কোহালির সুখের সংসার। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত ভারত। ছবি: এএফপি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালের আরও কাছে ভারত। ৩৬ বছর আগের বিশ্বকাপে এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে স্বপ্নের দৌড় শুরু করেছিল কপিলদেব নিখাঞ্জের দল। তার পরের ঘটনা ইতিহাস।
সেদিনের সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জেসন হোল্ডারের এই দলটার মধ্য জমিন-আসমান পার্থক্য। আগের সেই সুনাম এখন আর নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ভারত এখন ক্রিকেটে যতটা এগিয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারও বেশি পিছিয়েছে। দু’ দলের মধ্যে পার্থক্যটা বেশ বোঝা গেল বৃহস্পতিবারের ম্যাঞ্চেস্টারে।
ভারতের করা সাত উইকেটে ২৬৮ রানের জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয় নামল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে। ক্রিস গেলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান দলে। চলতে শুরু করলে তাঁকে থামায় কার সাধ্যি! এখনকার গেল অবশ্য আগের সুনাম হারিয়ে ফেলেছেন। বয়স থাবা বসিয়েছে তাঁর রিফ্লেক্সে। আজকের ম্যাচের বল গড়ানোর আগে ‘ইউনিভার্স বস’ হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন, ‘‘আমার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ভারতীয় ফ্যানরা হতাশ হলেও কিছু মনে করব না।’’ দিনটা তাঁর ছিল না। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই শামি ফিরিয়ে দিলেন গেলকে (৬)। বাংলার পেসার হোপকেও (৫) দ্রুত তুলে নেন। পার্টনারশিপ গড়তে পারলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানরা। অ্যামব্রিস (৩১), পুরান (২৮), হেটমায়ার (১৮), রচ (১৪ অপরাজিত) ও কটরেল (১০) কেবল দু’ অঙ্কের রানে পৌঁছলেন। বাকিরা এলেন আর গেলেন। পুরো পঞ্চাশ ওভার তো দূর অস্ত। ৩৪.২ ওভারে ১৪৩ রানে শেষ ক্যারিবিয়ানদের সব প্রতিরোধ। ভারত জিতল বিশাল ১২৫ রানে।
কোহালির দল এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে অপরাজিত। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখিয়েছেন। আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতীয় বোলারদের দৌরাত্ম্য দেখা গেল। আগের ম্যাচে চার উইকেট নেওয়ার পরে এদিনও চার উইকেট নিলেন মহম্মদ শামি। দু’ ম্যাচে আট উইকেট হয়ে গেল বাংলার পেসারের। বুমরা (২ উইকেট) অল্পের জন্য এ দিন হ্যাটট্রিক পেলেন না। হার্দিক পাণ্ড্য, কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহালও বল হাতে অবদান রাখলেন।
কোহালির সুখের সংসারে কাঁটা একমাত্র মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাটিং ফর্ম। এদিনও ধীর লয়ে ব্যাটিং করলেন তিনি। ভারতের ইনিংসের শেষ ওভারে পুরনো ধোনির ঝলক দেখা গেল বটে। কিন্তু, তাতেও কি ক্রিকেটভক্তরা সন্তুষ্ট হলেন? ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ধোনির ইনিংস দেখার পরে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় তিনি যে ফের সমালোচিত হবেন, তা এখনই বলে দেওয়া যায়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মন্থর ব্যাটিং করায় নিন্দুকদের নখ-দাঁতের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন ধোনি।
মাহি-ভক্তরা ভেবেছিলেন, ম্যাঞ্চেস্টারেই সমালোচকদের জবাব দেবেন তিনি। হেলিকপ্টার শট মেরে মাঠের বাইরে পাঠাবেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় সমালোচনা। সে সব হল না। বরং আফগানিস্তান ম্যাচেরই যেন অ্যাকশন রিপ্লে দেখা গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। টিম ম্যানেজেমন্ট তাঁর ব্যাটিং অর্ডারে এ দিন পরিবর্তন আনেন। পাঁচ থেকে ছ’ নম্বরে পাঠানো হয় ‘রাঁচীর রাজপুত্র’কে।
আরও পড়ুন: নতুন রেকর্ড কোহালির, হলেন দ্রুততম ২০ হাজার রানের মালিক
আরও পড়ুন: ভারতের জার্সিতে রাজনীতির রং, তীব্র আপত্তি বিরোধীদের
৬১ বলে ৫৬ করলেন ধোনি। শেষ ওভারে ক্ষণিকের জন্য পুরনো ধোনির ঝলকও দেখা গেল। কিন্তু, গোটা ইনিংস ধরে সেই দাপট কোথায়? সহজাত ভঙ্গিতে ইদানীং তিনি ব্যাট করতে পারছেন না। ফাঁকা জায়গায় বল ঠেলে স্ট্রাইক রোটেট করতে ভুলে গিয়েছেন। এই ধোনিকে চেনেন না ক্রিকেটভক্তরা। গ্যালারিতে গুঞ্জন উঠল বয়স কি থাবা বসিয়েছে ধোনির ব্যাটিংয়ে? বহুযুদ্ধের সৈনিক ধোনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন হার্দিক পাণ্ড্য পরে নেমে দ্রতলয়ে ৩৮ বলে ৪৬ রান করে গেলেন। আর একসময়ে যিনি ‘ফিনিশার’ হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন, সময়ের নিয়মে সেই সুনাম এখন ধুয়ে মুছে যেতে বসেছে তাঁর শরীর থেকে। এ তো সত্যিই চিন্তার বিষয়।
এ দিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কোহালি। শুরুতেই ব্যক্তিগত ১৮ রানে ফিরে যান ভারতের ওপেনার রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপের শুরুটা এ বার দারুণ করেছিলেন মুম্বইকর। দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রোহিত ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন। আফগানদের বিরুদ্ধে মুজিব উর রহমানের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়েছিলেন। এ দিন কেমার রচের বল রোহিতের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেট কিপার শেই হোপের গ্লাভসে। বল সত্যিই রোহিতের ব্যাট ছুঁয়েছিল কিনা, তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলেন ‘হিটম্যান’ স্বয়ং। স্কোর বোর্ড তখন দেখাচ্ছে, ভারত এক উইকেটে ২৯।
অন্য ওপেনার লোকেশ রাহুল ভাল শুরু করেও বড় রান করতে ব্যর্থ। ভারতের যখন ৯৮ রান, তখন রাহুল ফেরেন ব্যক্তিগত ৪৮ রান করে। হোল্ডারের বলে তাঁর উইকেট ছিটকে যায়। রাহুল দারুণ প্রতিভাবান। কিন্তু, ক্রিজে জমে যাওয়ার পরে উইকেট ছুড়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ দিনও রাহুল জমে যাওয়ার পরে ফিরে গেলেন। চার নম্বরে বিজয় শঙ্কর ব্যর্থ। ১৯ বলে ১৪ করেন তিনি। বোলার সেই রচ। বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের সময়ে বিজয় শঙ্করের উপরে ভরসা দেখিয়েছিলেন নির্বাচকরা। বিরাট কোহালিরও তাঁর উপরে রয়েছে প্রবল আস্থা। সেই কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে ঋষভ পন্থের বিশ্বকাপ-অভিষেক। আগের দিন ধোনি পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। এ দিন ধোনির আগে ব্যাট করতে পাঠানো হয় কেদার যাদবকে। ১০ বলে ৭ রান করে কেদার যখন ফেরেন, তখন ভারতের রান দেড়শোও পেরোয়নি।
ভারতের ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে কোহালি ও ধোনির উপরে। অ্যালেনের বলে ধোনিকে স্টাম্প করার সহজ সুযোগ নষ্ট করেন হোপ। কোহালি ফেরেন ৮২ বলে ৭২ রান করে। চলতি বিশ্বকাপে বিরাট কোহালি ধারাবাহিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্রুততম ২০ হাজার রানের মালিক হলেন ম্যাঞ্চেস্টারে। কিন্তু, তাঁকেও একসময়ে দেখতে হল, অন্য প্রান্ত থেকে সতীর্থরা প্যারেড করে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন। দিনান্তে অবশ্য তাঁর মুখে খেলা করছে হাজার ওয়াটের আলো। ঠিক পথেই যে এগোচ্ছে তাঁর দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy