হর্ষ-বিষাদ: রুপো দিলেন নীরজ, শূন্য হাতে ফিরলেন সিন্ধু। —ফাইল চিত্র।
প্যারিসের সময় রাত এগারোটা। আইফেল টাওয়ারের সেই বিখ্যাত স্পার্কলিং শুরু হল। যা দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন।
আশেপাশে উত্তেজিত সব আলোচনা শুনছিলাম যে, আমেরিকার শাসন থামিয়ে চিন পদক তালিকায় শীর্ষে উঠে যাবে কি না। স্তাদ দে ফ্রান্সে নোয়া লাইলসদের একশো মিটার দৌড়ের মতোই ফটো ফিনিশের দিকে তখন এগোচ্ছিল আমেরিকা বনাম চিন পদকের দ্বৈরথ। এমনকি দু’দেশের সাংবাদিকেরা তাতে গভীর ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। এক-একটা ইভেন্টের খবর আসছে আর জিতলে তাঁরা লাফাচ্ছেন, হেরে গেলেই চুপসে যাচ্ছেন।
ভারতীয় হলে আইফেল টাওয়ারের ঝলমলানির মধ্যে কাঁটার মতো বিঁধবে অন্য উপলব্ধি। নিজেদের দেশের অভিযান তো শেষ লগ্ন পর্যন্ত পৌঁছলই না। গেমসের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ছিল রবিবার রাতে। সকাল পর্যন্তও একাধিক ইভেন্ট হল। শেষ দিনে ১৩টি সোনার নিষ্পত্তি হওয়ার ছিল। কিন্তু ভারতের অলিম্পিক্স যাত্রা আঁধারে ডুব দিয়েছে শনিবার মাঝ দুপুরেই। টিমটিম করে জ্বলছিল একটা শেষ আশা যে, কুস্তিতে ৭৬ কেজি বিভাগে রীতিকা হুডা যদি ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে পৌঁছতে পারেন। কিরঘিজ়স্তানের আইপেরি মেদেত কিজির কাছে হেরেছিলেন রীতিকা। নিয়ম অনুযায়ী, যদি আইপেরি ফাইনালে যেতেন, রেপেশাজ ব্রোঞ্জ পদকের জন্য লড়াইয়ের সুযোগ পেতেন ভারতীয় কুস্তিগির। কিন্তু আমেরিকার কেনেডি ব্লেডসের কাছে হেরে যান কিরঘিজ়স্তানের প্রতিযোগী। তখনই শেষ হয়ে যায় ভারতের
প্যারিস পরিক্রমা।
দেশ থেকে রওনা হওয়ার সময় সদর্পে কর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, এ বারে রেকর্ড পদক নিয়ে ফিরবে দল। দুই অঙ্কের সংখ্যা তো দূর অস্ত্, টোকিয়োয় গত অলিম্পিক্সে জেতা সাত পদককেও স্পর্শ করা গেল না। লন্ডন অলিম্পিক্সে ভারত জিতেছিল ৬টি পদক। এ বারও তাই। সপ্তম পদক আসতে পারে যদি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত বিনেশ ফোগতের পক্ষে মামলার রায় দেয়। সেই রায় বেরোবে মঙ্গলবার। তত দিনে অলিম্পিক্সের সমাপ্তি অনুষ্ঠান সেরে সকলে বাড়ি ফিরে যাবেন। তখন না অপেক্ষা করবে কোনও পোডিয়াম, না বাজবে
জাতীয় সঙ্গীত।
বিনেশের পদক এলে সেই হইচইয়ে চাপা পড়ে যেতে পারে করুণ তথ্য যে, অন্তত ৬টি পদক হাতছাড়া করে ফিরছে ভারত। শেষ মুহূর্তে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার কারণে। নাকি আরও সরাসরি লেখা উচিত, ক্রিকেটের দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ‘চোক’ করে গেলেন তাঁরা? ভারতের অলিম্পিক্স ইতিহাস লিখতে বসলে চারের অভিশাপ বলে একটা আলাদা অধ্যায়ই রাখতে হবে। মিলখা সিংহ, পি টি উষা, জয়দীপ কর্মকার, দীপা কর্মকার। ব্রোঞ্জ পেতে পেতেও শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা যাঁদের সঙ্গী হয়েছে। এ বারের গেমসে সেই চারের কাঁটায় রক্তাক্ত হওয়ার কাহিনি দেখা গেল সব চেয়ে বেশি। অর্জুন বাবুতা। লক্ষ্য সেন। মীরাবাই চানু। তিরন্দাজিতে অঙ্কিতা ভকত ও ধীরজ বোম্মাদেবরা। মিক্সড স্কিট ইভেন্টে অনন্তজিৎ সিংহ নারুকা ও মহেশ্বরী চৌহান। সবাই চতুর্থ। দু’টি পদক জিতে ইতিহাস স্পর্শ করা মনু ভাকের ২৫ মিটার পিস্তল বিভাগে চতুর্থ। যদি এঁরা সকলে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট না হতেন, হয়তো ১২টি পদক নিয়ে ফিরতে পারত ভারত। তখন কর্তাদের দুই অঙ্কের পদক আনার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হতে পারত।
কিন্তু কী হলে কী হত, তা ভেবে দেখার জন্য কে বসে আছে? এশিয়ান গেমসে একশো পদক পার করার স্লোগান বানানো হয়েছিল। সেই লক্ষ্য পূরণও করেন ভারতীয় প্রতিযোগীরা। কিন্তু প্যারিসে দুই অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছনোর স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। একটা সময় ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ে বলা হত, ‘দেশে বাঘ, বিদেশে বেড়াল’। সেই তকমা মুছে গিয়েছে। এখানে তো ‘এশিয়ান গেমসে বাঘ, অলিম্পিক্সে বেড়াল’, এটুকুও বলার উপায় নেই। চিন, জাপান কত এগিয়ে গিয়েছে। এক নম্বরে আমেরিকা। ৪০টি সোনা। মোট পদক ১২৬। দুইয়ে চিন। সোনা ৪০, মোট পদক ৯১। তিন নম্বরে জাপান। ২০টি সোনা, মোট পদক ৪৫। আমেরিকা মোট পদকের সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি। অলিম্পিক্সের পদক তালিকার ক্রমান্বয় তৈরির সময় যারা বেশি সোনা জেতে, তারা থাকবে সবার উপরে। এর পরে দেখা হবে রুপোর সংখ্যা। সবার শেষে ব্রোঞ্জ। নীরজ চোপড়ার দৌলতে ভারত টোকিয়োয় একটা সোনা জিতেছিল। এখানে তা-ও জোটেনি। সাকুল্যে ১টি রুপো (জ্যাভলিনে নীরজ) এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ নিয়ে দেশে ফিরছে। তাই পদক তালিকায় খালি চোখে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দূরবিন লাগবে দেখতে।
পদক তালিকায় এ বার ৮৪ পর্যন্ত র্যাঙ্কিং হয়েছে। মোট দেশ যদিও ২০৬। এর কারণ একই র্যাঙ্কিংয়ে একাধিক দেশ থাকতে পারে। যেমন সর্বশেষ ৮৪ র্যাঙ্কিংয়ে আছে ৮টি দেশ। প্রত্যেকে ১টি করে ব্রোঞ্জ জিতেছে। এই ৮৪ ক্রমান্বয়ে ভারতের স্থান হয়েছে ৭১-এ। পাকিস্তান মাত্র একটিই পদক জিতেছে। আর্শাদ নাদিমের জ্যাভলিনে সোনা। তবু তারা ভারতের উপরে, ৬২ নম্বরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দ্বীপ সেন্ট লুসিয়া। যার জনসংখ্যা দুই লক্ষও নয়। তারা পর্যন্ত ভারতে উপরে, ৫৫ নম্বরে। মেয়েদের ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছেন জুলিয়েন আলফ্রেড। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট দলের ওপেনার জনসন চার্লসের নাম ভারতে অনেকে শুনে থাকবেন। জুলিয়েন সেই একই স্কুলে পড়তেন। সিমোন বাইলস যেদিন বার্সি এরিনায় ভল্টে সোনা জিতলেন, তার কিছু ক্ষণ আগে পুরুষদের ফ্লোর এক্সারসাইজ় ইভেন্ট হল। কারা সোনা জিতল? না, ফিলিপিন্স। টোকিয়োতে যারা প্রথম সোনা জিতেছিল। প্যারিসে জিতল দু’টি সোনা। বোৎসোয়ানা আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তের একটি দেশ। অনেকে এর আগে হয়তো নামই শোনেনি। নামিবিয়া, জ়াম্বিয়ার কাছাকাছি। যেখানে মেরেকেটে ২৪ লক্ষ লোক বাস করে। সেই দেশের লেটসিলে টেবোগো এই অলিম্পিক্সের অন্যতম সেরা অঘটন ঘটিয়ে দিলেন। ২০০ মিটার দৌড়ে নোয়া লাইলসকে হারিয়ে সোনা জিতলেন তিনি। এ ছাড়াও পুরুষদের ৪x৪০০ মিটার রিলেতে রুপো জেতে বোৎসোয়ানা। এই রিলে ইভেন্টে ভারত দারুণ কিছু করতে পারে গেমসের আগে খুব বাজনা বেজেছিল। প্যারিসে এসে বিসর্জনের বাজনা ছাড়া আর কিছু শোনা যায়নি। ১৪০ কোটির ভারতের নীরজ চোপড়ার রুপো বাদ দিলে অ্যাথলেটিক্সে মুখ লুকনোর জায়গাও নেই।
মিলখা সিংহ, পি টি উষাদের পদক নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হলেও তাঁরা ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আশির দশকে অঞ্জু ববি জর্জ পর্যন্ত ঠিকঠাক চলছিল। আর এখন? ভারত এ বার প্যারিসে ১১৭ জন প্রতিযোগী পাঠিয়েছিল। এত বড় দল আর কখনও পাঠানো হয়নি। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি প্রতিযোগী ছিল কোন ইভেন্টে? শুটিংয়ের কথা সবাই বলছিল। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। সব চেয়ে বড় দল ছিল অ্যাথলেটিক্সেই। মনু ভাকের, সরবজ্যোৎ সিংহদের শুটিং দলে ছিল ২১ জন। অ্যাথলেটিক্সে ২৯ জন। শুটিং তিনটি পদক এনেছে। একটা সময়ে যা ছিল রাজা-রাজড়াদের শখের খেলা, যা ছিল উপেক্ষিত, তা এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আর অ্যাথলেটিক্সে সোনপত থেকে নীরজ চোপড়ার উত্থান বাদ দিলে প্রাপ্তি শুধুই হতাশা। প্যারিস অলিম্পিক্সে মোট ৪৭টি ফাইনাল হয়েছে অ্যাথলেটিক্সে। ভারত যোগ্যতা অর্জন করেছে শুধু দুটি ফাইনালে। জ্যাভলিনে নীরজ চোপড়া এবং ৩০০০ মিটার স্টিপলচেজ়ে অবিনাশ সাবলে। জাতীয় রেকর্ডের অধিকারী অবিনাশ ফাইনালে উঠলেও শেষ করেন একাদশতম হিসেবে। শুধু সব চেয়ে বড় দলই নয়, ২০২১-এ টোকিয়োর পর থেকে তিন বছরের অলিম্পিক্স প্রকল্পে সব চেয়ে বেশি লগ্নি করা হয়েছে অ্যাথলেটিক্সে। ৯৬.০৮ কোটি টাকা। ব্যাডমিন্টনে খরচ করা হয়েছে ৭২.০৩ কোটি। বক্সিংয়ে ৬০.৯৩ কোটি। তিরন্দাজিতে ৩৯.১৮ কোটি। নীরজ চোপড়ার রুপো বাদ দিলে এর কোনওটা একটা পদকও দেয়নি। ভারোত্তোলনে খরচ হয়েছে ২৭ কোটি। কোনও পদক নেই। সাঁতারে ৩.৯০ কোটি। পদকের আশেপাশেও যায়নি ভারত। প্যারিসে ৩৫টি ফাইনাল হয়েছে সাঁতারের ইভেন্টে। ভারত যোগ্যতা অর্জন করেছে মাত্র দু’টিতে। তুলনায় হকি, যা অলিম্পিক্সের ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি গৌরব এনেছে দেশের জন্য, তাতে ৪১ কোটি মতো খরচ করে মুনাফা মিলেছে অনেক বেশি। হকি পর-পর দু’বার পদক জিতে ধ্যানচাঁদের দেশকে ফের আন্তর্জাতিক মঞ্চে জাগিয়ে তুলেছে।
অলিম্পিক্সে সব চেয়ে জনপ্রিয় ইভেন্টগুলির মধ্যে প্রথম তিনে থাকবে অ্যাথলেটিক্স, জিমন্যাস্টিক্স ও সাঁতার। সব চেয়ে বেশি পদকও আছে এগুলোতে। চিনের এমন দুর্ধর্ষ অগ্রগতির একটা বড় কারণ, কোন ইভেন্টগুলিতে বেশি পদক, তার উপরে নজর দিয়েছে তারা। সেই সব ইভেন্টের উপরে জোর দাও, ভাল করতে পারলে বেশি পদক আসবে। ভারতের হয়ে এই তিনটি ইভেন্টে মশাল জ্বালিয়ে রেখেছেন একমাত্র নীরজ চোপড়া। কথায়-কথায় তাঁর উদাহরণ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। জিমন্যাস্টিক্সে রিয়ো অলিম্পিক্সে ভল্টে পদক না জিতলেও হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন দীপা কর্মকার। এখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটা হিসাব পাওয়া গেল যে, টোকিয়োর পর থেকে মিশন প্যারিসের জন্য খরচ করা হয়েছে মোট ৪৭০ কোটি টাকার উপরে। জুডোর মতো খেলায় ৬.৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু পদকের তালিকায় কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি।
কারও কারও বিশ্লেষণ, টাকা খরচ করলেই তো হয় না, সঠিক পরিকল্পনা থাকা দরকার। অলিম্পিক্স বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ হয়েছে তারকা খেলোয়াড়দের জন্য। নীরজ চোপড়ার জন্য ৫.৭২ কোটি। সাত্ত্বিক-চিরাগ যাঁরা ব্যাডমিন্টনে প্রথম নক-আউটে হারলেন, তাঁদের জন্য ৫.৬২ কোটি। নক-আউটে প্রথমেই হেরে যাওয়া পি ভি সিন্ধুর জন্য ৩.১৩ কোটি। চতুর্থ হওয়া মীরাবাই চানুর জন্য ২.৭৪ কোটি। শুটিংয়ে জোড়া পদক জেতা মনু ভাকেরের জন্য ১.৬৮ কোটি। টেনিসে হেরে যাওয়া রোহন বোপান্নার জন্য ১.৫৬ কোটি। তিরন্দাজিতে অঙ্কিতা ভকতের সঙ্গে চতুর্থ হওয়া ধীরজের জন্য ১.০৭ কোটি। বক্সিংয়ে নিখাত জ়ারিন ও লাভলিনা বরগোঁহাইয়ের জন্য যথাক্রমে ৯১.৭৯ লক্ষ ও ৮১.৭৬ লক্ষ। প্রচুর আশা জাগিয়ে এসে প্রথম রাউন্ডে হেরে যাওয়া পুরুষ বক্সার অমিত পঙ্ঘালের জন্য ৬৫.৯০ লক্ষ। বিদেশি কোচ, ট্রেনার, বিদেশে ট্রেনিং বাবদ এমন খরচ হচ্ছে।
যদিও কারও কারও মত, আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি বা খুদে প্রতিভা তুলে আনার উপরে নজর দেওয়া হয়নি, যা চিনের মতো দেশ করে সফল হয়েছে। ভারতের অনেক জায়গায় ঠিক মতো ট্র্যাকই এখনও বসেনি। অ্যাথলেটিক্সে উন্নতি হবে কী করে? প্যারিসে ব্যবহৃত বেগুনি রংয়ের মন্ডো ট্র্যাক নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। ১৯৭৬ মন্ট্রিয়ল অলিম্পিক্স থেকে ট্র্যাক বানাচ্ছে মন্ডো। অত আধুনিকতা ছেড়ে দিন, দৌড়নোর জন্য ন্যূনতম যে ভাল ট্র্যাক দরকার হয়, সেটাই এখনও দেশের অনেক জায়গায় বসেনি। অলিম্পিক্সে বড় দল পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু সর্বোপরি অংশগ্রহণেও বা উন্নতি কোথায়? প্যারিসে ৩২টি ইভেন্টের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে অংশ নিয়েছে একশো চল্লিশ কোটির দেশ।
‘সিটি অব লাইট’ প্যারিসে আঁধার সঙ্গী হবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy