মন্ত্র: বুমরাদের সফল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন থমসন। —ফাইল চিত্র।
দুটো টেস্টের পরে স্কোরলাইন ১-১। বাকি আর দুটো টেস্ট। আমি নিশ্চিত, আজ, বুধবার থেকে শুরু মেলবোর্ন টেস্ট দারুণ জমজমাট হতে চলেছে।
অ্যাডিলেডে ভারত প্রথম টেস্টে ঠিকঠাকই খেলেছিল। বলব না, পুরো টেস্টেই নিখুঁত ক্রিকেট খেলেছে। কিন্তু যা খেলেছিল, তা জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল। অ্যাডিলেডে জেতার পরে পার্থে ভারত একটু ভেসে গিয়েছিল। আর মাঠের মধ্যে যে বাগ্যুদ্ধ হল, তাতে ভারতেরই ক্ষতি হয়েছে।
অস্ট্রেলীয়দের কৌশলই হল, বিপক্ষের অধিনায়ককে নিশানা বানানো। সেই স্টিভ ওয়ের জমানা থেকে চলছে। এ বার ওরা বিরাট কোহালিকে নিশানা বানালো। কোহালি তো শুধু ভারতের অধিনায়কই নয়, ওদের সেরা ক্রিকেটারও। আর ও খুব আগ্রাসী ছেলে। মাঠে নিজের মনোভাব প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না। অস্ট্রেলীয়রা জানত, কোহালিকে স্লেজ করলে তার জবাব দেবে। পার্থে ঠিক তাই হল। অস্ট্রেলিয়ার কৌশল খেটে গেল।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই সব স্লেজিংয়ে বিশ্বাস করি না। আমাদের দিনে কখনও কোনও ভাবে স্লেজ করিনি। আমার হাতে একটা বল আছে ব্যাটসম্যানদের ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। ওদের ঘাবড়ে দেওয়ার জন্য কথা বলতে হবে কেন? এই তো পারথ্ টেস্টের সময় স্টাম্প মাইক্রোফোনে ক্রিকেটারদের টুকরো-টাকরা কথাবার্তা ধরা পড়েছে। যা নিয়ে দেখলাম চারদিকে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এ সবের কোনও মানেই নেই। মাঠে নেমে ক্রিকেটটা খেলো, ব্যাস। ব্যাট আর বলটাকেই তোমার হয়ে কথা বলতে দাও। অনেক বিশেষজ্ঞই দেখলাম, স্লেজিংয়ের পক্ষে কথা বলছে। এ রকম কথাটথা হলে নাকি খেলাটার একটা মাত্রা যোগ হয়। কেন? আমার তো ব্যাপারটা বোধগম্য হয় না। খেলাটাকে উত্তেজক করতে কেন বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে? ভাল, লড়াকু ক্রিকেট খেললেই তো সেটা হয়।
যাই হোক, পার্থে ভারতের হারের কথায় আসি। ওদের হারটা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দুটো কারণ উঠে আসছে। এক, ভারতীয় বোলারদের শৃঙ্খলার অভাব। এই মুহূর্তে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে অনেকেই বিশ্বের অন্যতম সেরা বলছেন। কিন্তু পার্থের গতিশীল আর সবুজ পিচ দেখে ওরা একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টায়, যখন টস জিতে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। অহেতুক শর্ট বল করে। ব্যাটসম্যানদের ফ্রন্টফুটেও বিশেষ খেলায়নি।
ভারতীয় দলটায় বেশ কয়েক জন ভাল ফাস্ট বোলার আছে। আমার খুব ভাল লেগেছে যশপ্রীত বুমরাকে। একে তো বুমরার ওই অ্যাকশনের জন্য ওকে বোঝা কঠিন। তার পরে দেখলাম, ওর পেস এবং বাউন্সের সামনে অস্বস্তিতে পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। এ ছাড়া আছে মহম্মদ শামি। পার্থে দুর্দান্ত একটা স্পেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল ছেলেটা। কিন্তু ভারতীয় পেসারদের একটা জিনিস বুঝতে হবে। ওদের নির্মম ভাবে একটানা আক্রমণ করে যেতে হবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের। একটুও ঢিলে দিলে চলবে না। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। এ ব্যাপারে গ্লেন ম্যাকগ্রাকে উদাহরণ করতে পারে ভারতীয় বোলাররা। দেখতে পারে, কী ভাবে ব্যাটসম্যানদের আউট করত ম্যাকগ্রা। ও কখনওই কোনও ব্যাটসম্যানকে জায়গা দিত না শট খেলার। আমার কাছে ম্যাকগ্রাই হল আদর্শ টেস্ট ম্যাচ ফাস্ট বোলার।
আমার এখনও মনে হয়, এই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং গুণগত এবং অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে দারুণ কিছু নয়। ভারতীয় বোলাররা যদি একটু শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়, যদি টানা চাপ রেখে যেতে পারে বিপক্ষের ওপর, তা হলে পরের দুটো টেস্টে কোহালিদের ভাল সুযোগ থাকবে। মেলবোর্নের পিচ নিয়ে অবশ্য একটা উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। আগের বার অ্যাশেজ টেস্ট একেবারে নিষ্প্রাণ ড্র হল। এ বারও পিচে গতি থাকবে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে।
এ বার দ্বিতীয় কারণে আসি। পার্থে ভারতের ব্যাটিংও খুব সাদামাঠা হয়েছিল। ফুটওয়ার্ক ছিল না, খারাপ শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছে ব্যাটসম্যানরা। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে কিন্তু সহজে উইকেট দিয়ে এলে চলবে না। প্রত্যেক ভারতীয় ব্যাটসম্যানের উচিত কোহালিকে দেখে শেখা। ও এমন এক জন ব্যাটসম্যান যে কখনওই উইকেট ছুড়ে দেবে না। কোহালির আর যে জিনিসটা আমার খুব ভাল লাগে, সেটা হল, ও কখনওই তৃপ্ত হয় না। সেঞ্চুরি করে আউট হওয়ার পরেও ওকে দেখে মনে হয়, ভীষণ অখুশি আর অতৃপ্ত। এক জন মহান ব্যাটসম্যান হতে গেলে এ রকম মানসিকতারই প্রয়োজন আছে। কিন্তু কোহালির সতীর্থ ব্যাটসম্যানেরা পার্থে অস্ট্রেলীয় বোলারদের ক্রিসমাসের আগাম উপহার দিয়ে গেল।
লড়াইয়ের মাঝপথে এসে বলব, ভারত এখনও সিরিজ জিততে পারে। পার্থের পরে ওরা নিশ্চয়ই নিজেদের ভুল নিয়ে আলোচনা করেছে। প্রতিটা বিভাগে ভারতকে আরও শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হারাতে গেলে ‘নির্মম’ শব্দটা খুব বেশি করে মাথায় রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy