উত্থান: আইপিলে গতিতে নজর কেড়েছেন উমরান।
আইপিএলে গতির ঝড় তুলে সকলকে চমকে দিয়েছেন। কী ভাবে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করে যাচ্ছেন তিনি? উমরান মালিকের কোচ রণধীর সিংহ মানহাস ফাঁস করলেন ছাত্রকে নিয়ে এক অজানা কাহিনি।
কোচ জানালেন, উমরানের বাড়ি তাওয়াই নদীর তীরে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেই নদীর বালির উপর দিয়ে দৌড়তেন উমরান। কোমরে বাঁধা থাকত সাইকেলের দু’টি টিউব। তাতেও ভরা থাকত বালি। সেই টিউব কোমরে বেঁধে দৌড়েই শক্তি বাড়িয়েছেন উমরান। যার ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন বল হাতে।
কোচ রণধীর বলছিলেন, ‘‘প্রথম দিন ওকে নেটে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এত জোরে বল করতে শুরু করেছিল, বাধ্য হয়ে থামিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম প্রত্যেক দিন অনুশীলনে আসতে। কিন্তু এক দিন আসত, আবার সাত দিন আসত না। জানতে পারলাম, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলে অর্থ উপার্জন করে।’’ যোগ করেন, ‘‘ওর গতির রহস্য জানার চেষ্টা করি। ওর কাছেই জানতে চাই, কী করে এতটা গতিতে বল করছে? উমরানই আমাকে জানায়, বালির উপরে কোমরে টিউব পরে দৌড়নোর কথা।’’
জম্মুর গুজ্জরনগর অঞ্চলে উমরানের বাবা আব্দুল রশিদ মালিকের ফলের দোকান। আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট পাওয়ার পরে তাঁর দোকানে সবচেয়ে বেশি ভিড় হতে শুরু করে। পর্যটকেরা এসে প্রশ্ন করেন, আপনার ছেলে উমরান মালিক? গর্বিত বাবা বলছিলেন, ‘‘ছেলে আমাকে আর ফল বিক্রি করতে দেবে না বলেছে। ছোটবেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করেছে। ও আর চায় না, বাবা ফল বিক্রি করুক।’’ আবেগপূর্ণ গলায় বলতে থাকেন, ‘‘আমি যদিও বলে দিয়েছি, তুই ভাল ক্রিকেট খেলে আমার এই দোকানের সংস্কার করে দিস। এটাই আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি হবে।’’
দু’বছর আগে জম্মু-কাশ্মীরে শুরু হয়েছিল কার্ফু। ৩৭০ ধারার আওতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পরে। সেই সময় উমরান কোথায় অনুশীলন করবেন, বুঝে উঠতে পারতেন না। বন্ধু আব্দুল সামাদের সঙ্গে আলোচনার পরে ১৪৪ ধারার মধ্যেই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন অনুশীলন করতে। রাস্তায় পুলিশ ধরে বেশ কিছুক্ষণ আটকে রেখেছিল তাঁকে। তার পর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার উমরান ও সামাদকে চিনতে পারেন। বাবা আব্দুল রশিদ মালিক যা নিয়ে বলছিলেন, ‘‘স্যর কোথাও হয়তো ওর খেলা দেখেছিলেন। তাই চিনতে পেরেছিলেন। ডেপুটি কমিশনার সাহেব বিশেষ অনুমতি দিয়ে ওদের প্রত্যেক দিন অনুশীলনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।’’
চলতি আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১৫ উইকেটের মালিক উমরান। প্রতিযোগিতার শুরুর দিকে একটু বেশি রান দিয়ে ফেলছিলেন। ছন্দে ফেরান কিংবদন্তি ডেল স্টেন। সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি স্টাম্প রেখে বল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্টেন। গতির সঙ্গে লাইন-লেংথ ঠিক করা হয় সেই অনুশীলনেই। এমনিতে বাবার সঙ্গে রোজই এক বার করে ভিডিয়ো-কলে কথা হয় উমরানের। রশিদের কথায়, ‘‘স্টেন তো ওকে নিজের ভাইয়ের মতো ভালবাসে। ওয়াকার ইউনিসের ভিডিয়ো দেখায় ওকে। কী ভাবে সফল হয়েছে, সেই গল্প শোনায়। মাথার উপরে ডেল স্টেনের মতো কিংবদন্তির হাত থাকলে ওর উন্নতি হতেই থাকবে।’’
রশিদের আশা, পারভেজ রসুলের পরে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলুন উমরান। বলছিলেন, ‘‘এখন একটাই স্বপ্ন রয়েছে আমাদের পরিবারের। ছোটবেলায় ছেলেকে ক্রিকেট খেলার জন্য কত বকুনি দিয়েছি। এখন আমরাই চাই ভারতের হয়ে খেলুক উমরান। প্রার্থনা করছি, বিশ্বকাপ দলে ও যেন সুযোগ পায়।’’
উমরানের বাবার মতোই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তরুণ এই পেসারকে নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy