Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

‘ভীষ্ম’ সন্দীপের নতুন চ্যালেঞ্জ

ডি শেরিংহ্যামের টিমকে উদ্বোধনী ম্যাচে হারাতে অ্যালেক্স ফার্গুসনের সহকারী ভরসা রাখছেন ভারতীয় ফুটবলের ‘ভীষ্ম’ সন্দীপ নন্দীর উপর। তাঁর অভিজ্ঞতার জন্য।

রতন চক্রবর্তী
কোচি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৩
Share: Save:

সচিন তেন্ডুলকরের টিমের মেন্টর এখন একজন বঙ্গসন্তান!

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, টেডি শেরিংহ্যামের টিমকে উদ্বোধনী ম্যাচে হারাতে অ্যালেক্স ফার্গুসনের সহকারী ভরসা রাখছেন ভারতীয় ফুটবলের ‘ভীষ্ম’ সন্দীপ নন্দীর উপর। তাঁর অভিজ্ঞতার জন্য।

সচিন যেমন গত তিন বছর কেরল ব্লাস্টার্সের ম্যাচ দেখতে এলেই পিঠ চাপড়ে দিতেন বর্ধমানের ছেলের, তেমনই কেরলের কোচ হয়ে আসার পর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তনী রেনে মিউলেনস্টিনও তাঁর বিয়াল্লিশ বছরের গোলকিপারকে ডেকে বলেছেন, ‘‘পুরো টিমকে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করো।’’ কোচির টিম হোটেলে বসে পাঁচ বার জাতীয় ও আই লিগ জয়ী কিপার বলছিলেন, ‘‘স্পেনে অনুশীলনের সময় থেকেই কোচ আমাকে বলেছেন সবার সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করার জন্য। সেটাই করছি।’’ মনে হল গতবার টাইব্রেকারে গোল বাঁচিয়ে কেরলকে ফাইনালে তোলা পেশাদার সন্দীপ ব্যাপারটা বেশ উপভোগই করছেন।

করবেনই বা না কেন? এ বার আইএসএলে দেশের যত ফুটবলার খেলছেন তাদের মধ্যে সবথেকে বেশি বয়স সন্দীপের। তা সত্ত্বেও তিনি হাঁটুর বয়সি ছেলেদের সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দিয়েছেন গত বছর পর্যন্ত। তাঁর সমসাময়িক সব ফুটবলারই হয় অবসর নিয়েছেন অথবা কোচিং করছেন। দুই ছেলের পিতা সন্দীপ কিন্তু লড়ে যাচ্ছেন। ইয়ান হিউমদের অনুশীলন শেষ হওয়ার পর বলছিলেন, ‘‘গতবারও এগারোটা ম্যাচ খেলেছি। সেমিফাইনালে দিল্লির বিরুদ্ধে পেনাল্টি-কিক বাঁচিয়ে টিমকে ফাইনালে তুলেছি। প্রথম বছর ডেভিড জেমসের মতো কিংবদন্তি বিশ্বকাপার থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছি। সেমিফাইনালে খেলেছি। তা সত্ত্বেও আমার দুর্ভাগ্য কি জানেন, একবারও ফাইনালে এটিকে-র বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাইনি। বিদেশিদের উপর নির্ভর করেছেন কোচেরা।’’

দেশের সব টুর্নামেন্ট একাধিকবার জিতেছেন। কলকাতার দুই প্রধান ছাড়াও মহীন্দ্রা ইউনাইটেড, চার্চিল ব্রাদার্স কে জাতীয় বা আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছেন। যা এ দেশের কোনও কিপারের নেই। কিন্তু তাঁর অধরা থেকে গিয়েছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। ‘‘দু’বার ফাইনালে তুলেও এটিকে-কে হারাতে পারিনি। কলকাতার বিরুদ্ধে কী যে হয়? মনে হয় কোনও তুকতাক আছে। দেখা যাক এ বার।’’ বলে হাসেন সন্দীপ।

এ বার নিয়ে টানা চার বার একই টিম কেরল ব্লাস্টার্সে খেলছেন সন্দীপ। নিলামে তাঁকে না নিলেও পরে তাঁর পারফরম্যান্স এবং অভিজ্ঞতার কথা ভেবে ডেকে নেন কেরল কর্তারা। সন্দীপ বলছিলেন, ‘‘টিম ম্যানেজমেন্টে কিছু পরিবর্তন হওয়ায় ওরা ভেবেছিল আমার বয়স হয়েছে, পারবে না। পরে মত পরিবর্তন করেছে।’’ অনুশীলনে দেখা গেল ইয়ান হিউম তো বটেই, টটেনহ্যাম, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে, ফুলহ্যাম, মোনাকেতে খেলা কেরলের তারকা স্ট্রাইকার দিমিতার বের্বাতভ পর্যন্ত সন্দীপকে গোলের নিচে দাঁড় করিয়ে বল মেরে চলেছেন নাগাড়ে।

এ বারের আইএসএলে বঙ্গসন্তান গোলকিপারের ছড়াছড়ি। সুব্রত পাল থেকে দেবজিৎ মজুমদার। কে নেই। কিন্তু সন্দীপ যেন এদের মধ্যে ব্যতিক্রম। ইচ্ছেশক্তি শুধু নয়, অনুশীলন থেকে লড়ে টিমে ঢোকার জেদে আলাদা। ‘‘ই পি এলে খেলা পল রাচুবকা হয়তো শুরুতে খেলবে এ বার। ওর-ও বয়স ৩৬। শুভাশিস (রায়চৌধুরী) আছে। তাতেও বলছি আমার ডাক পড়বেই। প্রতি বছরই এটা হচ্ছে।’’ বলে দেন বিয়াল্লিশ ছোঁয়া কিপার।

কিন্তু আপনার সমসাময়িক সব ফুটবলার যখন অবসর নিয়েছেন তখন কোন রসায়নে টিঁকে আছেন? কোথা থেকে পান লড়ে যাওয়ার রসদ? হাসতে হাসতে সন্দীপের জবাব, ‘‘অলিভার কান, ফান দার সার আমার অনুপ্রেরণা। ওরাও তো চল্লিশ পেরিয়ে খেলেছেন। যতদিন নিজেকে ফিট রাখতে পারব খেলে যাব। থামব কেন? এখনও তো গোলের নিচে দাঁড়িয়ে পেনাল্টি বাঁচাই। অনুশীলন করি জুনিয়রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। স্পেনেও তো করে এলাম। কেন তা হলে অবসর নেব? কেন?’’

শুনে মনে হয়, যে পজিশনে একশো পার্সেন্ট ফিট না থাকলে সফল হওয়া সম্ভব নয়, সেখানে দাঁডিয়েও এখনও সেরা খেলাটা খেলতে চান দশ বছর টানা ভারতীয় দলের খেলা কিপার।

ও দেশের ফুটবলে সন্দীপ সত্যিই ব্যতিক্রমী!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy