সঞ্চালক: শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহের এক অনুষ্ঠানে ন’বছরের এডওয়ার্ড সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছেন বিরাট কোহালির। শনিবার এজবাস্টনে। এপি
এজবাস্টনে একটাও বল হওয়ার আগে অইন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড তাদের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে বসে আছে। গ্যালারির সমর্থনের উইকেট।
যা পরিস্থিতি, ব্রায়ান লারার ৫০১ নট আউট বিশ্বরেকর্ডের স্মৃতিজড়িত মাঠকে রবিবার কোহালিদের ঘর আর মর্গ্যানদের বিদেশ বিভুঁই মনে হতে পারে। গ্যালারিতে ইংরেজদের ছাপিয়ে ভারতীয় জনতার গর্জন এতটাই জোরালো হয়ে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস!
আইসিসি থেকে সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে, রবিবারের ম্যাচের জন্য ৫৫ শতাংশ টিকিট কিনেছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। বাকি ৪৫ শতাংশ ইংরেজ দর্শক। সরকারি হিসেবেই ভারতীয়রা এগিয়ে। যা কার্যত নজিরবিহীন। ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফুটবলে নেমার বনাম মেসি হচ্ছে আর সেখানে আর্জেন্টিনার ভক্তদের সংখ্যাধিক্য, ভাবাই যায় না! রবিবাসরীয় এজবাস্টন তাই অতীতের সব হিসেব ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে।
কোহালি বনাম জোফ্রা আর্চারের ভাগ্য কী? যশপ্রীত বুমরা না জো রুট, কে জিতবে দুই তারকার লড়াইয়ে? মহম্মদ শামির বাউন্সার কি নড়বড়ে করে দেবে শর্ট বলে দুর্বল অইন মর্গ্যানকে? আইপিএলে মইন আলির আক্রমণের জবাব দিতে পারবেন কুলদীপ যাদব? ক্রিকেটীয় দ্বৈরথের মীমাংশা হতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে রবিবার পর্যন্ত। কিন্তু দু’দলের মধ্যে জনসমর্থনে কারা এগিয়ে, তার ফল ম্যাচের এক দিন আগেই বেরিয়ে পড়েছে।
ঘটনা হচ্ছে, আইসিসি-র দেওয়া তথ্য ইংরেজরাও বিশ্বাস করছেন না। তাঁদের মতে, গ্যালারিতে ৫৫ শতাংশ নয়, আরও বেশি করে তেরঙ্গার উপস্থিতি থাকবে। এ দিন প্রেস বক্সেই ইংরেজ বিশেষজ্ঞদের কাউকে কাউকে বলতে শুনলাম, ‘‘আইসিসি প্রকাশ করতে চাইছে না। সংখ্যাটা ভারতের পক্ষে সত্তর-তিরিশ হলেও অবাক হব না।’’
এঁদের আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক নয়, প্রাক-ম্যাচ প্রস্তুতি পর্বেই ট্রেলার দেখা গেল। বিরাট কোহালিকে এক ঝলক দর্শনের জন্য গেটের বাইরে এক ঝাঁক অনুরাগী দাঁড়িয়ে। বন্ধ ফটকের পাশে এক ফালি খোলা জায়গা। খুব কষ্ট করে চোখ রেখে ভিতরটা দেখা যেতে পারে। সেখানে দাঁড়িয়েই ‘কোহালি কোহালি’ করে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তা হলে রবিবার গেট খুলে দিলে আর কোহালি যখন সত্যিই যোদ্ধার ঢংয়ে ব্যাট হাতে নেমে আসবেন প্যাভিলিয়নের সিঁড়ি দিয়ে, তখন এঁদের গর্জন কত হাজার ডেসিবেল ছাড়াতে পারে!
মনে করা হচ্ছে, এজবাস্টনের মহারণে যশপ্রীত বুমরার ইয়র্কার, মহম্মদ শামির ইনকাটার, কুলদীপ যাদবের চায়নাম্যান বা যুজবেন্দ্র চহালের গুগলির মতোই আরও একটা তাস থাকছে ভারত অধিনায়কের আস্তিনে। গ্যালারির গর্জন। যাদের চলতি বিশ্বকাপে বলা হচ্ছে ভারতের ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’।
এজবাস্টনের বাইরে এ দিনই ‘ভারত আর্মি’র কয়েক জনের সঙ্গে দেখা হল। ‘ভারত আর্মি’ হল দেশ-বিদেশে কোহালিদের ভক্তদের গ্রুপ। ইংল্যান্ডের ‘বার্মি আর্মি’র অনুকরণে যাদের সৃষ্টি এবং এখনই তাদেরই দেশ থেকে তাদের উৎখাত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছে। ‘ভারত আর্মি’ সদস্যেরা হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন, ‘‘ইংল্যান্ড, আমরা আসছি। তৈরি থাকো। তোমাদের মাঠে তোমাদের অ্যাওয়ে ম্যাচ!’’
ড্রাম, ঢাক, ঢোল নিয়ে এঁরা উপস্থিত হবেন রবিবার। নিজেদের তৈরি করা গান গাইবেন। ম্যাঞ্চেস্টারকে যেমন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের লালের শহর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের নীল পরীতে পরিণত করেছিলেন, তেমনই এখানেও প্রত্যেক ইংল্যান্ড উইকেটের পতনে মনে হতে পারে এজবাস্টন নয়, ইডেনে বসে আছি। আশ্চর্যের হচ্ছে, ইংল্যান্ডে জন্ম এবং বড় হওয়া ‘ভারত আর্মি’-র সদস্যেরা অনেকে ফুটবলে ওয়েন রুনিদের সমর্থন করে এসেছেন। তাঁদের যুক্তি, ‘‘ফুটবলে ভারত নেই। আমরা বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে গিয়ে ইংল্যান্ডকেই সমর্থন করি। কিন্তু ক্রিকেট হলে কোনও আনুগত্য বিভাজনের ব্যাপার নেই। তখন একদম মেরে দেশ কী ধরতি...।’’
কিন্তু মর্গ্যানদের সমস্যা শুধু গ্যালারিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এ বারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সমস্ত মাঠ মিলিয়ে এজবাস্টনেই সব চেয়ে ঘূর্ণি পিচ হয়েছে। এখানেই স্পিনাররা সব চেয়ে বেশি সাহায্য পাচ্ছেন। আর সব দল মিলিয়ে ভারতের হাতেই যে সেরা দুই স্পিনার রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব আর যুজবেন্দ্র চহালকে এজবাস্টনে খেলতে গিয়েও মর্গ্যানদের মনে হতে পারে, ‘ভারতে’ খেলতে এসেছি।
আবার ইংল্যান্ডের সমর্থনেও বলা যেতে পারে, স্পিনের দেশ বলে বিখ্যাত ভারতই তো হালফিলে বার বার ভেঙে পড়ছে স্পিনের সামনে। গত বছর সাউদাম্পটনে মইন আলির সামনে আত্মসমর্পণ করেছে যারা, তাদের জন্য স্পিন উইকেটে কোন বীমাকরণ সংস্থা এগিয়ে আসবে? তার উপর চলতি বিশ্বকাপেই সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের স্পিনারদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন বেদী, চন্দ্র, প্রসন্ন, কুম্বলে, হরভজনদের দেশের ব্যাটসম্যানেরা। ইংল্যান্ডের হাতে অফস্পিনার মইন আলি এবং লেগস্পিনার আদিল রশিদ আছে। ভারতীয় মিডল অর্ডারকে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া রোগির মতো দেখাচ্ছে। বিরাট কোহালি শনিবারও পাশে দাঁড়ালেন বিজয় শঙ্করের। বললেন, ‘‘শঙ্কর খুব বড় ইনিংস খেলবে খুব শীঘ্রই।’’ ভারত অধিনায়ক বললেও শঙ্কর হঠাৎ চার নম্বরে কোনও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ হয়ে উঠবেন, কেউ আশা করছে না।
শনিবার বার্মিংহামে দাঁড়িয়ে আবার মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ডের আবহাওয়া কোথায়? এ তো এজবাস্টনের চিত্রনাট্যের সঙ্গে মিলিয়ে আবহাওয়াও পুরো ‘ইংলিশ ভিংলিশ’। এত দিন কোহালিরা যেখানে যাচ্ছিলেন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর বৃষ্টি ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। বার্মিংহামে তাঁদের স্বাগত জানাল ঝলমলে রোদ এবং কলকাতার কাছাকাছি গরম। শনিবার মাঝদুপুরে তিরিশ ডিগ্রির উপরে উঠবে বলেও পূর্বাভাস ছিল।
মানে সব দিক দিয়ে মর্গ্যানদের দেশে ‘ইন্ডিয়ান সামার’-এর মঞ্চ তৈরি। ভঙ্গুর ভারতীয় মিডল অর্ডার তার উপর নিজেরাই কোদাল চালিয়ে দেয় কি না, সেটাই শুধু দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy