মুখোমুখি: বাস্তবের কপিলের সঙ্গে পর্দার কপিল, রণবীর সিংহ। টুইটার
কপিল দেবের আত্মবিশ্বাস ১৯৮৩ বিশ্বকাপে গোটা দলের মানসিকতা পাল্টে দিয়েছিল। তার আগে তাঁরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি যে, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরবেন।
রবিবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে সেই সত্য অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাক্তন ওপেনার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। ৩৬ বছর আগে লর্ডসের ঐতিহাসিক ফাইনালে যিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওপেন করতে নেমে ৫৭ বলে ৩৮ রান করেছিলেন। শ্রীকান্ত বলেছেন, ‘‘দেশ থেকে রওনা হওয়ার আগে আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরব। আমার নিজেরই তো মুম্বই থেকে ভায়া লন্ডন হয়ে নিউ ইয়র্কের বিমানের টিকিট কাটা ছিল।’’ কেন তাঁদের এই মানসিকতা ছিল তা ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘প্রথম দুই বিশ্বকাপে আমরা শুধুমাত্র হারিয়েছিলাম পূর্ব আফ্রিকাকে। আর হেরেছিলাম শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে, যারা কি না সেই সময়ে টেস্ট দলের মর্যাদাই পায়নি।’’
কিন্তু সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁর হার না মানা মনোভাব রাতারাতি পাল্টে দেয় ড্রেসিংরুমের সার্বিক পরিবেশ। শ্রীকান্ত তাঁর প্রাক্তন অধিনায়ক কপিল দেবকে সেই ঐতিহাসিক সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কপিলের আত্মবিশ্বাসই আমাদের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল।’’ সেখানেই না থেমে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একটা প্রস্তুতি ম্যাচে জিতেছিলাম। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কপিল আমাদের বলেছিল, এক বার যখন ওদের হারাতে পেরেছি, তা হলে আবার কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারব না? আমাদের কাছে ব্যাপারটা অকল্পনীয় বলে মনে হলেও কপিলের আত্মপ্রত্যয় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্ট দিয়েছিল। আমরাও যে জিততে পারি, সেই মনোভাব দৃঢ় হতে থাকে।’’
শ্রীকান্তের কথাবার্তায় উঠে এসেছে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কপিল দেবের সেই বিধ্বংসী ১৭৫ রানের ইনিংসের প্রসঙ্গও। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার এখনও মনে আছে সবুজ উইকেটে আমি এবং সুনীল গাওস্কর শূন্য রানে ফিরেছিলাম। একটা সময়ে স্কোর দাঁড়াল ১৭-৫। আমরা খুব লজ্জিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কপিল মাঠে নামার পরেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে গেল। শুরুর দিকে ও বেশ রক্ষণাত্মক মেজাজেই বল দেখে শট নিচ্ছিল। আমার স্ত্রী তো ওই ব্যাটিং দেখে গ্যালারি ছেড়ে নীচে নেমে এসেছিল।’’ তার পর? শ্রীকান্তের কথায়, ‘‘কপিল যখন পাল্টা আক্রমণ শুরু করল, আমরা প্রবল ঠান্ডা উপেক্ষা করেই ড্রেসিংরুমের বাইরে বেরিয়ে আসি। এবং সেই সময়ে আমরা এতটাই সংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম যে, কেউ নিজের জায়গা থেকে একবারের জন্য নড়িনি। ওই অকল্পনীয় ইনিংসটা আমি কোনও দিন ভুলতে পারব না।’’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফাইনাল নিয়ে শ্রীকান্তের স্মৃতি আগের মতোই তাজা। বলেছেন, ‘‘জোয়েল গার্নারের স্পেলটা আমি কখনও ভুলতে পারব না। প্রত্যেকটা বল প্রায় দশ ফিট উচ্চতা দিয়ে যাচ্ছিল। আমি কী করব বুঝতেই পারছিলাম না। তখন পরামর্শ চাইলাম জিমির (মোহিন্দর অমরনাথের ডাকনাম)। ও আমাকে বলল, নিজের স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলে যাও। পরের ওভার থেকেই আমি পাল্টা আক্রমণে যাই। শেষ পর্যন্ত ৩৮ রান করেছিলাম। যেটা ওই বিশ্বকাপ ফাইনালের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy