স্বস্তি: শুক্রবার সাউদাম্পটনে ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অলরাউন্ডার শঙ্কর। ফাইল চিত্র
একটা দল এখনও পর্যন্ত অপরাজিত। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট। অন্যটা যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশের ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে ওঠার রূপকথার কাহিনি নিয়ে ইংল্যান্ডে এসেছে। কিন্তু দলের মধ্যে কাজিয়া আর খেয়োখোয়িতে বিদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছে। যাদের হয়ে ওঠার কথা ছিল এ বারের বিশ্বকাপের চমক, তারাই কি না এখনও জয়ের মুখ দেখেনি। শনিবারও অলৌকিক কিছু ঘটার আশা কেউ দেখছেন না। ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের আগের দিন শেন ওয়ার্নের কাউন্টি মাঠে দাঁড়িয়ে দু’দলের দ্বৈরথে গুরুত্বপূর্ণ যে যে জিনিসগুলো পাওয়া গেল—
বিজয় শঙ্কর ফিট: জোর জল্পনা চলছিল, শিখর ধওয়নের পরিবর্ত হিসেবে আসা ঋষভ পন্থকে না সাউদাম্পটনেই নামাতে হয়। প্র্যাক্টিসে বুমরার ইয়র্কার গিয়ে আছড়ে পড়ে বিজয় শঙ্করের বাঁ-পায়ের পাতায়। সে দিন তো বটেই, বৃহস্পতিবার প্র্যাক্টিসে এসেও কিছুই করতে পারেননি শঙ্কর। ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্টের নজরে থাকছিলেন তিনি। এ দিন ভুবনেশ্বর কুমার আর শঙ্করকে নিয়ে আবারও মাঠে এলেন ফিজিয়ো। শঙ্করকে বোলিং করতে বললেন। তখন দেখে বোঝা গেল, অস্বস্তি অনেকটাই কেটে গিয়েছে। মোটামুটি নিজস্ব ছন্দেই বল করতে পারলেন তিনি। একটা সময় ফিজিয়োকে দেখা গেল, শঙ্করের সঙ্গে ‘হাই ফাইভ’ করলেন। তখনই পরিষ্কার হয়ে গেল, তিনি ফিট। একটু পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তামিলনাড়ুর অলরাউন্ডার বলে গেলেন, তিনি খেলার জন্য তৈরি। এর পর টিম যা ঠিক করবে।
ঋষভের অপেক্ষাই হয়তো বাড়ছে: কোহালিদের অন্দরমহল থেকে যা ইঙ্গিত, শঙ্কর ফিট হয়ে যাওয়ায় তাঁকেই খুব সম্ভবত খেলানো হবে। ম্যাঞ্চেস্টারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ধওয়নের পরিবর্ত হিসেবে তিনিই খেলেছিলেন। শঙ্কর ব্যাট হাতে বড় কোনও স্ট্রোক নিতে পারেননি। তবে ভুবনেশ্বর কুমার চোট পাওয়ার পরে বদলি বোলার হিসেবে বাকি ওভার শেষ করতে এসেই উইকেট তুলে নেন। স্লগ ওভারে নামতে হলে শঙ্কর ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে হার্দিক পাণ্ড্য যে রকম গতি তুলে দিয়ে যাচ্ছেন, তার পরে শেষের চার-পাঁচ ওভারে গাড়িকে টপ গিয়ারে রাখার ক্ষমতা শঙ্করের আছে কি না, তা তর্কের বিষয়। কারও কারও মনে হচ্ছে, ঋষভ পন্থ নামক অস্ত্রের উৎক্ষেপণ হওয়া উচিত সাউদাম্পটনেই। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আফগানিস্তান। তাদের বিরুদ্ধে পন্থকে নামিয়ে রানের পাহাড় যদি গড়ে তোলা যায় তা হলে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের জন্য কড়া বার্তা দিয়ে রাখা যাবে যে, তোমরা একা নও। আমরাও চারশোর কাছাকাছি রান তুলতে পারি। বিজয় শঙ্কর খুব দায়িত্বশীল ক্রিকেটার, শৃঙ্খলাপরায়ণ ব্যাটিং করেন ঠিকই। কিন্তু পন্থের মতো বিধ্বংসী কি কখনও হয়ে উঠতে পারবেন?
একান্তে: মেেয় সামাইরা এবং স্ত্রী রীতিকার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে রোহিত শর্মার টুইট, ‘‘আমার দুই সেরা সঙ্গী।’’ ছবি: টুইটার
শামির সুযোগ: গত এক বছরে নিজেকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করেছেন মহম্মদ শামি। আফগানিস্তানকে দেখলে আলাদা রকম টগবগানি এসে যেতে পারে তাঁর মধ্যে। এই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ খেলতে গিয়েই ‘ইয়ো ইয়ো’ ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে তিনি দল থেকে বাদ পড়েন। স্ত্রী হাসিন জাহানের মারাত্মক সব অভিযোগে বিদ্ধ তখন তিনি। তার পরেই প্রতিজ্ঞা করেন, নিজেকে ট্রেনিংয়ে ডুবিয়ে দেবেন। চমকে দেওয়ার মতো ফিটনেস তৈরি করে ফিরে আসবেন। নিজের বাড়িতে জিম তৈরি করেন লক্ষ্য পূরণের জন্য। তার পরেই ক্রিকেট দেখল নতুন শামিকে। দলের ট্রেনার শঙ্কর বাসু সে দিন বলে গিয়েছেন, ‘‘এটা শামি টু।’’ একটা সময় বিশ্বকাপ দৌড় থেকে ছিটকেই গিয়েছিলেন তিনি। ওয়ান ডে দলে জায়গা পাচ্ছিলেন না। ফিটনেস বাড়িয়ে ওয়ান ডে-তে অসাধারণ প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে তবেই বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেন। তবু ইংল্যান্ডে আসা ইস্তক রিজার্ভ বেঞ্চেই বসে থাকতে হয়েছে তাঁকে। ভুবনেশ্বরের চোট তাঁর সামনে দরজা খুলে দিচ্ছে। ধওয়নের ছেড়ে যাওয়া খালি জায়গা যেমন দু’হাতে লুফে নিয়েছেন কে এল রাহুল, তেমনই শামি ছিনিয়ে নিতে পারেন ভুবির জায়গা। আফগানদের দেখে যদি পুরনো সেই বাদ পড়ার কাহিনি মনে পড়ে যায়, আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেখা যেতেই পারে শামিকে।
পিচ এবং আবহাওয়া: শুক্রবার সারা দিনের বেশিটা রোদ ঝলমলেই থাকল। মাঝেমধ্যে মেঘের আনাগোনা। হাল্কা দু’এক পশলা বৃষ্টি হলেও খেলা বন্ধ থাকার মতো ঘ্যানঘ্যানে ব্যাপার তাড়া করেনি। শনিবারের পূর্বাভাসে বৃষ্টির কথা বলা নেই। কোহালিরা এ মাঠেই বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে দু’দল মিলিয়ে ৪৫৭ রান উঠেছিল। চলতি বিশ্বকাপের স্কোরিং চার্ট অনুযায়ী আহামরি কিছুই নয়। স্ট্রোক করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন ব্যাটসম্যানেরা। তা নিয়ে সমালোচনাও হয়েছিল। দু’দিন ঢাকা থাকার পরে পিচ কেমন ব্যবহার করে বা প্রথম ম্যাচের চেয়ে বেশি ব্যাটিং সহায়ক হয় কি না, দেখার।
ভারতের কাঁটা রশিদ: ইংল্যান্ডে তাঁকে মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু রশিদ খান রোজ রোজ হেরে যাওয়ার বান্দা নন। আইপিএলের মঞ্চে বার বার তিনি নামী ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলেছেন। রশিদের আইপিএল সতীর্থ বিজয় শঙ্কর। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নেটে তাঁকে অনেক খেলেছেন। শঙ্কর বলছিলেন, ‘‘নেটে ব্যাট করার সময় রশিদের বৈচিত্র ধরার খুব চেষ্টা করেছি। তবে ও নাছোড় প্রতিদ্বন্দ্বী। সহজে হাল ছাড়বে না।’’ আগের দিন ইংল্যান্ডের হাতে রশিদ অপমানিত হয়েছেন। ভারতের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে আবার দাঁড়াতে চাইবেন। দু’টো তথ্য আফগান লেগস্পিনারকে স্বস্তিতে রাখবে। এক) স্পিনের দেশ হলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সাম্প্রতিককালে স্পিনের বিরুদ্ধে সাফল্যের হার মোটেও ভাল নয়, দুই) ঋষভ পন্থকে না খেলালে ভারতীয় ব্যাটিং তালিকায় কোনও বাঁ হাতি নেই। ইতিহাস বলছে, রশিদকে অসহায় দেখাতে পারে বাঁ হাতির আক্রমণের সামনে। আইপিএলে তাঁকে সব চেয়ে কঠিন সময় উপহার দিয়েছেন সুরেশ রায়না। ইংল্যান্ড ম্যাচে দুরমুশ হন আর এক বাঁ হাতি অইন মর্গ্যানের হাতে।
কেউ যেন বার বার কোহালিদের কানে বলার চেষ্টা করছে— ঋষভ পন্থকে খেলাও!
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy