দুরন্ত: ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে এসে বিরাটের ক্যাচ। আউট কুইন্টন ডি কক। এএফপি
ফিটনেস এক জনকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে, তার আরও একটা প্রমাণ পেলাম বুধবার। মোহালিতে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। দুটো অবিশ্বাস্য ক্যাচ দেখার পরে। প্রথমটা বিরাট কোহালির। দ্বিতীয়টা ডেভিড মিলারের। বিরাট ধরল বাঁ-হাতে, মিলার ডান-হাতে। দু’জনেরই যেটা দুর্বল হাত বলে ধরে নেওয়া হয়।
শুধু ক্যাচ ধরাই নয়। বুধবারের মোহালি বিরাটময় হয়ে থাকল অধিনায়কের রাজকীয় ব্যাটিংয়েও। দিনের সেরা শটটাও পাওয়া গেল বিরাটের ব্যাট থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার কাগিসো রাবাডাকে ফ্লিক করে মারা একটা ছয়। লেগস্টাম্পের ওপর বলটা বিরাট (৫২ বলে ৭২, চারটে চার, তিনটি ছয়) হেলায় কব্জির মোচড়ে গ্যালারিতে ফেলে দিল। দেখে মনে হচ্ছিল, বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করছে বিরাট। অধিনায়কের দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচ উইকেটে ১৪৯ রান এক ওভার বাকি থাকতে তিন উইকেট হারিয়ে তুলে নিল ভারত।
বছর তিনেক আগে এই মোহালিতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অসাধারণ একটা ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিল বিরাট। সেই উৎসবের রাত যেন আবার ফিরে এল বিরাট-ব্যাটে। অবশ্য বিরাট ব্যাট হাতে ম্যাজিক দেখানোর আগে চমকে দিয়েছিল ওর ক্যাচটা। উইকেটে জমে যাওয়া কুইন্টন ডি কক বড় শট খেলার চেষ্টায় মিস হিট করে। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে মিডঅফে দাঁড়ানো বিরাট প্রায় ১০-১২ গজ দৌড়ে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁ-হাতে ক্যাচটা তালুবন্দি করল। মারাত্মক ক্ষিপ্র আর ফিট বলেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এই দূরত্ব পার করে, শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে ক্যাচটা নিতে পারল বিরাট। ঠিক একই রকম ভাবে লংঅনে (বাঁ-হাতি ধওয়নের ক্ষেত্রে) শরীর ছুড়ে ক্যাচটা ধরে নেয় মিলার। বিরাটের ক্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে রান তোলার গতি থামিয়ে দিয়েছিল। মিলারের ক্যাচ সত্ত্বেও ভারতের সিরিজে ১-০ এগিয়ে যেতে সমস্যা হয়নি।
রান তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা শুরুতে ফিরে গেলেও ধওয়ন (৪০) খারাপ খেলছিল না। এ দিন দেখলাম ও জার্সি নম্বর বদলে নেমেছে। আগে ২৫ নম্বর পরে খেলত, এ দিন পরল ৪২। নতুন জার্সিতে কিন্তু ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিল ধওয়ন।
আরও একটা ব্যাপার বেশ ভাল লাগল। যার জন্য আমি হেড কোচ রবি শাস্ত্রী আর বোলিং কোচ বি অরুণকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ভারতীয় বোলাররা এ দিন কোনও ‘চ্যারিটি বল’ করেনি। যার মানে হল, কোনও নো বল বা ওয়াইড বল হয়নি। এই ম্যাচে ভারতের বোলিং আক্রমণে বেশ কয়েক জন তরুণ মুখ ছিল। যেমন দীপক চাহার, সাইনি, ওয়াংশিটন সুন্দর। তাদের কাছ থেকে এতটা শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং কিন্তু যথেষ্ট প্রশংসনীয়।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে আমার সেরা লেগেছে দীপককে। শুধু চার ওভারে ২২ রান দিয়ে দু’উইকেট নিয়েছে বলেই নয়, দীপক কিন্তু দারুণ উন্নতি করেছে গত কয়েক মাসে। গতি পরিবর্তনটা খুব ভাল ভাবে করছে। ওর স্লোয়ার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। সুইংটা তো আছেই। নাকল বলটাও ভাল করছে। এমনকি পুরনো বলে ডেথ ওভারেও ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখে গেল।
মোহালির এই ম্যাচটা মনে থেকে যাবে অন্য একটা কারণেও। এই ম্যাচের পরেই অবসর নিয়ে নিচ্ছেন ভারতীয় বোর্ডের প্রধান পিচ কিউরেটর দলজিৎ সিংহ। শেষ ম্যাচেও কিন্তু কামাল করে দিলেন দলজিৎদা। একেবারে আদর্শ টি-টোয়েন্টি উইকেট বানিয়ে। স্পিনারদের বল ঘোরেনি। বল সুন্দর ভাবে ব্যাটে এসেছে। স্ট্রোক খেলতে সমস্যা হয়নি। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার দেড়শোর কমে আটকে যাওয়াটা ওদের ব্যাটিংয়ের অনভিজ্ঞতাই ফুটিয়ে তোলে।
স্কোরকার্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৯-৫ (২০)
ভারত ১৫১-৩ (১৯)
দক্ষিণ আফ্রিকা
হেনড্রিক্স ক সুন্দর বো দীপক ৬•১১
ডি কক ক কোহালি বো সাইনি ৫২•৩৭
বাভুমা ক জাডেজা বো দীপক ৪৯•৪৩
ডুসোঁ ক ও বো জাডেজা ১•২
মিলার বো হার্দিক ১৮•১৫
প্রেটোরিয়াস ন. আ. ১০•৭
ফেহলুকওয়েও ন. আ. ৮•৫
অতিরিক্ত ৫ মোট ১৪৯-৫ (২০)
পতন: ১-৩১ (হেনড্রিক্স, ৩.৫), ২-৮৮ (ডি কক, ১১.২), ৩-৯০ (ডুসোঁ, ১২.১), ৪-১২৬ (বাভুমা, ১৭.১), ৫-১২৯ (মিলার, ১৮.১)।
বোলিং: ওয়াশিংটন সুন্দর ৩-০-১৯-০, দীপক চাহার ৪-০-২২-২, নবদীপ সাইনি ৪-০-৩৪-১, রবীন্দ্র জাডেজা ৪-০-৩১-১, হার্দিক পাণ্ড্য ৪-০-৩১-১, ক্রুণাল পাণ্ড্য ১-০-৭-০।
ভারত
রোহিত এলবিডব্লিউ বো ফেহলুকওয়েও ১২•১২
ধওয়ন ক মিলার বো শামসি ৪০•৩১
কোহালি ন. আ. ৭২•৫২
ঋষভ ক শামসি বো ফোর্তান ৪•৫
শ্রেয়স ন. আ. ১৬•১৪
অতিরিক্ত ৭ মোট ১৫১-৩ (১৯)
পতন: ১-৩৩ (রোহিত, ৩.৫), ২-৯৪ (ধওয়ন, ১১.৪), ৩-১০৪ (ঋষভ, ১৩.৪)।
বোলিং: কাগিসো রাবাডা ৩-০-২৪-০, অনরিখ নর্ৎজে ৩-০-২৭-০, আন্দিলে ফেহলুকওয়েও ৩-০-২০-১, ডোয়েন প্রেটোরিয়াস ৩-০-২৭-০, তাব্রাইজ় শামসি ৩-০-১৯-১, বিয়র্ন ফোর্তান ৪-০-৩২-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy