ব্যর্থতার মিছিলেও উজ্জ্বল জাডেজা। লিডসে ৬৮ বলে ৮৭। ছবি: রয়টার্স
ব্রাউনওয়াশ হল না।
বিশ্বকাপের আগে একটা বড় শিক্ষা হল।
এত দিন আমরা দেখছিলাম, ভারতকে কোনও রকম চাপে ফেলতে পারছে না ইংল্যান্ড। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা প্রথমে ব্যাট করলে তিনশো তুলে দিচ্ছিল। আবার ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করলে, আড়াইশো পেরোতে পারছিল না। শুক্রবারই ওয়ান ডে সিরিজে প্রথম বার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল ধোনিরা, আর পারল না।
আমি সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করব না। ক্রিকেটে কেউ রোজ জেতে না। ইংল্যান্ডও আজ সিরিজে বাকি ম্যাচগুলোর চেয়ে অনেক ভাল খেলেছে। ব্যাটিং, বোলিং— দু’টোই ওদের এ দিন অনেক উন্নত দেখিয়েছে। ভারত একেবারে কিছু করতে পারেনি, বললে অন্যায় হবে। রবীন্দ্র জাডেজা শেষ দিকে একা লড়ল। অম্বাতি রায়ডু হাফসেঞ্চুরি পেল। শুধু টপ অর্ডার কাঠিন্যটা দেখাতে পারল না বলে হারল। বিশ্বকাপের আগে এটা নিয়ে খাটতে হবে ধোনিদের। চাপের মুখে লড়ে যাওয়ার মানসিকতাটা তৈরি করা দরকার। রোজ রোজ তো আর মনের মতো স্ক্রিপ্ট পাওয়া যাবে না।
ভারতের টেস্ট টিমের ওই অবস্থার পর রবি শাস্ত্রী টিম ডিরেক্টর হিসেবে যা কাজ করেছে, এক কথায় দুর্দান্ত। টিমটাকে ও মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে তুলেছে। চাপের মুখে লড়াকু মানসিকতা আমদানির যে কথাটা বললাম, আমার মতে ওটা রবি থাকলেই হয়ে যাবে। একটা সিরিজ নয়, রবিকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত রাখতে হবে। রায়না, রাহানেরা আপনাআপনি চার্জর্ড হয়ে নামবে। রবি-র মতো খারুশ ক্রিকেটার ক’জন ছিল?
ইংল্যান্ডের পাল্টে যাওয়ার কথা বলছিলাম। ভারতীয় স্পিনারদের ওরা যে ভাবে আজ স্টেপ আউট করে ফেলছিল, তা গোটা সিরিজে ওদের একবারের জন্যও করতে দেখেছি কি না সন্দেহ। মইন আলিকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে আনার সিদ্ধান্তটাও ক্লিক করল। ইংরেজরা যে এ ভাবে নিজেদের বদলে ফেলবে, তা বোধহয় আগাম আন্দাজ করতে পারেনি ভারত। তাই হঠাৎ আক্রমণের মুখে একটু দিশাহারা লাগল শামি, ভুবিদের। ভুবি-শামি ভাল বল করলেও উমেশকে আরও উন্নতি করতে হবে। আর বিশাল রানের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে খেলতে নেমে ব্যাটসম্যানরাও তাড়াহুড়ো করে আউট হল। যে লড়াইটা দেখানো দরকার ছিল, কেউ দেখাতে পারল না। জাডেজা যখন চালাতে শুরু করল, দেরি হয়ে গিয়েছে। উল্টো দিকে উইকেট নেই। রায়ডু-র ইনিংসও প্রশংসনীয়। নটিংহ্যামে অপরাজিত ৬৪-র এ দিন আবার হাফসেঞ্চুরি। মনে হচ্ছে, যুবরাজ সিংহের ওয়ান ডে টিমে ঢোকার রাস্তা প্রচণ্ড কঠিন করে দিল ছেলেটা।
একটা ভাল ব্যাপার যে, চাপের মুখে টিমটা কী রকম, এখনই বোঝা গেল। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া সফর আছে। ওখানে আরও চাপে পড়ে টিমটা আস্তে আস্তে তৈরিও হয়ে যাবে। কঠিন মানসিকতা আয়ত্ত করা কঠিন ব্যাপার নয়। আইপিএল খেললে তো আরওই নয়। ধোনির ওয়ান ডে টিমে সবাই আইপিএল খেলে। তাই এই একটা খুঁত চোখে পড়লেও ভারতের উপরই আমি বিশ্বকাপে বাজি ধরব। ভারতের সবচেয়ে বড় সুবিধে বিশ্বকাপ এ বার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড মিলিয়ে হবে। যে অস্ট্রেলিয়ায় ওরা তার দু’মাস আগে সফরে যাবে। আর টিমটাও সত্যি খুব ভাল। মানে, ওয়ান ডে টিম।
নইলে ইংল্যান্ডের কাছে ওদের দেশে টেস্টে ধ্বংস হওয়ার পর এ ভাবে পাল্টা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। চরম অপমান নিয়ে অ্যালিস্টার কুকের দেশ থেকে ভারত ফিরছে, আর বলা যাবে না। বরং চব্বিশ বছর পর ইংল্যান্ড থেকে ওয়ান ডে সিরিজ জিতে ধোনিরা ওদের একটা বার্তা দিয়ে ফিরছে।
টেস্টটা আমাদের দুনিয়া নয়। সেখানে তোমরা জিতবে ৩-১।
ওয়ান ডে-টা আমাদের দুনিয়া, তোমাদের নয়, আর তাই আমরাও জিতলাম ৩-১!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy