জয়ের উৎসবে মাতলেন রোহিতরা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
মুম্বইয়ের দিল্লি বিজয়। পঞ্চম বার আইপিএল খেতাব জিতে নিল রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। মঙ্গলবারের ফাইনাল ছিল আইপিএলে হিটম্যানের ২০০-তম ম্যাচ। সেই ম্যাচ তাঁর কাছে আরও স্মরণীয় হয়ে থাকল। এ দিন দুবাইয়ে ইতিহাস গড়লেন তিনি।
ক্যাপ্টেন রোহিতের ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছে মুম্বই। ২০১৩ সালে রিকি পন্টিংয়ের হাত থেকে নেতৃত্বের ব্যাটন চলে এসেছিল হিটম্যানের হাতে। সেই বছরই প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মুম্বই শিবির। তার পর থেকে রোহিতের নেতৃত্বে কেবল এগিয়েই গিয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯-এর পর এ বারও চ্যাম্পিয়ন তারা। পাঁচ-পাঁচবার আইপিএল জিতে প্রতিযোগিতার সফলতম অধিনায়ক রোহিতই। অন্য দিকে, বিরাট কোহালি এখনও পর্যন্ত এক বারও ট্রফি দিতে পারেননি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে। প্লে অফেই এ বার দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্গালোরের। নেতা রোহিত ও নেতা বিরাটের আইপিএল স্কোরকোর্ড পুরোপুরি একপেশে, রোহিত ৫, বিরাট ০। ক্যাপ্টেন রোহিতের ঔজ্জ্বল্যে ম্লান কোহালি।
শুধু কি কোহালি? মঙ্গলবার ইতিহাস তৈরির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। মুম্বইকে হারাতে পারলে প্রথম বারের জন্য ট্রফি যেত দিল্লিতে। কনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে নজির গড়তেন শ্রেয়স আয়ার। কিন্তু রোহিত ঝড়েই স্বপ্ন ভেঙে গেল দিল্লির। খুব কাছে এসেও বহুদূরেই থেকে গেল দিল্লি। শ্রেয়সদের ১৫৬ রান ১৮.৪ ওভারেই তুলে নিল মুম্বই।
ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিং নেন শ্রেয়স। স্কোর বোর্ডে রান তুলে মুম্বইকে চাপে ফেলাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। প্রথম বল থেকেই আগুন জ্বালান কিউয়ি পেসার। দিল্লির ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভাঙেন তিনি। প্রবল চাপের মুখে পড়ে যাওয়া দলকে টেনে তোলেন দিল্লি অধিনায়ক। বুমরা-বোল্টের বিষাক্ত ডেলিভারি শুষে নেন তিনি। ৫০ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে পৌঁছে দিয়েছিলেন লড়াই করার মতো জায়গায়। ১৫৬ রানের পুঁজি নিয়ে ম্যাচ বের করতে হলে শুরু থেকেই উইকেট তুলতে হতো দিল্লিকে।
Five time IPL CHAMPIONS @mipaltan 👏👏#Dream11IPL pic.twitter.com/tBI6xF1J2E
— IndianPremierLeague (@IPL) November 10, 2020
কাগিসো রাবাদাকেও বোল্টের মতো স্পেল করতে হতো। সেই সুযোগ পেলেন না রাবাদা, অ্যানরিচ নরতিয়েরা। এক্সপ্রেস গতিতে রান তাড়া করতে শুরু করে মুম্বই। রোহিত ও কুইন্টন ডি কক শুরু থেকেই আক্রমণের রাস্তা নেন। পাওয়ারপ্লেতে ভাল রান তুলে ম্যাচের রাশ হাতে নিয়ে নেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। সেই পরিকল্পনা সফল মুম্বইয়ের। ৪৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় মুম্বই। মারকুটে কুইন্টনকে (২০) আউট করেন স্টোইনিস। মু্ম্বই অধিনায়কের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন সূর্যকুমার যাদব (১৯)।
তাতেও অবশ্য ফোকাস নষ্ট হয়নি রোহিতের। ৫১ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে তিনি যখন ডাগ আউটে ফিরছেন, তত ক্ষণে জয়ের গন্ধ পেয়ে গিয়েছে মুম্বই শিবির। তার আগে দিল্লির বোলারদের শাসন করে রোহিতের ব্যাট। হিটম্যানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন দিল্লির বোলাররা।হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের জন্য চারটি ম্যাচে নামতে পারেননি। তাঁর জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেন কায়রন পোলার্ড। প্লে অফের আগে দলে প্রত্যাবর্তন ঘটলেও চেনা ছন্দে ধরা দেননি তিনি। কিন্তু ফাইনাল বড় মঞ্চ। এই ধরনের মঞ্চের দিকেই তাকিয়ে থাকেন রোহিতের মতো চ্যাম্পিয়নরা। পোলার্ড (৯), হার্দিক পাণ্ড্য (৩) এ দিন ব্যর্থ হলেও বাকি কাজ সারেন ঈশান কিষাণ (৩৩)।
A well made half-century for @ImRo45 in his 200th outing in the IPL.
— IndianPremierLeague (@IPL) November 10, 2020
He also breaches the 3000-run mark as Captain.#Dream11IPL #Final pic.twitter.com/siJMPAWEWW
আসল সময়ে দিল্লি ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মেলে ধরতে পারলেন না। শিখর ধওয়নের সঙ্গে এ দিন ওপেন করতে নামেন মার্কাস স্টোইনিস। আগের ম্যাচেও ওপেন করতে নেমে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। এ দিন কিউয়ি পেসারের প্রথম বলেই কুইন্টন ডি’ ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন স্টোইনিস। শট খেলবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। শেষ মুহূর্তে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন স্টোইনিস। খাতাও খোলেননি তিনি। শুরুতেই স্টোইনিসের উইকেট হারানোয় ধওয়ন ও অজিঙ্কে রাহানের উপরে নির্ভর করেছিল দিল্লি। দুই তারকা ব্যাটসম্যানের অভিজ্ঞতা অনেক। সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু বোল্টের আগুনে বোলিংয়ে রাহানেকেও ফিরতে হল দ্রুত। মাত্র ২ রান করেন রাহানে। ১৬ রানে ২ উইকেট খুইয়ে রীতিমতো চাপে তখন দিল্লি।অধিনায়ক শ্রেয়স নেমেই বিপজ্জনক শট খেলেন। সে যাত্রায় বাউন্ডারি পান তিনি। পরের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন শ্রেয়স। ভাগ্য সহায় থাকায় বোল্ট ক্যাচ ধরতে পারেননি।
চতুর্থ ওভারে বুমরাকে সরিয়ে জয়ন্ত যাদবকে আক্রমণে আনেন রোহিত। মুম্বই অধিনায়কের এ হেন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছিলেন দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাওস্কর। তাঁর যুক্তি, ২ উইকেট হারিয়ে দিল্লি চাপে পড়ে গিয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে বুমরাকে আক্রমণ থেকে সরানো উচিত হয়নি। কিন্তু ধওয়নের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও ধৈর্য হারিয়ে হতশ্রী শট খেলে দলকে বিপন্ন করেন। জয়ন্তর বল ভেঙে দেয় ধওয়নের (১৫) উইকেট।
দিল্লির দুই তরুণ ব্যাটসম্যান শ্রেয়স ও ঋষভ পন্থ ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই খেলতে শুরু করেন। পন্থ সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। দশম ওভারে ক্রুনাল পাণ্ড্যকে দুটো ছক্কা হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চাপে ফেলে দেয় মুম্বইকে। কুল্টার নাইলের ওভারে দুটো বাউন্ডারি মেরেও উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন। এই কারণেই পন্থ অতীতেও সমালোচিত হয়েছেন। এ দিন ক্রিজে জমে গিয়েছিলেন তিনি। শ্রেয়সের সঙ্গে ৯৬ রানের পার্টনারশিপ গড়া হয়ে গিয়েছিল পন্থের। আরও কিছুক্ষণ টিকে থাকলে দিল্লি আরও বেশি রান তুলতেই পারত। ৫৬ রানে আউট হয়ে পন্থ যখন ডাগ আউটে ফিরছেন তখন তাঁর চোখে মুখে হতাশা।
FIFTY!
— IndianPremierLeague (@IPL) November 10, 2020
Third half-century of the season for @ShreyasIyer15. An important knock by the #DelhiCapitals Skipper.
Live - https://t.co/iH4rfdz9gr #Dream11IPL #Final pic.twitter.com/LmYJoRPMc7
টুর্নামেন্টের কনিষ্ঠ অধিনায়ক শ্রেয়স। অথচ পরিণত ব্যাটিং করলেন তিনি। দলের বিপর্যয়ের সময়ে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। শুরুর দিকে ঠিকঠাক শট খেলতে পারছিলেন না। কিন্তু খেলা যত গড়িয়েছে শ্রেয়স ততই নিজের ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। ৬৫ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। নন স্ট্রাইকার্স এন্ডে দাঁড়িয়ে দেখলেন বোল্ট ফেরালেন হেটমায়ারকে। ক্যারিবিয়ান বাঁ হাতিও বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। যে কোনও মুহূর্তে বড় শট খেলে দলকে নিয়ে যেতে পারেন ভাল জায়গায়। কিন্তু বোল্টের কাছে হার মানেন হেটমায়ার (৫)। অক্ষর পটেল (৯) বড় শট মেরে রান বাড়াতে পারেননি। বোল্ট ৩০ রানে ৩ উইকেট নেন।
এ বারের আইপিএলে একবারও মুম্বইকে হারাতে পারল না দিল্লি। পঞ্চম বার আইপিএল জিতে নয়া রেকর্ড গড়ল মুম্বই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy