Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
AR Rahman Divorce

‘গ্রে ডিভোর্স’ নিয়ে দুনিয়াজোড়া আলোচনা! রহমানের দাম্পত্যও কি ধাক্কা খেল সেই ঢেউয়েই?

বিচ্ছেদ নিয়ে ইতিমধ্যে হ্যাশট্যাগও তৈরি হয়েছে। তৈরি করেছেন স্বয়ং রহমান। তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে যে পোস্টে বিচ্ছেদের খবর দেওয়া হয়েছে। সেখানেই দেওয়া হয়েছে বিচ্ছেদের হ্যাশট্যাগ। ‘#এআরআরসায়রাব্রেকআপ’ এখন ট্রেন্ডিং।

যখন প্রেম ছিল! এআর রহমান এবং সায়রা বানু।

যখন প্রেম ছিল! এআর রহমান এবং সায়রা বানু। ছবি : সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৩২
Share: Save:

ধূসর বিচ্ছেদ!

‘সুখী’ দাম্পত্য বা ‘মিষ্টি’ প্রেম যদি ‘রঙিন’ হয়, তবে বিচ্ছেদের ‘শীতল ধূসর বর্ণ’ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। যদিও ‘গ্রে ডিভোর্স’-এর সঙ্গে দাম্পত্যের রং ফিকে হয়ে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। ‘গ্রে ডিভোর্স’-এ সূক্ষ্ম ভাবনাচিন্তার কোনও জায়গা নেই। দীর্ঘ দাম্পত্যজীবন পেরিয়ে আসা স্বামী-স্ত্রীর চুলে যখন ধূসর রং ধরতে শুরু করেছে, যখন তাঁরা পঞ্চাশের আশপাশ বা তারও বেশি, তখন যদি তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, বিচ্ছেদের পথে হাঁটবেন, যে যার ভবিষ্যৎ নিজের মতো বুঝে নেবেন, চুলে পাক ধরা সেই দুই ‘পরিণতবয়সি’র বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্তই হল ‘গ্রে ডিভোর্স’। মঙ্গলবার রাতেই ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে ইতি টানার ঘোষণা করেছেন এআর রহমান। সুরকার এখন ৫৭। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু সবে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে ‘গ্রে ডিভোর্স’ নিয়ে। অনেকেই বুঝতে চাইছেন, প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছে পরস্পরের থেকে আলাদা হতে চাওয়া কি এখন একটা ‘ট্রেন্ড’?

প্রৌঢ় বয়সে সম্পর্কে ইতি টেনেছিলেন মাইক্রোসফ্‌ট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। অ্যামাজ়নের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও ২৬ বছরের দাম্পত্যে ইতি টেনেছিলেন ৫৫ বছর বয়সে। হলিউড অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান, টম ক্রুজ়, ব্র্যাড পিট— সবাই এক অর্থে গ্রে ডিভোর্সি। আবার বলিউডে হৃত্বিক রোশন-সুসান খান, আমির খান-কিরণ রাও, আরবাজ় খান-মালাইকা অরোরার উদাহরণও রয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনা যে সম্পর্কের ভাঙন নিয়ে, সেই অভিষেক বচ্চন আর ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের সম্পর্কে ইতি পড়লে তাঁরাও একই তালিকায় নাম লেখাবেন। যে তালিকায় ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়ে ফেলেছেন সুরকার রহমান এবং সায়রা। তাঁদের বিচ্ছেদ নিয়ে ইতিমধ্যে হ্যাশট্যাগও তৈরি হয়েছে। তৈরি করেছেন স্বয়ং রহমানই। তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে যে পোস্টে বিচ্ছেদের খবর দেওয়া হয়েছে, সেখানেই দেওয়া হয়েছে বিচ্ছেদের হ্যাশট্যাগ। তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হলেও ‘#এআরআরসায়রাব্রেকআপ’ ট্রেন্ডও করতে শুরু করেছে সমাজমাধ্যমে!

প্রৌঢ়ত্বের সীমায় দাঁড়িয়ে সম্পর্কে ইতি টেনেছেন আমির খান এবং কিরণ রাও।

প্রৌঢ়ত্বের সীমায় দাঁড়িয়ে সম্পর্কে ইতি টেনেছেন আমির খান এবং কিরণ রাও। ছবি: সংগৃহীত।

প্রকাশ্য আলোচনা-সমালোচনাও চলছে। কেউ বলছেন, ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। তাদের মানুষ করার গুরুদায়িত্ব আর কাঁধে নেই। এখন দু’জন আলাদা হতে চাইছেন, নিশ্চয়ই নিজেদের মতো করে ভাল থাকতে পারবেন ভেবেই। তা নিয়ে কার কী বলার থাকতে পারে। আবার কেউ প্রশ্নও তুলছেন, শেষ বয়সের একাকিত্ব কাটিয়ে একসঙ্গে পরস্পরের সঙ্গে থাকতে পারার জন্যই তো সম্পর্ক। তাকে কি এত সহজে ভেঙে দেওয়া যায়? তা-ও আবার এমন বয়সে পৌঁছে যেখানে হয়তো আরও একটা মানুষ নতুন করে সঙ্গী বা বন্ধু না-ও খুঁজে পেতে পারেন।

২০০৬ সালে সোহিনী সেনগুপ্ত (বাঁ দিকে) এবং গৌতম হালদারের (ডান দিকে) সম্পর্কে ইতি পড়ে। ২০১৩ সালে আবার বিয়ে করেন অভিনেত্রী।

২০০৬ সালে সোহিনী সেনগুপ্ত (বাঁ দিকে) এবং গৌতম হালদারের (ডান দিকে) সম্পর্কে ইতি পড়ে। ২০১৩ সালে আবার বিয়ে করেন অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত অবশ্য মনে করেন, আবেগের কোনও বয়স হয় না। একজন মানুষ কাকে ভালবাসবে, কাকে বাসবে না, তার সঙ্গে চুলে পাক ধরার কোনও সম্পর্ক নেই। সোহিনীর কথায়, ‘‘দুটো মানুষের মধ্যে প্রেম আর সম্মান থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সেটা যদি না থাকে, তা হলে সম্পর্ককে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া মুশকিল।’’ সোহিনীর জীবনেও বিচ্ছেদ এসেছে। পরিচালক গৌতম হালদারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাঙে ২০০৬ সালে। পরে ২০১৩ সালে আবার বিয়ে করেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রী বলছেন, ‘‘সুখের সংজ্ঞা সবার কাছে সমান নয়। কেউ হয়তো মনে করেন ভালবাসা থাক বা না থাক তাঁর স্বামী চিরকাল পাশে থেকে খেয়াল রাখবেন, এতেই ভাল থাকবেন। আবার কারও মনে হতে পারে স্ত্রী শেষ জীবনে সেবা করবেন। কিন্তু আমার মতে, একে অপরকে ঘৃণা করছি অথচ একসঙ্গে থাকছি, শুধু বিয়ে করেছিলাম বলেই— সেটা না করাই ভাল। ব্যর্থ বিয়ের থেকে, সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা ভাল। তবে যদি প্রেম থাকে, তবে সেই ভাবনা মনেই আসবে না। হয়তো ঝগড়াঝাঁটি হবে, তা আবার মিটেও যাবে।’’

পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তের সম্পর্কের ভাঙন নিয়ে কম কাটাছেঁড়া হয়নি।

পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তের সম্পর্কের ভাঙন নিয়ে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত।

বিচ্ছেদ যখনই হোক না কেন, তা দু’জন মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। এমনই মনে করেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। তিনি আরও বলছেন, ‘‘বয়স হলে মানুষ আরও পরিণত হয়। হয়তো কম বয়সে হঠাৎ কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, পরিণত হওয়ার পর যখন নিজেকে চিনতে শিখলেন, তখন মনে হল, যে সঙ্গ আশা করেছিলেন, তা পাচ্ছেন না। তখন চাইলে তাঁরা আলাদা হতেই পারেন। সমাজের কথা ভেবে জোর করে একসঙ্গে থাকার কোনও মানে হয় না।’’ তথাগতও বিচ্ছেদ দেখেছেন। তাঁর সঙ্গে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তের সম্পর্কের ভাঙন নিয়ে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছে রহমানের বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে তথাগতের মত, ‘‘রহমান কী করছেন, তা নিয়ে আলোচনা করার আমরা কেউ নই। আমরা বড়জোর ভাবতে পারি, যেটা ভেবে আলাদা হচ্ছেন দু’জন, সেই লক্ষ্য বা অভীষ্ট যেন পূরণ হয়। অনেক সময়েই দুটো মানুষ ভাবেন, আলাদা হলে ভাল থাকবেন। কিন্তু সব সময়ে সেটা হয়ও না! ওঁদের ক্ষেত্রে তা যেন না হয়।’’

রহমানের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের কারণ স্পষ্ট কারণ কী, তা স্পষ্ট করেননি সুরকার।

রহমানের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের কারণ স্পষ্ট কারণ কী, তা স্পষ্ট করেননি সুরকার। ছবি: সংগৃহীত।

কিন্তু দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন পেরিয়ে প্রৌঢ় বয়সে পৌঁছে বিচ্ছেদের কথা কেন ভাবছেন মানুষ? কেন হচ্ছে গ্রে ডিভোর্স? মনোবিদেরা বলছেন, যাঁদের সন্তানেরা বড় হয়েছে, হয়তো স্বনির্ভরও হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে একটা ‘সিনড্রোম’ কাজ করে। যার নাম ‘এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম’। ছেলেমেয়েরা যখন বাবা-মায়ের থেকে দূরে থাকতে শুরু করে, তখনই তাঁদের মধ্যে একটা শূন্যতা তৈরি হয়। আবার একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বিবাহিত জীবন নিয়ে দীর্ঘ দিনের অসন্তুষ্টি ছিলই। কিন্তু সমাজের কথা ভেবে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেননি। এখন যখন বিচ্ছেদকে অনেক সহজ ভাবে মেনে নিচ্ছে সমাজ, তখন তাঁরা মনে সাহস এনে পথ আলাদা করার কথা ভাবছেন। স্বামী-স্ত্রীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল না হওয়াটাও গ্রে ডিভোর্সের কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

রহমনের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের কারণ কী, তা স্পষ্ট করেননি সুরকার। তবে রহমান আর সায়রার মাখোমাখো প্রেম ছিল, তা-ও শোনা যায়নি কখনও। এক সাক্ষাৎকারে রহমান বরং বলেছিলেন, ‘‘বিয়ের আগে সায়রা খুবই শান্ত ছিল। বিয়ের পর শান্ত ভাব কোথাও একটা উধাও হয়ে যায়।’’ সায়রাকে বিয়ে করে প্রথমে মানিয়ে-গুছিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন রহমান। পুরনো সাক্ষাৎকারে রহমান বলেছিলেন, ‘‘আমার এবং সায়রার পরিবারের আচার-সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তাই বিয়ের পর গোড়ার দিকে মানিয়ে নিতে একটু তো সমস্যা হয়েছিলই। তা ছাড়া, আমার প্রতি মায়ের প্রবল অধিকারবোধও কাজ করত।’’ পরে অবশ্য রহমানের প্রথম সন্তানের জন্মের পরে সেই পরিস্থিতি বদলায়। মঙ্গলবার রহমানের বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ্যে আসার রহমানের আইনজীবী একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘ওঁরা একে অপরকে ভালবাসেন। কিন্তু ওঁদের সম্পর্কে নানা মানসিক টানাপড়েন চলছিল। মানসিক দূরত্বের কারণেই ওঁরা দূরে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

তবে রহমানের বিবাহবিচ্ছেদের কথা ছড়িয়ে পড়তেই বেশি বয়সে ঘর ভাঙার প্রসঙ্গ নতুন করে উঠে এসেছে। তারকার সংসারে ভাঙন ধরা কি আসলে বৃহত্তর বদলেরই একটি অংশ? প্রশ্ন থেকেই যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

A. R. Rahman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy