পেনাল্টি কর্নারের বদল চায় এফএইচআই। ফাইল ছবি।
বদল হচ্ছে হকির নিয়মে। হকিতে কয়েক দশক ধরে চলে আসা পেনাল্টি কর্নার সম্ভবত আর থাকবে না। পেনাল্টি কর্নার হকি মাঠে গোল করার অন্যতম হাতিয়ার। প্রতিপক্ষের ‘ডি’-র মধ্যে বিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ে বল লাগলে বা গোলমুখী খেলোয়াড়কে অবৈধ ভাবে বাধা দেওয়া হলে পেনাল্টি কর্ণার দেওয়া হয়।
খেলোয়াড়দের জন্য পেনাল্টি কর্নার বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ গোল পাওয়ার জন্য প্রতি নিয়ত পেনাল্টি কর্নারের কৌশল বদল করছে দলগুলি। বিপক্ষের তীব্র গতির শট আটকাতে সেই বলের দিকেই দৌড়ে যাচ্ছেন রক্ষণ ভাগের খেলোয়াড়রা। তাতেই বাড়ছে চোট-আঘাত। তাই খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে পেনাল্টি কর্নার তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এক দম তুলে না দেওয়া হলেও নিয়ম বদল হওয়া একরকম নিশ্চিত
‘ফিউচার অব দ্য পেনাল্টি কর্নার’ বা পেনাল্টি কর্নারের ভবিষ্যত শীর্ষক একটি প্রকল্প নিয়েছে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন (এফএইচআই)। বিভিন্ন দেশের হকি সংস্থা, খেলোয়াড় এবং বিশেষজ্ঞদের থেকে মতামত চেয়েছে এফএইচআই। ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক্স পর্যন্ত অবশ্য বর্তমান নিয়মই বহাল থাকবে। এফএইচআই-এর তরফে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা গুরুত্ব দিয়ে পেনাল্টি কর্নারের নিয়ম পরিবর্তন করার কথা ভাবছি। কোনও খেলোয়াড়ের গুরুতর চোট বা দুর্ঘটনা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত হবে না।’’ নতুন সিদ্ধান্ত হবে সব দেশের হকি সংস্থা, বিশেষজ্ঞ এবং খেলোয়াড়দের আলোচনা এবং মতামতের ভিত্তিতেই।
Future of the Penalty Corner – Global consultation project
— International Hockey Federation (@FIH_Hockey) May 6, 2022
We invite you to fill in a short online questionnaire to capture opinions on the current penalty corner rules, as well as ideas for the future.
Follow the link to participate: https://t.co/UpjKoOG4cZ pic.twitter.com/RYnyXBoKwF
বর্তমানে হকির পেন্টাল্টি কর্নার খেলোয়াড়দের চোট লাগার অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক সময়ই বিপক্ষের গোলমুখী শক্তিশালী শটে গুরুতর আহতও হন হকি খেলোয়াড়রা। উদাহরণ হিসেবে ২০০৪ সালের অক্টোবরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের কথা বলা যায়। পাকিস্তানের পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ সোহেল আব্বাসের জোরাল শট চোখের উপরে লাগলে হাড়ে চিড় ধরেছিল ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক দিলীপ তিরকের। যে ঘটনায় দিলীপের প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হতে পারত বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন খেলোয়াড়র তথা তিরকের সতীর্থ বীরেন রাসকুইনহা। দলের দুর্গ রক্ষা করতে দিলীপ ছুটে গিয়েছিলেন সোহেলের তীব্র গতির শট লক্ষ্য করে।
সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিরকে বলেছেন, ‘‘মিথ্যে বলব না, তীব্র গতির বল আটকাতে বেশ ভয় লাগত। ঝড়ের গতিতে বল উড়ে আসত। গোল পোস্টে আমাদের কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই দাঁড়াতে হত। শুধু অ্যাবডোমেন গার্ড ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। শরীরের যে কোনও জায়গায় বল লাগার সম্ভাবনা থাকত।’’ তিরকে জানিয়েছেন, ভয় করলেও খেলার অংশ হিসেবেই তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন বিষয়টাকে।
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতের ব্রোঞ্জ জয়ী দলের সদস্য অমিত রুইদাস শরীরের একাধিক জায়গায় চোট পান। তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে দেশের অন্যতম সেরা পেনাল্টি কর্নার ব্লকারের চোট লাগে বুক, পেট, হাঁটু এবং গোড়ালিতে।
পেন্টাল্টি কর্নারের জন্য বিশেষ ভাবে অনুশীলন করেন দলগুলি। পেনাল্টি কর্নার নেওয়া, ‘ডি’-র মাথায় বল থামানো এবং শট নেওয়া— প্রতিটির জন্য অনুশীলনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড় তৈরি করা হয়। আবার উল্টোদিকে, বিপক্ষের পেনাল্টি কর্নার রুখে দেওয়ার জন্যও লাগে অনুশীলন, কৌশল। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় কর্নার নেওয়ার পরেই গোল লাইনের পিছন থেকে রক্ষণ করতে বেরিয়ে আসতে পারেন গোলরক্ষক-সহ পাঁচ জন খেলোয়াড়।
দেখা গিয়েছে, গত দুটি অলিম্পিক্সে শেষ চারে যে দলগুলি পৌঁছেছিল, তাদের পাঁচ জন সর্বোচ্চ গোলদাতার চার জনই পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ। পেনাল্টি কর্নারের উপর সেরা হকি খেলিয়ে দেশগুলির অধিকাংশের নির্ভরতাও অনেক বেড়েছে আগের থেকে। তাই খেলোয়াড়দের সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে এফএইচআই।
অধিকাংশ হকি খেলিয়ে দেশই এফএইচআই-এর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও আর্জেন্টিনার প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় গঞ্জালো পিল্লাট চান না পেনাল্টি কর্নার উঠে যাক। এখন জার্মানির জাতীয় দলের সদস্য পিল্লাট বলেছেন, ‘‘এটা আমার কাছে ফর্মুলা ওয়ানের মতো। গাড়ির ওই প্রতিযোগিতায় গতিই শেষ কথা। কিন্তু ফর্মুলা ওয়ানে চোট আঘাতের ঘটনা খুবই কম। কারণ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। হকিতেও আমরা সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারি। পেনাল্টি কর্নার তুলে দিলে হকির আকর্ষণ, উত্তেজনা অনেক কমে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy