প্রত্যাবর্তন: অবসর ভেঙে গোল্ড কোস্টে ফিরলেন বীর। ফাইল চিত্র
পনেরো বছর বয়সে ছেলেটা শুধু সাঁতারের পুলেই ঝড় তোলেনি, সাড়া ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রীড়া জগতেও। ওই সময় বলা হতো, বয়সভিত্তিক সাঁতারে এই ছেলেটার চেয়ে দ্রুতগতির সাঁতারু বিশ্বে আর নাকি কেউ নেই!
তা সে বছর এগারো আগের ঘটনা। খুব ভুল যে বলা হতো না, সেটা বারবার বোঝা গিয়েছে। ১৬ বছর বয়সে সব চেয়ে কম বয়সি ভারতীয় সাঁতারু হিসেবে অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সে নিজের হিটে প্রথম হওয়া। যদিও সেমিফাইনালে আটকে যান। কিন্তু এর পরে ২০১০ এশিয়ান গেমসে পদক। যা পেতে ২৪ বছর সময় লেগে গিয়েছিল কোনও ভারতীয় সাঁতারুর। আর জাতীয় প্রতিযোগিতায়? ফ্রিস্টাইল এবং বাটারফ্লাই মিলিয়ে ৫০ থেকে ৪০০ মিটারে সব জাতীয় রেকর্ড ওই এক জনের ঘরেই।
ঠিক যখন মনে করা হচ্ছিল, ভারতীয় সাঁতারের কিংবদন্তি হওয়ার দিকে এগোচ্ছেন ওই তরুণ, পুল থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যায় ছ’ফুট তিন ইঞ্চি চেহারাটা।
দীর্ঘ ছ’বছর পরে, ২৬ বছর বয়সে আবার ফিরে এসেছেন তিনি। কমনওয়েলথ গেমসের প্রথম দিনেই (বৃহস্পতিবার) সাঁতারের পুলে ঝাঁপ মারবেন সেই বীরধবল খাড়ে। শুধু প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই নয়, পুল তোলপাড় করে এগিয়ে যাবেন তাঁর অধরা স্বপ্ন পূরণ করার দিকে।
ওই রকম প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে শুরু করার পরে কেন সরে গিয়েছিলেন সাঁতার থেকে? অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে রওনা হওয়ার আগে আনন্দবাজার-কে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে খাড়ে বলছিলেন, ‘‘আমি তখন একের পর এক রেকর্ড করে চলেছি। এশিয়াডে ব্রোঞ্জ জিতেছি। অলিম্পিক্সে নেমেছি। আমার পারফরম্যান্স দেখে মহারাষ্ট্র সরকার আমাকে তেহসিলদারের একটা চাকরি দেয়। ওই চাকরি পাওয়ার পর থেকে আমি সাঁতার থেকে দূরে
সরে যাই।’’
কিন্তু কেন নিলেন ওই চাকরি? পারিবারিক চাপ যে একটা ছিল, তা পরিষ্কার হয়ে যায় খাড়ের কথাতেই। ‘‘ওই সময় মনে হয়েছিল, চাকরিটা ছাড়া উচিত হবে না। ওটাই ঠিক সিদ্ধান্ত। আমার বাবা-মাও তাই চেয়েছিলেন।’’ এখন কি আক্ষেপ হয় না পাঁচটা বছর নষ্ট করার জন্য? ‘‘অবশ্যই হয়। আমি তখন দারুণ ফর্মে ছিলাম। ২০১২ অলিম্পিক্সের জন্যও তৈরি হচ্ছিলাম। কিন্তু...(একটু থেমে) তখন সরে না গেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে কিন্তু আরও পদক দিতে পারতাম,’’ বলেছেন মহারাষ্ট্রের এই সাঁতারু।
সেই আক্ষেপই কি আবার পুলে ফিরিয়ে আনল আপনাকে? খাড়ের কথায়, ‘‘অবশ্যই। সে সময় এশিয়ান গেমসে আমি ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম (৫০ মিটার বাটারফ্লাই)। কিন্তু তাতে আমি তৃপ্ত হইনি। আমি চেয়েছিলাম, সোনা জিততে। সেই অধরা স্বপ্ন সত্যি করতেই ফিরে এলাম।’’ অগস্টে এশিয়ান গেমস। তার আগে কমনওয়েলথের চ্যালেঞ্জ। ৫০ মিটার বাটারফ্লাই, ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল, নামছেন এই দুই ইভেন্টে। কমনওয়েলথে সফল হওয়ার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী? ‘‘সেরা ফর্মে পৌঁছতে আমার আরও মাস দু’য়েক সময় লাগবে। আমি কমনওয়েলথে ধাপে ধাপে এগোতে চাই। হিট, সেমিফাইনাল, ফাইনাল। কমনওয়েলথ হল আমার ফিরে আসার লড়াইয়ের প্রথম পদক্ষেপ,’’ বলছেন ভারতের দ্রুততম সাঁতারু।
ফিরে আসার লড়াইয়ে বেঙ্গালুরুতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ওজন ঝরিয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘ছ’ঘণ্টা সাঁতার আর দু’ঘণ্টার জিম। এটা আমার নিয়মিত রুটিন। নিজেকে এখন দারুণ শক্তিশালী লাগছে। যেটা আমার আগে লাগত না।’’ শক্তি এবং গতি— ফিরে আসার লড়াইয়ে আপাতত দু’টোই অস্ত্র খাড়ের। যে কারণে স্বল্প দূরত্বের সাঁতারে নামছেন কমনওয়েলথে। যেখানে এই দু’টো সম্পদই ফারাক গড়ে দিতে পারে। আপনার প্রথম আর দ্বিতীয় ইনিংসের মধ্যে তফাত কোথায়? খাড়ে বলছেন, ‘‘এ বার আমি অনেক অভিজ্ঞ। জানি কী করতে হবে। সাঁতার থেকে দূরে ছিলাম বলে মানসিক ভাবেও তরতাজা থেকে নামতে পারব। এক একটা প্রতিযোগিতা আপনাকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নিংড়ে নেয়। তবে এ বারের পরীক্ষাটা হল, কত তাড়াতাড়ি নিজেকে আমি আগের জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। তার পর সেখান থেকে উন্নত করার লড়াই
শুরু হবে।’’
জীবনের শুরুতে ঠিকঠাক খাদ্যের অভাবে বিস্কুট খেয়েও খিদে মেটাতে হয়েছে। বলছিলেন, ‘‘আমি জানি, লড়াই কী ভাবে করতে হয়। হার মানতে শিখিনি কখনও। এ বারও মানব না।’’
পুলের পাশ থেকে কেউ হয়তো বলবে না, ‘ফাইট বীর, ফাইট।’ কিন্তু বীরধবল খাড়ে লড়াই চালিয়ে যাবেন। পুল তোলপাড় করে এগিয়ে যাবেন অধরা স্বপ্নের দিকে।
কমনওয়েলথ সাঁতার: বৃহস্পতিবার থেকে সরাসরি সোনি সিক্স, সোনি টেন টু, সোনি টেন থ্রি চ্যানেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy