ফিরে যাচ্ছেন জেসন রয়। এই উইকেটই কেকেআরের জয়ের আশা শেষ করে দিল। ছবি: আইপিএল
কলকাতা নাইট রাইডার্স কি এ বার নিজেরা ট্রফি জেতার জন্যে নেমেছে? নাকি বিপক্ষ দল এবং তাদের ক্রিকেটারদের ছন্দে ফেরানোর জন্যে নেমেছে? রবিবারের ম্যাচের পর এই প্রশ্নটা উঠতেই পারে।
মুম্বইয়ের সূর্যকুমার যাদব এই কেকেআর ম্যাচেই ছন্দ ফেরত পেয়েছিলেন। আগের ম্যাচে দিল্লিকে প্রথম জয় ‘উপহার’ দিয়েছিলেন কেকেআরের ক্রিকেটাররা। আর এ দিন অজিঙ্ক রাহানে, শিবম দুবের মতো ক্রিকেটারকে ছন্দ ফিরিয়ে দিলেন। উপরি পাওয়া মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দেখার স্বাদ। প্রথমে ব্যাট করে চেন্নাইয়ের তোলা ২৩৫-৪ স্কোরের জবাবে ১৮৫-৮ স্কোরে থেমে গেল কলকাতা।
আইপিএলে কেকেআরের অবস্থা যত দিন যাচ্ছে, তত খারাপ হচ্ছে। প্রতিটি দল এসে খোলনলচে বের করে দিয়ে যাচ্ছে শাহরুখ খানের দলের। পরিকল্পনাহীন, বুদ্ধিবিবেচনাহীন এবং কিছু অযোগ্য ক্রিকেটারকে নিয়ে দল গড়লে যা হয়, তাই হচ্ছে। দু’টি ম্যাচে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য কলকাতাকে জিতিয়েছে বটে। কিন্তু প্রতি ম্যাচে তা হয় না। হওয়ার সুযোগও পাওয়া যাচ্ছে না।
এ দিন ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে সত্যিই বোঝা যাচ্ছিল না কোন মাঠে খেলা হচ্ছে? মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দেখতে রবিবাসরীয় ইডেন গার্ডেন্সে যে হলুদ ঝড় উঠবে সেটা জানা ছিল। কিন্তু শহর কলকাতার গর্বের মাঠ যে এ ভাবে সর্ষের খেত হয়ে উঠবে সেটা হয়তো কল্পনাও করা যায়নি। বিকেল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল। কলকাতার সমর্থক খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। যে দিকেই তাকানো যায় শুধু হলুদ জার্সি এবং পিঠে লেখা ধোনির নাম। সম্ভবত ধোনির শেষ ম্যাচে এ ভাবেই কলকাতা আপন করে নিল শহরের জামাইকে।
প্রথম থেকেই চেন্নাই যে ভাবে শুরু করেছিল, তাতে বোঝা গিয়েছিল এই ম্যাচ তাদের নিয়ন্ত্রণে। রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং ডেভন কনওয়ে চলতি মরসুমে ভাল ছন্দে রয়েছেন। ইডেনে এসেও তাঁদের ছন্দে কোনও বদল নেই। হবেই বা কী করে? চাপ দিতে পারেন সে রকম বোলারই তো নেই কলকাতার। প্রথম ওভারে উমেশ যাদব সে রকম রান দিলেন না। কিন্তু ডেভিড উইজ়া আসতেই চেন্নাই ‘ছন্দ’ খুঁজে পেল।
বেধড়ক মার খেলেন উইজ়া এবং কুলবন্ত খেজরোলিয়া। রাজস্থানের বোলার খেজরোলিয়ার প্রথম ওভারে ১৪ রান এল। সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তীরাও ছাড় পেলেন না। কলকাতার হয়ে প্রথম সাফল্য পেলেন রহস্য স্পিনার সুযশ শর্মাই। রুতুরাজ তাঁর বল বুঝতেই পারেননি।
কলকাতা অবশ্য বুঝতে পারেনি রুতুরাজ ফেরার পর এত বড় আতঙ্ক তাদের সামনে অপেক্ষা করছে। অজিঙ্ক রাহানে গত মরসুমেও কলকাতায় ছিলেন। বিরাট ভাল খেলেছেন এমনটা কেউ দাবি করবেন না। কিন্তু চেন্নাইয়ের রাহানে অন্য ব্যাটার। খোলা মনে তাঁকে খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন ধোনি। তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন রাহানে।
তবে কনওয়ে ক্রিজে থাকা পর্যন্ত তাঁকে খুব বেশি কিছু করতে হয়নি। কেকেআরের বোলারদের উপর তাণ্ডব দেখানোর কাজটা করছিলেন কিউয়ি ব্যাটারই। অনায়াস বিক্রমে অর্ধশতরান করে ফেললেন। চলতি আইপিএলে টানা চারটি। কেন তাঁর উপর এতটা ভরসা করে চেন্নাই, সেটা বোঝা গেল। শুরুটা ভাল হলে বাকি সব কিছুই সহজ হয়ে যায়। চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রেও সেটাই হল।
অর্ধশতরান করে বরুণের বলে উইজ়ার হাতে ক্যাচ দিলেন কনওয়ে। তার পরে শুরু হল আর এক তাণ্ডব। এ বার শিবম দুবে। তিনি এবং রাহানে মিলে কলকাতার বোলারদের এমন মার মারলেন, যা অধিনায়ক নীতীশ রানা বা কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত সম্ভবত এই মরসুমে ভুলতে পারবেন না। পাটা উইকেটে নীতীশ যে বোলারকেই এগিয়ে দিলেন, তিনিই ডুবিয়ে দিলেন।
ভারতীয় দলে ঢোকার দাবিদার করে তুললেন রাহানে। টেস্টে রাহুল দ্রাবিড়ের ঢংয়ে খেলতেই তিনি অভ্যস্ত। শান্ত, ধীরস্থির। কিন্তু চেন্নাইয়ের হলুদ জার্সিতে তিনি যেন দৈত্য। ভাবাই যায় না যে সূর্যকুমার যাদবের মতো রাহানে ‘ল্যাপ স্কুপ’ মারছেন। এমন এমন সব শট খেললেন, যা চোখ কচলে দেখলেও বিশ্বাস হয় না।
আর তেমনই খেললেন দুবে। বড়সড় চেহারা। ব্যাটে বল লাগলে তা মাঠে থাকে কম। কেকেআরের বোলাররা সহজ সহজ জায়গায় বল ফেলে তাঁকে যেন আরও সুবিধা করে দিলেন। এমনিতে এই মরসুমে একটি অর্ধশতরান বাদে খুব একটা আহামরি ছিল না দুবের পারফরম্যান্স। তাঁকে ফর্মে ফিরিয়ে দিলেন কেকেআরের বোলাররা।
দুবে ফেরার পরেও রাহানের তাণ্ডব থামেনি। ২৪ বলে অর্ধশতরান করলেন। শেষ পর্যন্ত থামলেন ২৯ বলে অপরাজিত ৭১ রানে। নামের পাশে ৬টি চার ও ৫টি ছয়। মাঝে এসে রবীন্দ্র জাডেজাও ৮ বলে ১৮ করে নিজের কাজ করলেন। জাডেজা ব্যাট করার সময়ই মাঠে দেখা গেল অদ্ভুত পোস্টার। আবেদন, ‘জাডেজা তুমি তাড়াতাড়ি আউট হও। আমি ধোনিকে ব্যাট করতে দেখতে চাই।’
জাডেজা সেই পোস্টার দেখেছিলেন কি না জানা নেই। কিন্তু চতুর্থ বলেই আউট। তত ক্ষণে মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে ব্যাট-হেলমেট পরে অপেক্ষারত ধোনিকে দেখে নিয়েছে জনতা। শুরু হয়ে গিয়েছে উল্লাস। সমর্থকদের স্বপ্ন পূরণ করেই ব্যাট হাতে নামলেন ধোনি। প্রথম বলেই নো। দ্বিতীয় বলে ব্যাটে লাগাতে পারলেন না। তৃতীয় বলে দু’রান। তবে রান নয়, শেষ ওভারে ধোনিকে ব্যাট করতে দেখাই রবিবারের ইডেনে সেরা প্রাপ্তি।
শুরুতে কিনা নামলেন সুনীল নারাইন। জেসন রয়ের চোট থাকায় তাঁকে দিয়ে ওপেন করানো হয়নি। নিজের পছন্দের জায়গায় এসে পেয়ে নারাইন খেললেন মোটে তিনটি বল। আকাশ সিংহের সহজ বলে তাঁর অফস্টাম্প উড়ে গেল। দ্বিতীয় ওভারে ফিরলেন নারায়ণ জগদীশন, যাঁকে এই ম্যাচে নেওয়া হয়েছিল উইকেটকিপার হিসাবে। ব্যাটার হিসাবে তাঁর অবদান এ দিনও নেই। বেঙ্কটেশ আয়ার এবং নীতীশ রানা একটা চেষ্টা করছিলেন বটে। কিন্তু পাহাড়প্রমাণ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে রোজ রোজ জেতা যায় না। মারতে গিয়েই ফিরলেন দু’জনে।
হতাশার দিনে তবু কলকাতা আশা দেখেছিল একজনের ব্যাটে। জেসন রয়। ইংরেজ ক্রিকেটার ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন। বাইশ গজে নেমেও এক বার রান আউট হতে হতে বাঁচলেন এবং হাঁটুতে আবার চোট পেলেন। তা সত্ত্বেও মারকুটে ব্যাট করে কলকাতাকে স্বল্প সময়ের জন্যে হলেও আশা দেখালেন। কিন্তু ম্যাচটা শেষ করতে পারলেন না। অর্ধশতরান করলেও মাহিশ থিকশানার একটি বল বুঝতে না পেরে বোল্ড। আশা শেষ। রিঙ্কু সিংহ ক্রিজে অনেক ক্ষণ ছিলেন বটে। কিন্তু যে পরিমাণ রানের চাপ মাথার উপরে ছিল, তাতে একার হাতে জেতানো কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না।
পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা তো আর রোজ রোজ হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy