Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
BGT 2024-25

৫ কারণ: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কেন টেস্ট সিরিজ় হারল ভারতীয় দল

রবিবার পঞ্চম টেস্টে ভারত হারল ৬ উইকেটে। প্রথম টেস্টে পার্‌থে জিতেছিল তারা। এর পর অ্যাডিলেডে হেরে যায়। ব্রিসবেনে বৃষ্টির কারণে হার বাঁচায় ভারত। মেলবোর্ন এবং সিডনিতে আবার হার। নেপথ্যে কোন কোন কারণ?

Virat Kohli

বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৯
Share: Save:

১০ বছর পর বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি হারল ভারত। পাঁচ টেস্টের সিরিজ় ১-৩ ব্যবধানে হেরে গেলেন রোহিত শর্মারা। রবিবার পঞ্চম টেস্টে ভারত হারল ৬ উইকেটে। প্রথম টেস্টে পার্‌থে জিতেছিল তারা। এর পর অ্যাডিলেডে হেরে যায়। ব্রিসবেনে বৃষ্টির কারণে হার বাঁচায় ভারত। মেলবোর্ন এবং সিডনিতে আবার হার।

এই সব হারের নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। পর পর তিন বার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ় জেতার সুযোগ ছিল ভারতের। কিন্তু সেটা এ বারে হল না। শুরুটা ভাল হলেও সেই ধারা বজায় রাখতে পারল না ভারত। হল না বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠাও। এর আগে দু’বার ফাইনাল খেলে হারতে হয়েছিল ভারতকে। কিন্তু এ বারে যোগ্যতা অর্জনই করতে পারল না তারা।

ব্যাটিং ব্যর্থতা

ভারতের হারের সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্যই ব্যাটিং। গোটা সিরিজ় জুড়ে ব্যাটারেরা ব্যর্থ হয়েছেন। যে টেস্ট ভারত জিতেছিল, তাতেও প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল দল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে মাত্র এক বার ৩০০ রানের গণ্ডি পার করতে পেরেছিলেন বিরাট কোহলিরা। অস্ট্রেলিয়া সেখানে তিন বার ৩০০ রানের গণ্ডি পার করেছে। যশস্বী জয়সওয়াল (৩৯১ রান) এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি (২৯৮ রান) দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। সেখানে বিরাট (১৯০ রান) এবং রোহিত শর্মার (৩১ রান) মতো সিনিয়রেরা ব্যর্থ। সেই সঙ্গে ঋষভ পন্থের দায়িত্বজ্ঞানহীন শট। পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই শট খেলতে গেলেন তিনি। তাতে উইকেট দিয়ে এলেন। দলকেও ডোবালেন। মেলবোর্নে পন্থ যদি আরও কিছু ক্ষণ ধৈর্য ধরে ব্যাট করতেন, তা হলে ম্যাচ বাঁচাতেও পারত ভারত।

মেলবোর্ন এবং অ্যাডিলেডে ভারত লড়াই করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরে যায়। হাতে রান থাকলে ম্যাচ অন্য রকম হলেও হতে পারত। ভারতের হারের জন্য ব্যাটারদের দায়ী করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “ভারত ভাল ব্যাটিং করতে পারেনি। টেস্টে আরও ভাল ব্যাটিং করতে হবে। না হলে জেতা মুশকিল। ১৭০-১৮০ রান করে ম্যাচ জেতা যায় না। ৩৫০-৪০০ রান করতে হবে।”

রোহিতের দলে ফেরা

প্রথম টেস্টে রোহিত খেলেননি। ভারতীয় দল সেই টেস্ট ২৯৫ রানে জিতেছিল। পার্‌থে ভারত তিন জন পেসার এবং দু’জন অলরাউন্ডার নিয়ে খেলেছিল। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের কারণে প্রথম টেস্টে খেলেননি রোহিত। তিনি দ্বিতীয় টেস্টে দলে যোগ দেন। তাতেই ভারতীয় দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। রোহিত অ্যাডিলেড এবং ব্রিসবেনে মিডল অর্ডারে খেলেন। কারণ প্রথম টেস্টে দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল এবং লোকেশ রাহুল ভাল খেলেছিলেন। সেই জুটি ভাঙতে চাননি রোহিত। কিন্তু তিনি মিডল অর্ডারে রান করতে পারেননি। তাতে দুর্বল হয়ে যায় মিডল অর্ডার। মেলবোর্নে হঠাৎ তিনি ওপেন করতে নেমে পড়লেন। তাতে রাহুলকে তিন নম্বরে পাঠানো হল। বাদ পড়তে হল শুভমন গিলকে। এক জন ক্রিকেটারকে জায়গা করে দিতে দু’জনকে নিজেদের জায়গা ত্যাগ করতে হল। সিডনিতে যদিও রোহিত নিজেকেই দল থেকে সরিয়ে নিলেন।

শামির না থাকা

গত বছর এক দিনের বিশ্বকাপের পর থেকে ভারতীয় দলে পাওয়া যাচ্ছে না শামিকে। চোটের কারণে এখনও টেস্ট খেলার মতো ফিট নন তিনি। বার বার তাঁর দলে ফেরার জল্পনা তৈরি হলেও তা সম্ভব হয়নি। বাংলার হয়ে খেললেও তাঁকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর ঝুঁকি নেননি ভারতীয় দলের নির্বাচকেরা। শামি না থাকায় সঙ্গীহীন হয়ে পড়েন জসপ্রীত বুমরাহ। তিনি পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে শেষ দিনে বল না করেও ৩২টি উইকেট তুলে নেন। তিনটি ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন। গড় ১৩.০৬। সিরিজ়ের সেরা ক্রিকেটারও হয়েছেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের থেকে সে ভাবে সাহায্য পাননি। মহম্মদ সিরাজ নিজের ২০ উইকেট। তাঁর গড় ৩১.১৫। কোনও ইনিংসেই ৫ উইকেট নিতে পারেননি তিনি। তৃতীয় পেসার হিসাবে কখনও হর্ষিত রানা, কখনও আকাশ দীপ আবার শেষ ম্যাচে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে খেলানো হয়েছে। হর্ষিত এবং আকাশ দু’টি করে ম্যাচ খেলেছেন। হর্ষিত নিয়েছেন ৪ উইকেট এবং আকাশ নিয়েছেন ৫ উইকেট। অলরাউন্ডার নীতীশ মাত্র ৫ উইকেট নিয়েছেন। তিনি বল হাতে খুব বেশি ভরসা দিতে পারেননি দলকে। ফলে শামির অভাব প্রতি ম্যাচেই বোধ করেছে ভারতীয় দল।

রোহিতের নেতৃত্ব

তাঁর নেতৃত্বে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। কিন্তু টেস্টে অধিনায়ক হিসাবে সে ভাবে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলেন না রোহিত। অস্ট্রেলিয়াকে একাধিক বার বাগে পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় ভারত। যার জন্য অবশ্যই দায়ী রোহিতের রক্ষণাত্মক অধিনায়কত্ব। ব্রিসবেন এবং মেলবোর্নে ভারতের কাছে সুযোগ ছিল আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার। কিন্তু রোহিত অপেক্ষা করলেন। তাতে অস্ট্রেলিয়া সুযোগ পেয়ে গেল ম্যাচে ফেরার। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াও বোলার পরিবর্তনেও রোহিত বার বার ভুল করেছেন। দলে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিলেও তাঁকে মেলবোর্নে সে ভাবে ব্যবহারই করেননি। যা ভারতকে বিপদে ফেলে দেয়। ব্যাটার হিসাবেও ব্যর্থ রোহিত। সিরিজ়ে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। করেছেন মাত্র ৩১ রান।

ব্যর্থ কোহলি

পার্‌থে শতরান করেন কোহলি। মনে করা হয়েছিল হয়তো ফর্মে ফিরলেন। কিন্তু ওই শতরানটি বাদ দিলে কোহলি বলার মতো তেমন ইনিংস খেলেননি। পাঁচ ম্যাচে তাঁর মোট সংগ্রহ ১৯০ রান। প্রথম টেস্টের শতরান বাদ দিলে বাকি চারটি টেস্ট মিলিয়ে ৯০ রান করেছেন কোহলি। ১০ রানের কমে আউট হয়েছেন পাঁচ বার। ৩০ রানের গণ্ডি পার করেছেন এক বার। অস্ট্রেলিয়ার সব বোলারেরাই বুঝে গিয়েছিলেন, কোহলিকে অফ স্টাম্পের বাইরে বল করতে হবে। তা হলেই তিনি জব্দ। চতুর্থ বা পঞ্চম স্টাম্পে বল থাকলে যে কোনও ব্যাটারের খেলতে অসুবিধা হয়। বুঝতে অসুবিধা হয়, সেই বল তাঁরা ছাড়বেন না খেলবেন। বিরাট বার বার সেই রোগে ভুগলেন এবং উইকেট দিয়ে এলেন। বিরাট রান না পাওয়ায় ভারতের মিডল অর্ডার নড়বড়ে হয়ে যায়। গোটা দলের উপর সেটার প্রভাব পড়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

BGT 2024-25 Border-Gavaskar Trophy 2024-25 Team India Rohit Sharma Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy