Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
এখনও মনে রয়েছে এগারো বছর আগে মালয়েশিয়ার সেই ম্যাচ

দুই অধিনায়কের বাগ্‌যুদ্ধ নেই, চলল প্রশংসাই

বিরাট কোহালি এবং কেন উইলিয়ামসন। দু’জনের আগেও দেখা হয়েছিল। এগারো বছর আগে সেটাও ছিল বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল।

বিনম্র: সোমবার ম্যাঞ্চেস্টারে সাংবাদিক বৈঠকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখালেন বিরাট কোহালি এবং কেন উইলিয়ামসন। রয়টার্স

বিনম্র: সোমবার ম্যাঞ্চেস্টারে সাংবাদিক বৈঠকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখালেন বিরাট কোহালি এবং কেন উইলিয়ামসন। রয়টার্স

সুমিত ঘোষ
ম্যাঞ্চেস্টার শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:৫২
Share: Save:

আধুনিক প্রজন্মের সেরা দুই ব্যাটসম্যান। যুব দলের প্রতিনিধি হিসেবে যাঁদের প্রথম মুখোমুখি হওয়া। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পাকদণ্ডী বেয়ে আজ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল দ্বৈরথে মুখোমুখি হওয়া শুধু নয়, যুযুধান দু’দলের অধিনায়ক। তাঁদের দিকে তাকিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু সেমিফাইনালের মহারণের আগে একে অন্যের দিকে তির ছোড়া নয়, বরং পরস্পরের প্রশংসায় মাতলেন তাঁরা।

বিরাট কোহালি এবং কেন উইলিয়ামসন। দু’জনের আগেও দেখা হয়েছিল। এগারো বছর আগে সেটাও ছিল বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। তবে অনূর্ধ্ব উনিশে। কে জানত, দু’জনে আবার দেখা হবে সিনিয়র বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে। মালয়েশিয়ায় সে দিন বিরাটের ভারত তিন উইকেটে উইলিয়ামসনের নিউজ়িল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়। এমন মজাদার তথ্যও পাওয়া গেল যে, সেই ম্যাচে উইলিয়ামসনের উইকেট নিয়েছিলেন কোহালি। যা শুনে ভারত অধিনায়ক বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। এক বার মজা করে বলে ফেললেন, ‘‘পাঁচ বোলারে না খেললে আবার আমাকেই কেনের উইকেট নিতে হবে।’’ উইলিয়ামসনেরও স্মৃতি হাতড়ে মনে পড়ল, ‘‘হ্যাঁ, কোহালি তখন কিছুটা অলরাউন্ডার মতো ছিল। এখন আর অতটা বল করে না ও।’’

কোহালি, উইলিয়ামসন, জো রুট এবং স্টিভ স্মিথ। আধুনিক ক্রিকেটে এই চার জনকেই বিশ্বের সেরা মনে করা হয়। দু’টি সেমিফাইনালে চার জন মুখোমুখি হচ্ছেন। কোহালি এবং উইলিয়ামসন যদিও একেবারে দুই পৃথিবীর বাসিন্দা। মাঠে দাঁড়িয়ে কোহালি অনেক বেশি আক্রমণাত্মক, মনের ভিতরে যা আছে, বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে দ্বিধা করেন না। উইলিয়ামসন সেই তুলনায় অনেক শান্ত, ধীরস্থির ভঙ্গিতে কাজ সারেন। দু’জনের মুখেই দাড়ি আর তার আড়ালে চোয়াল শক্ত করা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুখ। দু’জনেই বিশ্বকাপ দারুণ ছন্দে রয়েছেন। উইলিয়ামসন তাঁর দলের সর্বোচ্চ স্কোরার এবং বাকিরা যখন ব্যর্থ হচ্ছেন, তিনি একা টানছেন। যদিও সাংবাদিকদের সামনে এ দিন বারবার নিজের ভূমিকাকে গৌণ করে দেখানোর চেষ্টা করে গেলেন নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক। বলে গেলেন, ‘‘টিমের সকলে অবদান রাখছে। আমার একার ব্যাটেই দল জিতছে, কথাটা মোটেও ঠিক নয়।’’

যদি কেউ ভেবে থাকেন, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগে দুই অধিনায়কের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হবে, তা হলে ম্যাঞ্চেস্টার হতাশ করবে। কারণ দুই অধিনায়ক একে অন্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করে গেলেন। কোহালির যেমন মনে পড়ছে, ‘‘অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ হয়েছিল ২০০৮-এ। তার আগের বছর নিউজ়িল্যান্ডে একটা অনূর্ধ্ব উনিশ টেস্ট ম্যাচ খেলছিলাম। সেই ম্যাচে কেন একটা শট খেলেছিল আমাদের এক ফাস্ট বোলারের বিরুদ্ধে। বেশ জোর ছিল বলে। তা-ও মেরে দিয়েছিল ব্যাকফুটে। স্লিপে দাঁড়িয়ে সে-দিনই এক সতীর্থকে বলেছিলাম, আমি কখনও এ রকম শট খেলতে দেখিনি কাউকে।’’ যোগ করেন, ‘‘সব সময়ই জানতাম, কেন অন্য রকম প্রতিভাসম্পন্ন। জানতাম, ও নিউজ়িল্যান্ডের হয়ে খেলবেই। কেন খুব ভাল মানুষও।’’ কিছুক্ষণ পরে উইলিয়ামসন এসে প্রশংসা ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন, ‘‘বিরাট যে আবেগ আর দায়বদ্ধতা দেখায় মাঠে, সেটা সকলের কাছে উদাহরণ। ক্রিকেট খেলাটাতেই অন্য মাত্রা যোগ করেছে ও। এই খেলাটার প্রতিনিধি হিসেবে সেটা দেখে দারুণ লাগে।’’

মজাদার সব ঘটনার আড়ালে দু’জনের মধ্যে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াইও চলবে। ভারতীয় দল তাদের হালফিলের রুটিন মেনে এ দিনও ম্যাচের আগে গোটা দলের প্র্যাক্টিস রাখল না। ঐচ্ছিক অনুশীলনে সব চেয়ে মগ্ন দেখাল রবিবার আটত্রিশে পা দেওয়া মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। নেটে আলাদা করে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস তো করলেনই, দীর্ঘক্ষণ হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং বোলিং কোচ বি অরুণের সঙ্গে আলোচনাও করতে দেখা গেল তাঁকে। বিরাট, রোহিতরা অনুশীলন করলেন না। জোরে বোলারদের কাউকেও গা ঘামাতে দেখা গেল না। মহম্মদ শামি এসেছিলেন কিন্তু বল করলেন না। যশপ্রীত বুমরা বা ভুবনেশ্বর কুমার এলেনই না। শামি কিছুক্ষণ ব্যাটে-বলে করতে থাকলেন। কিন্তু হাবভাব দেখে মনে হল না, সেমিফাইনালে খেলার ব্যাপারে আশাপ্রদ খবর পেয়েছেন। যুজবেন্দ্র চহাল আর কুলদীপ যাদব দু’জনেই অবশ্য প্র্যাক্টিস করলেন।

ভারতীয় দলে নতুন প্রযুক্তি এসে গিয়েছে। জিপিএসের ট্র্যাকারের মাধ্যমে শারীরিক সব তথ্য এসে যাচ্ছে ফিজিয়ো আর ট্রেনারের কাছে। সেই তালিকা দেখে তাঁরা ঠিক করে দিচ্ছেন, কার কতটা পরিশ্রম করার দরকার বা কতটা বিশ্রামের দরকার। অর্থাৎ, ম্যাচের দু’দিন আগে দেখা গেল, জিপিএসের মাধ্যমে সংগৃহীত শারীরিক তথ্য বলছে, যশপ্রীত বুমরার আটচল্লিশ ঘণ্টা বিশ্রাম দরকার। তিনি তা হলে ম্যাচের আগে দু’দিনই বিশ্রাম নেবেন। বুমরা, ভুবি, বিরাট, রোহিত-সহ বেশির ভাগ ক্রিকেটার সেই লিডসে খেলার পরে আর প্র্যাক্টিস না করেই তাই সেমিফাইনাল খেলতে নামবেন। যা গত বিশ্বকাপের সময়েও ভাবা যায়নি। বিরাট মাঠে এলেন শুধু সাংবাদিক সম্মেলন করতে। ফের ধোনি নিয়ে শ্রদ্ধা শোনা গেল তাঁর মুখে। ‘‘এমএসের প্রতি অসীম শ্রদ্ধাই থেকে যাবে আমাদের। ভারতীয় ক্রিকেটে ওর অবদান কতটা আমরা জানি। সকলেই প্রায় ওর অধীনে খেলা শুরু করেছি। যে ভাবে ও আমাদের সমর্থন করে গিয়েছে, সুযোগ দিয়েছে, তা ভোলা যাবে না।’’ এখানেই না থেমে যোগ করলেন, ‘‘অধিনায়ক থাকার পরে সেই দলেই শুধু ক্রিকেটার হিসেবে খেলা সহজ নয়। আর শুধু খেলছেই না, এম এস একই রকম ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সকলকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে চলেছে। আমাকে সাহায্য করে আবার কখনও কিছু চাপিয়েও দেয় না। আমার যখনই দরকার পড়ে এম এসকে পাশে পাই, আবার আমাকে নিজের মতো গড়ে উঠতেও দিচ্ছে। ওর হাতে তৈরি খেলোয়াড়রাই কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’’

বিরাটদের প্রিয় ধোনির এটাই শেষ বিশ্বকাপ। যদি ফাইনালে উঠতে পারেন, তা হলে আর হয়তো পড়ে আছে দু’টোই ম্যাচ। ২০১১-তে ওয়াংখেড়েতে কাপ জিতে সচিন তেন্ডুলকরকে কাঁধে করে ঘুরিয়েছিলেন বিরাটরা। এ বার যদি ধোনিকে একই রকম বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে পারেন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy