আউট জনি বেয়ারস্টো।—ছবি পিটিআই।
প্রায় হারা ম্যাচ দশ রানে জিতে বিরাট কোহালিরা যখন উৎসব করছেন, ডাগ-আউটে দর্শকশূন্য গ্যালারির মতোই নিস্তব্ধতা জনি বেয়ারস্টোর মুখে। কী মনে হচ্ছিল নিজেকে তখন? সাতাশি বিশ্বকাপ ফাইনালের মাইক গ্যাটিং?
ইডেনে সে দিন ইংল্যান্ডের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ বেরিয়ে যায় গ্যাটিংয়ের অ্যাডভেঞ্চারে। অ্যালান বর্ডারকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে নিজের উইকেট এবং ম্যাচ সঁপে দিয়ে আসেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। আর তার পরে বর্ডারের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতে তাঁর মুখের সামনে নৃত্য করতে থাকে।
সে দিন তবু অ্যালান বর্ডারের সঙ্গে কলকাতা ছিল। এক লক্ষ ই়ডেন দর্শক অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করছিল কারণ সেমিফাইনালে গ্যাটিংয়ের ইংল্যান্ডই কপিল দেবদের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছিল। সোমবার দুবাইয়ের মাঠ ছিল দর্শকশূন্য। দু’এক জন ভক্ত যাঁদের পতাকা নাড়তে দেখা গেল, তাঁরাও সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের। দলের কারও পরিবারই হবে হয়তো। যুজ়বেন্দ্র চহালের সঙ্গে চিন্নাস্বামীর গর্জন ছিল না, যেমন বর্ডারের ছিল ইডেন। ১২১-২ স্কোরে দাঁড়িয়ে সানরাইজ়ার্সের দরকার ২৯ বলে ৪৩। দেখে মনে হচ্ছিল, বিরাট কোহালির আরও একটা দুঃস্বপ্নের আইপিএলই কি শুরু হল? গত বার প্রথম ছ’টা ম্যাচ টানা হেরেছিলেন। এ বারে কি শুরুতেই ০-১? সে দিকেই যাচ্ছিল।
চহালকে একমাত্র বিপজ্জনক দেখাচ্ছিল। শিশির পড়লে সাধারণত স্পিনারদের বল ধরতে বেশি সমস্যা হয়। বিশেষ করে লেগস্পিনারের। এ দিন দুবাইয়ের মাঠে শিশিরে বল ভিজে যাচ্ছিল। ম্যাচের পরে কোহালি এসেও যা স্বীকার করে গেলেন। তা সত্ত্বেও চহালের স্পিন ফণা তুলছিল বিষধর কেউটের মতো। কিন্তু কত ক্ষণ? এটাই যে ছিল তাঁর শেষ ওভার। বিচারবুদ্ধি বলে, ঝুঁকি না নিয়ে প্রতিপক্ষের সেরা বোলারকে দেখে-দেখে খেলে দেব। তার পরে না হয় বাকিদের বিরুদ্ধে রানটা তোলার ব্যবস্থা করা যাবে।
গ্যাটিংয়ের দেশেরই বেয়ারস্টোর মাথায় তবু ভূত চাপল। লেগস্টাম্পের উপরে পড়া বল বেপরোয়া ভঙ্গিতে ছক্কা হাঁকড়াতে গিয়ে তাঁর আউট আরসিবিকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনল। চহাল পরের বলেই বিস্ময় গুগলিতে ফিরিয়ে দিলেন বিশ্বকাপে ভারতের চার নম্বর হিসেবে বিস্ময় নির্বাচন বিজয় শঙ্করকে। যখন অম্বাতি রায়ডু ম্যাচের সেরা হচ্ছেন, শেষ মুহূর্তে তাঁর বিকল্প হিসেবে বিশ্বকাপের দলে ঢুকে পড়া বিজয় শঙ্কর প্রথম বলে ফিরে যাচ্ছেন। ক্রিকেট, মহান ক্রিকেটই কি বিচারের বাণী শুনিয়ে দিয়ে যাচ্ছে?
এখন রায়ডু-শঙ্কর তর্কের নিষ্পত্তি করতে বসলেও কোহালিদের বিশ্বকাপ ফিরে আসবে না। তবে চহালের ঘূর্ণি আর শেষ ওভারের কামালে জয় দিয়ে শুরু করতে পারলেন আরসিবি অধিনায়ক। এর পরে তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ল সানরাইজ়ার্স। ২৭ বলে ৩২ রানে আট উইকেট হারিয়ে অবিশ্বাস্য ভাবে ম্যাচ হেরে গেল তারা। তার মধ্যে এক জন হেলমেটে বল লাগিয়ে বোল্ড হলেন। রশিদ খান ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে থাকলেন। সানরাইজ়ার্স তখন আতঙ্কগ্রস্ত শিবির! চহাল যদি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন, বেয়ারস্টো নিঃসন্দেহে ম্যাচ কা মুজ়রিম। এর পরে নবদীপ সাইনি দুরন্ত গতিতে বল করে দু’টো উইকেট তুললেন আর লকডাউনে লম্বা চুল বানিয়ে ফেলা ডেল স্টেনের হাতে গেম, সেট, ম্যাচ আরসিবি।
অথচ বেয়ারস্টোর হাতের সামনে এ দিনই তো জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ ছিল— এবি ডিভিলিয়ার্স। আফগান লেগস্পিনার রশিদ খানকে যখন তিনি সাবধানে খেলছেন, আরসিবি-র রানের গতি মুখ থুবড়ে পড়ছে। উল্টো দিকে, কোহালিরও ব্যাটে-বলে হচ্ছে না। নটরাজনের স্লোয়ারে বোকা বনে ফিরে গেলেন। তবু রশিদের ওভারগুলো ঝুঁকি না নিয়ে খেলে দিলেন এবি। টি-টোয়েন্টিতে শেষ পাঁচ ওভারে তাঁর স্ট্রাইক রেট আড়াইশোর উপরে। এ দিন আবার প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন, ক্রিকেট দুনিয়া ‘ফিনিশার’ আখ্যা না দিক, মহেন্দ্র সিংহ না হতে পারেন, তবে শেষের তোপধ্বনি তিনিও জানেন। ৩০ বলে ৫১ আরসিবি ব্যাটিংয়ের মাঝের ওভারের রক্তাল্পতা সারিয়ে পৌঁছে দিল ১৬৩-র লড়াকু স্কোরে।
তার আগে দেবদত্ত পাড়িকলের স্বপ্নের অভিষেক। আইপিএল এমন সব নতুন মুখের উদয়ের আদর্শ মঞ্চ। হার্দিক পাণ্ড্য, যশপ্রীত বুমরাদের আবির্ভাব ঘটেছে যে মঞ্চ থেকে। মরুশহরে অভিষেকেই ৪২ বলে ৫৬ হয়তো সন্ধান দিয়ে গেল নতুন এক রত্নের। আর কী সব দুরন্ত ছবি! ডেল স্টেনের পাশে-পাশে হাঁটছেন নবদীপ সাইনি, শিবম দুবেরা। দুনিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলারের পরামর্শে সমৃদ্ধ হচ্ছেন ভারতীয় তরুণেরা। তেমনই অভিষেক ম্যাচে আরসিবিকে টানছেন দেবদত্ত আর ডাগআউটে বসে কোহালি, ডিভিলিয়ার্সরা হাততালি দিচ্ছেন!
আইপিএল মানেই তো এমন সব আবেগের কোলাজ। যেখানে কিংবদন্তির পাশে হাঁটতে পারে অজানা, অচেনা প্রতিভা। তাঁদের সংস্পর্শে চকমকি পাথরের মতো জ্বলে ওঠে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। তৈরি হয় আগামীর তারকা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy