বাবা এম সুন্দরের সঙ্গে ওয়াশিংটন সুন্দর। ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
সিডনি টেস্টে রবিচন্দ্রন অশ্বিন চোট না পেলে ব্রিসবেন টেস্টে ওঁর অভিষেক হওয়ার সুযোগই আসত না। ক্রিকেট আইডলের বদলি হিসেবে টেস্ট অভিষেক! এমন ঘটনা সত্যি বিরল। সিনিয়র দাদা অশ্বিনেরই হাত থেকেই আবার ‘টেস্ট ক্যাপ’ পাওয়া। তাঁরই পরামর্শ মেনে স্টিভ স্মিথকে প্যাভিলিয়নে ফেরানো। বোলিং ফিগার ৮৯ রানে ৩ উইকেট। এ যেন স্বপ্নের টেস্ট অভিষেক।
ওঁর আইডল অশ্বিন সিডনি টেস্টে ব্যাট হাতে হনুমা বিহারীকে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। শিষ্য ওয়াশিংটন সুন্দর গুরুর দেখানো পথেই হাঁটলেন। শুধু হাঁটলেনই না, অজি বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করে ভারতকে টেস্ট ম্যাচেও ফেরালেন। ১৮৬ রানে ৬ উইকেট চলে যাওয়ার পর শার্দুলকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা লড়াই শুরু করেন তামিলনাড়ুর এই তরুণ। সপ্তম উইকেটে জুড়লেন ১২৩ রান। নির্ণায়ক টেস্টে কামব্যাক ঘটালো ভারতীয় দল। নিজে থামলেন ৬২ রানে। খেললেন ১১৪ বল। ইনিংস ৭টা বাউন্ডারি ও ১টা ওভার বাউন্ডারি দিয়ে সাজানো ছিল। এ যেন সত্যি স্বপ্নের টেস্ট অভিষেক।
সুন্দরের বয়স তখন ১৫। একটি ক্লাব ম্যাচে এই তরুণকে প্রথমবার দেখেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ওপেনার তথা ভারতের সিনিয়র মহিলা দলের হেড কোচ ডব্লিউ ভি রমন। আনন্দবাজার ডিজিটালকে টেলিফোনে বললেন, ‘‘একটা সময় পুরো চেন্নাই জুড়ে দীনেশ কার্তিককে নিয়ে এমন আলোচনা হত। আমাদের ‘ওয়াশি’ সেই সোনালী দিন আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। ওর ব্যাটিং দেখা চোখের শান্তি। টেস্ট ক্রিকেটে ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে এমন দাপট সচরাচর দেখা যায় না। ও স্পেশ্যাল ট্যালেন্ট।’’
আরও পড়ুন: সচিনের ১০ নম্বর জার্সি ছেড়ে নিজের ৫৪ নম্বর, শার্দুলই এখন মধ্যমণি
চলতি টেস্টে ওয়াশিংটন অভিষেক ঘটালেও একদিনের ক্রিকেট ও টি-টিয়েন্টি জাতীয় দলের সদস্য সেই ২০১৭ সাল থেকে। তাছাড়া আইপিএলে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট থেকে এখন বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের নিয়মিত সদস্য। এটাই কি সাফল্যের কারণ? বাংলার প্রাক্তন কোচ রমনের জবাব, ‘‘সাদা বলের ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার পরেও অনেকে টেস্ট ক্রিকেটে পারফর্ম করতে পারে না। লাল বলের ক্রিকেটে জাত চেনানো এত সোজা নয়। তবে ওর ব্যাটিং নিয়ে আমার কোনওদিন সন্দেহ ছিল না। কারণ, স্কুল ও ক্লাব ক্রিকেটে ‘ওয়াশি’ নিয়মিত ওপেনিং করত। তাই তো এমন বিশ্বসেরা পেস অ্যাটাকের বিরুদ্ধেও ডিফেন্স আগলে আক্রমণ করে গেল।’’
বাংলার প্রাক্তন কোচ তাঁর ছাত্রের প্রশংসা করলেও ওয়াশিংটনের বাবার আফসোস কিছুতেই মিটছে না। চেন্নাইয়ের বাড়ি থেকে এম সুন্দর বলছিলেন, ‘‘রোজ ওর সঙ্গে কথা হয়। গতকাল রাতেও বলল, ‘পাপা তুমি দেখো সুযোগ পেলেই সেঞ্চুরি করব’। সেই সুযোগও ওর কাছে এসে গিয়েছিল। ওয়াশি বড় শট নিতে পারে। সিরাজ ক্রিজে আসার পর ওর বড় শট মারা উচিত ছিল।’’
যদিও প্রিয় বোন শৈলজা সুন্দর ভাইয়ের এই অলরাউন্ড সাফল্যেই মজে আছেন। তিনি অবশ্য ‘ওয়াশি’-র টেস্ট অভিষেকের জন্য বাবাকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। বেশ আবেগ জড়ানো গলায় বলছিলেন, ‘‘নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ‘ওয়াশি’ ভিডিয়ো কল করতেই পাপা বলে ওঠে, ‘আমার মন বলছে তুই টেস্ট ম্যাচ খেলে ঘরে ফিরবি’। দেখুন সেটাই হল। ভাই অশ্বিনকে গুরু বলে মনে করে। আর গুরুর বদলি হিসেবেই টেস্ট অভিষেক!’’
স্টিভ স্মিথকে ফিরিয়ে অজি ব্যাটিংয়ে ভাঙ্গন ধরানো? না চাপের মুখে চুপসে না গিয়ে কাউন্টার অ্যাটাক? কোনটা মনের বেশি কাছের? সিনিয়র সুন্দর বলছেন, ‘‘দুটোই। কারণ, এমন দাপুটে পারফরম্যান্সের জন্যই তো আমরা ফের বর্ডার-গাওস্কার ট্রফি জিততে পারি।’’
আক্ষরিক অর্থে স্বপ্নের টেস্ট অভিষেক।
আরও পড়ুন: শার্দুল, ওয়াশিংটনকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক সুনীল গাওস্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy