বিরাট কোহালি না জো রুট, কে এগিয়ে? ফাইল চিত্র
চেন্নাইয়ে জো রুটের ২১৮ রান। ৫৩৬ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে খেললেন ৩৭৭ বল। ১৯টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারি দিয়ে সাজানো ছিল তাঁর এই ম্যারাথন ইনিংস। এই দীর্ঘ ইনিংস গড়তে প্রথাগত সুইপ তো মেরেইছেন, সঙ্গে ছিল অজস্র রিভার্স সুইপ ও স্লগ সুইপ। এমন মণিমাণিক্য দিয়ে সাজানো ইনিংসের পর দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। এক, ভারতে খেলে যাওয়া বিদেশিদের মধ্যে তিনিই কি সেরা? দুই, আধুনিক ক্রিকেটে এখন সেরা চার বিরাট কোহালি, কেন উইলিয়ামসন, জো রুট ও স্টিভ স্মিথের মধ্যে কে এগিয়ে? এই বিষয়ে আনন্দবাজার ডিজিটাল ওয়াসিম জাফর, অশোক মলহোত্র, অমল মজুমদার, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত প্রাক্তনদের মতামত জানতে চেয়েছিল। একাঝাঁক প্রাক্তনদের মতামত পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
ওয়াসিম জাফর: রুট টেস্ট কেরিয়ারের সেরা ফর্মে আছে, এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে জো রুট ভবিষ্যতে সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড ভাঙতে পারবে কিনা, সেই বিষয়ে আলোচনা আপাতত তোলা থাক। এমনকী সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা ‘সেরা চার’ নিয়েও আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। কারণ, যে চার তারকা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে এই মুহূর্তে ক্রিকেট দুনিয়া উত্তাল, তদের প্রত্যেকের আমি বড় ভক্ত। কারণ, ওরা সবাই এই নিজের দেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের আনন্দ দিচ্ছে। এটাই তো বড় প্রাপ্তি। চেন্নাইতে এই পরিবেশে আমি খেলেছি। ওখানে প্রচন্ড গরম। এমন কঠিন পরিবেশে একজন বিদেশি ব্যাটসম্যানের বড় রান করা মোটেও সোজা নয়। তবে ওঁর ডিফেন্স ও বল খেলার সময় মাথার অবস্থান সঠিক থাকার জন্যই এই সাফল্য পেল।
অশোক মলহোত্র: রুটের ব্যাটিং দেখা চোখের শান্তি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ১৮৬-তে রান আউট না হলে রুট দ্বি-শতরানের হ্যাটট্রিক করতে পারত। দুই দিন ধরে রুটের এই ইনিংস দেখে অ্যাণ্ডি ফ্লাওয়ার ও জিমি অ্যাডামসের ব্যাটিং মনে পড়ে যাচ্ছিল। শুধু ভারতীয় স্পিনার নয়, উপমহাদেশে স্পিনারদের বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে হলে সুইপ শটই হল মুল অস্ত্র। সেটা জো রুট জানে। অতীত সফরগুলো ওকে এই শিক্ষা দিয়েছে। তাই রুট লাগাতার সুইপ ও রিভার্স সুইপ করে আমাদের স্পিনারদের লাইন-লেংথ বিগড়ে দিল। শাহবাজ ও সুন্দর অনেক খাটো বল করেছে। তবে অশ্বিনকে দেখে সবচেয়ে অবাক হলাম। ও রুটের গেম প্ল্যান ধরতেই পারেনি। আর একটা দিক হল, যখন কোনও ব্যাটসম্যান লাগাতার সুইপ করে, তখন বিপক্ষের অধিনায়ক ঠিকঠাক ভাবে ফিল্ডারদের সাজাতে পারে না। এটাও ইংল্যান্ড ও রুটের কাছে রান করার বড় সুবিধা হয়ে গেল। তাই আমার মতে রুট হল ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান, যে এখানে এসে দাপট দেখিয়ে গেল। তবে সেরা বিদেশি ব্যাটসম্যান কখনই নয়। আমার মতে ভারতে আসা সেরা বিদেশি এখনও ভিভ রিচার্ডস। আর এখনকার সেরা চারের কথা বলা হলে বিরাট, উইলিয়ামসন, স্মিথ কিন্তু রুটের থেকে অনেক এগিয়ে। গত ১০টা ইনিংসের বিচার করা আমার মতে সঠিক নয়। কারণ, রুট গত তিন টেস্টে লাগাতার রান করলেও, তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাবে ও কেরিয়ারের অনেকবার অর্ধ শতরান করে উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছে। তাই আমার মতে আধুনিক ক্রিকেটে বিরাট সবার উপরে থাকবে।
অমল মজুমদার: শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য সবাই রুটের তারিফ করছে। স্পিনারদের বিরুদ্ধে সুইপ মারতে পারায় গোটা ক্রিকেট দুনিয়া রুটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে এই সাফল্য কিন্তু রাতারাতি আসেনি। রুট ইয়র্কশায়ারে খেলে বড় হয়েছে। ইংল্যান্ডের অনান্য কাউন্টি দলের তুলনায় ইয়র্কশায়ারের পিচে বল বেশি ঘোরে। রুট সেই ছোটবেলা থেকে সতীর্থ স্পিনারদের নিয়ে অনুশীলন করে যেত। আন্তর্জাতিক সফর না থাকলে রুট এখনও সেই অভ্যাস বজায় রেখেছে। এর সুফল তো মিলবেই। আমার মতে ভারতে আসা সেরা বিদেশিদের মধ্যে রুট অবশ্যই থাকবে, তবে সবার শীর্ষে নয়। শুধু ভারত নয়, উপমহাদেশে ম্যাথু হেডেনের সাফল্য অনেক বেশি। তবে যদি এখনকার সেরা চারের বিচার করেন, তাহলে কিন্তু বিরাট সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে। কারণ আমি এই চার তারকার সাফল্য শুধু টেস্ট দিয়ে বিচার করব না।
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়: অবিশ্বাস্য ইনিংস দেখলাম। কারণ উপমহাদেশে এসে দ্বিশতরান করা মোটেও সোজা নয়। এই উচ্চতায় যাওয়ার জন্য শুধু টেকনিক থাকলেই চলবে না। একইসঙ্গে ধৈর্য ও ফিটনেস বজায় রাখতে হবে। সেগুলো আছে বলেই রুট ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে। ইংল্যান্ডের অনেক ব্যাটসম্যানকে দেখেছি সামনের পায়ে দারুণ খেলত, তবে রুট কিন্তু পিছনের পায়ে প্রচন্ড শক্তিশালী। শট বাছাই অনবদ্য। যদিও উপমহাদেশে এসে খেলে যাওয়া বিদেশিদের মধ্যে রুটকে এখনই সেরা বলতে রাজি নই। তবে ভারতে খেলে যাওয়া সেরা ইংরেজ ব্যাটসম্যানের মধ্যে রুট শীর্ষে থাকবে। আর যদি সেরা চারের কথা বলেন, তাহলে আমার মতে তুলনা টেনে লাভ নেই। সবাই নিজের দিনে সেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy