিয়োতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচে যখন হেনরিখ ক্লাসেন মুম্বইয়ের বোলারদের একের পর এক ছক্কা মারছেন তখন ধারাভাষ্যকার সঞ্জীব বলেন, ‘‘জোরে জোরে মারছেন ক্লাসেন আর বলছেন, আপনি কি বাড়িতে আছেন?” দ্বিতীয় ভিডিয়োতে দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে দিল্লির ইনিংসের শেষ ওভারে সঞ্জীব বলেন, “মন যে আমার কেমন কেমন করে। শরদিন্দু (সতীর্থ ধারাভাষ্যকার) বলতে চাইছেন না সত্যি কথা। একটু ঝেড়ে কাশো। এ কী?” তার পরেই শরদিন্দুকে খক খক করে কাশতে শোনা যায়। সেটা শুনে সঞ্জীব আবার বলেন, ‘‘এই ভাবে কাশতে বলিনি। ধ্যাৎ বাবা! যাচ্ছেতাই পুরো।” তা শুনে শরদিন্দু বলেন, “কী মুশকিল, আমাকে বুড়ো বানিয়ে দিল।” বলে আবার কেশে ওঠেন তিনি। অন্য রকম ধারাভাষ্যের সাম্প্রতিক নিদর্শন কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচে দেখা গিয়েছে। সেখানে কেকেআরের বোলার হর্ষিত রানার বলে আরসিবির অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি আউট হওয়ার পরে শরদিন্দু বলেন, “ডুপ্লেসি এখন বলছেন, রানাজি মাফ কর না, গলতি মারে সে হো গয়ি।” শাহরুখ খান ও সলমন খানের ছবি ‘করণ-অর্জুন’-এর গানের একটি লাইন ব্যবহার করেছেন তিনি।
বাংলা ধারাভাষ্য আলোড়ন তুলেছে সমাজমাধ্যমের পাতায়। একের পর এক ভিডিয়ো ঘুরছে। শেয়ার হচ্ছে। সেখানে মতামত লিখছেন নেটাগরিকেরা। তাতে অবশ্য বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য রয়েছে। কিছু ভাল। কিছু খারাপ। কেউ কেউ এই ধরনের ধারাভাষ্য মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, ক্রিকেটীয় কথার বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেখানে ক্রিকেট গৌণ হয়ে যাচ্ছে। সংলাপ, গানে ভরে যাচ্ছে ধারাভাষ্য। ক্রিকেট দেখতে বসে তা শুনে খারাপ লাগছে। সম্প্রচারকারী চ্যানেলের উচিত এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া। আবার কেউ বলছেন, ভালই তো লাগছে, চলুক না। তাঁদের মতে, ক্রিকেটের ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে কেন শুধু ক্রিকেট নিয়ে কথা হবে। তার বাইরেও বিভিন্ন বিষয় আসতে পারে। পুরো বিষয়টি বেশ মজাদার লাগছে। আর আইপিএল তো আসলে বিনোদন। তা হলে তো সেখানে ক্রিকেটের পাশাপাশি ভরপুর বিনোদনও চলা উচিত। সেটাই তো বাংলা ধারাভাষ্যকারেরা করছেন।
এই দুই মতের মাঝামাঝি এক মতও রয়েছে। অনেকে বলছেন, খেলায় বিনোদন মিশতেই পারে। ফলে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় ক্রিকেটের বাইরেও বিভিন্ন কথা বলা যেতে পারে। তবে সবটাই যেন একটা শালীনতা মেনে হয়। সম্প্রতি ভোজপুরি ভাষায় ধারাভাষ্যের ক্ষেত্রে যে ভাবে অশালীন কথা ব্যবহার করায় বিতর্ক হয়েছে সেটা যেন বাংলার ক্ষেত্রে না হয়। পাশাপাশি ধারাভাষ্য নিয়ে যেন টিটকিরি না হয়, সে দিকেও ধারাভাষ্যকারদের খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা।
যাঁদের নিয়ে সমাজমাধ্যমে আলোড়ন পড়েছে সেই ধারাভাষ্যকারেরা কী ভাবছেন? বিষয়টি নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল শরদিন্দুর সঙ্গে। প্রাক্তন এই ক্রিকেটার সব ম্যাচেই ধারাভাষ্য দেন। তিনি তো সমাজমাধ্যমের আলোড়নকে ভাল ভাবেই দেখছেন। শরদিন্দু বললেন, “আসলে খেলায় অনেক সময় একঘেয়েমি আসে। মাঠে বিশেষ কিছু হচ্ছে না। সেই সময় দর্শকদের ধরে রাখার জন্য, আনন্দ দেওয়ার জন্য আমরা এটা করি। এটা তো একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এখানে যতটা সম্ভব আনন্দ করা যায় করি।” তা হলে কি সম্প্রচারকারী সংস্থা তাঁদের বিশেষ কোনও নির্দেশিকা দিয়েছে ধারাভাষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে? জবাবে শরদিন্দু সাফ বললেন, ‘‘এগুলোর কোনও স্ক্রিপ্ট নেই। আমরা নিজেরাই পুরোটা করছি। কিন্তু আমরা একটা সীমা মেনে চলি। ওর বাইরে যাই না। তার মধ্যেই যতটা মজা করা যায় তার চেষ্টা করি। সংস্থা আমাদের কোনও নির্দেশ দেয়নি। পুরো স্বাধীনতা দিয়েছে। বলেছে, আমাদের মতো করে ধারাভাষ্য দিতে। আমাদের ধারাভাষ্যে ওরা খুশি।” কী রকম পরিস্থিতিতে তাঁরা এই ধরনের কথা বলেন তার একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে শরদিন্দু বলেন, “ডুপ্লেসি ভুল শট খেলে আউট হয়েছিল। আর হর্ষিতের পদবি রানা। তাই রানাজি মাফ কর না গানের লাইনটা বলেছি।” মূলত এই অন্য ধরনের ধারাভাষ্য দিতে দেখা গিয়েছে শরদিন্দু ও সঞ্জীবকেই। ঝুলন ধারাভাষ্য দিলেও ক্রিকেটের বাইরে অন্য বিষয়ে খুব একটা কথা বলতে দেখা যায়নি তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy