প্রত্যয়ী: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নামার আগে সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বে চলছে ভারতীয় দলের শেষ মুহূর্তের অনুশীলন। সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ দু’টি ম্যাচে তাঁর তিন গোল আছে। তাঁকে নিয়ে পড়শি দেশের কোচ থেকে সংবাদমাধ্যম, সবাই তটস্থ। অথচ সেই সুনীল ছেত্রীই সোমবার বলে দিলেন, ‘‘এখনকার ভারতীয় দল সুনীল ছেত্রী নির্ভর নয়। দলের ২৩ জন ফুটবলারের মধ্যে একজন। তবে আমি ভাগ্যবান যে, দলের অন্যদের চেয়ে একটু বেশি অভিজ্ঞ ও অধিনায়ক।’’
দেশের জার্সিতে সর্বকালের সেরা গোলদাতা। ১১২ ম্যাচে ৭২ গোল হয়ে গিয়েছে তাঁর। আজ, মঙ্গলবার উপচে পড়া যুবভারতী গোলের জন্য তাকিয়ে থাকবে তাঁর দিকে। ৭২ থেকে তাঁর গোল সংখ্যা ৭৩ হয় কি না, জানতে চাইলে যেন আরও টিম ম্যান হয়ে যান সুনীল। ‘‘আমি গোল করলাম কি করলাম না, সেটা বড় কথা নয়। খেলার মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মেই গোল কখনও করতে পারি, কখনও পারি না। গোল একটা সংখ্যা মাত্র। আমি সতীর্থদের মতো ম্যাচটা জিততে চাই। তিন পয়েন্ট পেতে চাই। কোনও ম্যাচ হেরে ফিরতে তাই না।’’ বলার পরে পাশে বসা কোচ ইগর স্তিমাচের দিকে তাকিয়ে হাসলেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার প্রাক্তন বিশ্বকাপার কোচ ঝুলে পড়া চোখের চশমাটা ঠিক করে নিয়ে পাল্টা হাসি ফিরিয়ে দিলেন তাঁর দলের অধিনায়ককে।
পাঁচ বছর আগে গোয়ার ফতোরদা স্টেডিয়ামে ফিফা ফ্রেন্ডলিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে জিততে পারেনি ভারত। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ২-২ গোলে। ব্লু টাইগার্সের হার বাঁচিয়েছিলেন সুনীল, জোড়া গোল করে। আট বছর পরে শহরে খেলতে আসা সুনীলের ভারতকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী। ভারতীয় দলের কোচ স্তিমাচ রাখঢাক না করেই বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা ফেভারিট এবং এটাই আমাদের চাপ। ছেলেদের সেই চাপ কাটানোর চেষ্টা করছি। যে কোনও ফুটবল ম্যাচেই একটা দল ফেভারিট হয়। কিন্তু ফেভারিট দল সব
সময় জেতে না।’’
ভারতীয় দলের ‘গোলমেশিন’ অবশ্য ম্যাচ জেতার অন্য অঙ্ক কষছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশ তো আপনাকে আটকানোর জন্য দু’তিনজনকে লাগাবে? বাংলার জামাই তখন একেবারেই জামাইষষ্ঠীর মেজাজে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘সেটা ভালই হবে। আমাকে যদি চার জন মিলে আটকানোর চেষ্টা করে, তা হলে খেলাটা ১০ বনাম ৬ হয়ে যাবে। গোল করার রাস্তা পেয়ে যাবে উদান্ত, আশিকরা। কাতার ম্যাচে আমি না থাকলেও বাকিরা দারুণ খেলেছিল। এটাই আমাদের দলের শক্তি। স্তিমাচ সেটা এনে দিয়েছেন।’’
টিকিটের হাহাকার। নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ম্যাচ নয়, দুই প্রধানের কোনও ফুটবলারও নেই স্তিমাচের দলে। তা সত্ত্বেও জাতীয় দলের ম্যাচ দেখতে পুরো শহর আজ স্টেডিয়ামমুখী হবে, এই দৃশ্য শেষ কবে দেখা গিয়েছে তা মনে করা যাচ্ছে না। জিকোর কোচিংয়ে ২০০৪-এ জাপান শহরে এসেছিল প্রাক-বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে। তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে এ বারের উন্মাদনা। ক্লাব অন্তপ্রাণ শহরে, স্টেডিয়ামের কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়েছে, টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন ভক্তরা, এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে সোমবারও। সেই ছবি দেখে লুকা মদ্রিচের দেশের প্রাক্তন কোচও কেমন যেন আবেগপ্রবণ। ভারতীয় ফুটবলের নতুন পথপ্রদর্শক সাংবাদিক সম্মেলনে এসেই বাংলায় যখন বলছেন, ‘‘নমস্কার, কেমন আছেন আপনারা, ভাল তো!’’ তখন দু’দেশের বঙ্গ মিডিয়া তো অবাকই। অবাক মনে হল হেসে ফেলা সুনীল ছেত্রীকেও। বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখানো স্তিমাচের গলা থেকে যখন বেরোয়, ‘‘মানুষ হিসেবে সুনীল অনবদ্য। ফুটবলের প্রতি ওর আবেগ পুরো দলকে উদ্বুদ্ধ করে। আমি মনে করি আমার চেয়ে ওকে বেশি দরকার এই দলের জন্য।’’ ছিপছিপে, মেদহীন, ছোট করে চুল ছেঁটে আসা সুনীলকে দেখা গেল কোচের
পাশে বসে নতমস্তকে।
কোচের সঙ্গে অধিনায়কের দুর্দান্ত রসায়ন যে নতুন এই ভারতের চালিকাশক্তি তা বোঝা যায়, যখন পঁয়ত্রিশ ছোঁয়া সুনীল বলে দেন, ‘‘স্তিমাচের কাছে নাম গুরুত্ব পায় না। আমাদের দলের সেরা শক্তি হল একাত্মতা। যে ভাল খেলবে, সেই সুযোগ পাবে। এই পরিবর্তনটা ঘটেছে আমাদের দলে।’’ কলকাতায় দুই প্রধান এবং ছোট দলে খেলে গিয়েছেন সুনীল। ডার্বি খেলেছেন। দিল্লির ছেলে হলেও বাংলা বলেন সাবলীল ভাবে। কিন্তু বাঙালির মতো যে কোনও বিষয় নিয়েই আবেগে ভেসে যাওয়ার বান্দা নন তিনি। যে জন্যই তাঁর মুখ থেকে বেরোয়, ‘‘এটা ঠিক যে আমি ছাড়া কেউই কখনও সত্তর হাজার দর্শকের সামনে খেলেনি। কলকাতার মতো ফুটবল পাগল জনতা দেশের কোথাও নেই। খেলতে নামলে অন্য অনুভূতি হয়। তবে সেটা আমি এখানে খেলে গিয়েছি বলে নয়, এত দর্শকের সামনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি বলেই।’’
সন্দেশ জিঙ্ঘান চোটের জন্য খেলতে পারছেন না। স্তিমাচের দলের কাছে এটা বড় ধাক্কা। তাঁর জায়গায় আনাস এথানোডিকা খেললেও খেলতে পারেন ইঙ্গিত দিয়েছেন কোচ। বললেন, ‘‘বাংলাদেশ যথেষ্ট শক্তিশালী দল। ওরা প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে। কাতারের কাছে হারলেও ওরা জিততেও পারত। ফুটবলে কোনও আন্ডারডগ হয় না। গত চোদ্দো মাসে নতুন কোচের কোচিংয়ে ১৩ ম্যাচের
সাতটিতে জিতেছে।’’
সুনীলময় যুবভারতী থেকে স্তিমাচ আলো ছড়িয়ে ফেরার স্বপ্ন দেখলেও, তিনি যে আত্মতুষ্ট নন তা কিন্তু স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy