ফুরফুরে: ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হচ্ছে আজ, বুধবার। মঙ্গলবার খোশমেজাজে অধিনায়ক বিরাট কোহালি। সাউদাম্পটনে। টুইটার। (ইনসেটে জন্টি রোডস)
বিশ্বকাপে সব চেয়ে দেরিতে খেলতে নামছে ভারত। বিরাট কোহালিরা নিশ্চয়ই কাজে নেমে পড়ার জন্য ছটফট করছে। আর প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা পাচ্ছে নেতিয়ে থাকা এক দক্ষিণ আফ্রিকা দল। আমি নিশ্চিত, ওদের হাত নিশপিশ করছে।
সবার শেষে খেলতে নামছে বলে প্রত্যেকটা দলকে দেখে নিতে পেরেছে বিরাটরা। পাশাপাশি, ওদের চাপের কথাটাও ভাবতে হবে। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব ভারতকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বলছে। সকলের চোখ বিরাটদের উপর। তবু আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব, বুধবার ভারতই জিতবে।
ভারত নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। শুরুতে যদি ভারত উইকেট না হারায়, তা হলে ওদের ব্যাটিং ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। কোহালি আছে। ধোনি আছে, যে কি না আবার দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে।
মনে হচ্ছে, চার নম্বরের ‘পাজল’টাও ভারত সমাধান করতে পেরেছে। কে এল রাহুলকেই সম্ভবত ওই জায়গায় ব্যাট করতে দেখা যাবে। আবার বিজয় শঙ্কর সম্পর্কেও শুনেছি, ওকে চার নম্বরে ব্যাট করানোর কথা ভাবা হচ্ছে। রাহুল অনেক বেশি স্থায়িত্ব দিতে পারবে দলকে। দারুণ স্ট্রোক খেলতে পারে। কিন্তু ওকে নিয়ে আমার একটাই অভিযোগ। নিজের উইকেটের উপর মূল্য বসায় না রাহুল। মাঝেমধ্যে খুব দায়সারা ভাবে উইকেট ছুড়ে দিয়ে চলে যায়। তখন দেখে খুব আফশোস হয় যে, কী ভাবে প্রতিভার অপচয় ঘটাচ্ছে! শুধু এই কারণেই এখনও দলের মধ্যে নিজের জায়গা পাকা করে তুলতে পারেনি ও।
বিজয় শঙ্কর মূলত বোলার-অলরাউন্ডার। এটাও দেখিয়েছে যে, বড় শট নিতে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ডের কঠিন পরিবেশে সফল হওয়ার মতো উৎকর্ষ আছে কি না, তার পরীক্ষা বাকি। যদি বিরাট ওকে খেলায়, তা হলে আর এক জন বোলারও হাতে পেয়ে যাবে। সেটা বিজয় শঙ্করের পক্ষে যেতে পারে। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করলে, যে কোনও দিন চার নম্বরে রাহুলকেই চাইব। কারণ, ও ম্যাচউইনার। কোহালিদের এটাও ঠিক করতে হবে যে, কেদার যাদবকে ছয় নম্বরে খেলাবে কি না। আবার এমনও হতে পারে যে, রাহুল আর শঙ্কর দু’জনেই খেলল আর কেদার বাইরে বসল। ভারতের বাকি দল মোটামুটি নিশ্চিত। রোহিত আর শিখর ওপেন করবে, তিনে বিরাট। তার পর ধোনি, হার্দিক পাণ্ড্য। আমার মতে, তিন পেসার বুমরা, ভুবনেশ্বর, শামি এবং এক স্পিনারে দল সাজানো উচিত। সেই এক স্পিনার হোক কুলদীপ যাদব। তবে আমি নিজে জানি, আমাদের দেশের ব্যাটসম্যানেরা কতটা স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্বল। তাই বিরাট যদি এক জন পেসার কমিয়ে বাঁ হাতি রবীন্দ্র জাডেজাকে খেলায়, তা হলেও অবাক হব না।
কোনও রাখঢাক না রেখে এটাও বলে রাখি যে, ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে আমাদের অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসির মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরবে। কী ব্যাটিং, কী বোলিং— এ বারে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের মধ্যে নমনীয়তা দেখতে পাচ্ছি না। আর সেটাই ওদের ভোগাচ্ছে।
ফ্যাফ নির্দিষ্ট একটা রণনীতি নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসার কথা বলেছে ঠিকই। কিন্তু প্ল্যান ‘বি’ তৈরি রাখাও তো জরুরি। তুমি হয়তো ভেবেছ গতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেবে। মাঠে নেমে দেখলে সেটা হচ্ছে না। বিকল্প রণনীতি তৈরি থাকবে না? দেখেশুনে মনে হচ্ছে, আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ভেবে রেখেছিল, যদি গরম থাকে তা হলে ব্যাটিং উইকেট হবে। তখন রানের মেশিন চালাও। আর আবহাওয়া মেঘলা থাকলে পেসারদের এগিয়ে দাও। আগুনে গতির উপর বেশি নির্ভর করছিল আমাদের অধিনায়ক। আমার মতে, ফ্যাফের সেই রণনীতি ব্যুমেরাং হয়েছে। এই মুহূর্তে তাই ওদের দিশেহারা দেখাচ্ছে।
সেই তুলনায় অন্যান্য বড় দলগুলির দিকে তাকান। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা ভারত কিন্ত দীর্ঘ সময় ধরেই অনেক গোছানো ক্রিকেট খেলছে। আমি তো বলব, এই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাকি সব দলই ঘর গুছিয়ে নিয়ে খেলতে এসেছে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার এই এলোমেলো অবস্থা ওদের মোটেও স্বস্তিতে রাখবে না। প্রথম দু’টি ম্যাচেই ওরা হেরে বসে আছে। সব চেয়ে চিন্তার কথা হচ্ছে, ভাল খেলতে না পেরে এই দু’টো ম্যাচ হেরেছে ওরা। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করতে গেলে মোটামুটি ভাবে ছ’টি ম্যাচ জিততে হবে। পাঁচটি ম্যাচ জিতলেও শেষ চারে যাওয়া হয়তো সম্ভব, তবে তখন তাকিয়ে থাকতে হবে নেট রানরেটের দিকে। তার মানে যা দাঁড়াচ্ছে, বাকি সাতটি ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতে জিততে হবে রাবাডাদের। ভারতের মতো দলের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের খোঁজ করাও সহজ নয়। একে তো ওরা অন্যতম ফেভারিট। তার উপর গ্যালারি ভর্তি থাকবে নীল জার্সিতে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা কোহালিদের দলের দ্বাদশ ব্যক্তি।
ভুলে গেলে চলবে না, সাউদাম্পটনের রোজ বোল, যেখানে বুধবারের ম্যাচ হবে, সেখানে কয়েক দিন আগেই পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ম্যাচে কী ঘটেছিল। ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে তুলেছিল ৩৭৩-৩। জবাবে পাকিস্তান তোলে ৩৬১-৭। তাই রোজ বোল যে এমনিতে দারুণ ব্যাটিং উইকেট, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার উচিত দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে শামসিকে খেলানো। তবে প্রথম একাদশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভারতই অনেক সুবিধেজনক জায়গায়। ওরা দু’জন রিস্টস্পিনারই (যাঁরা কব্জির ব্যবহারে স্পিন করান) খেলাতে পারে। যে-হেতু হার্দিক পাণ্ড্য আছে। বুমরা আর শামির সঙ্গে তৃতীয় পেসারের কাজ করে দিতে পারে ও।
দক্ষিণ আফ্রিকা চোট-আঘাতেও ভুগছে। ডেল স্টেন ছিটকে গিয়েছে বিশ্বকাপ থেকেই। কোহালির চেয়ে ভাল কেউ জানে না যে, ফিট স্টেন কত দুর্দান্ত ভাবে যে কোনও দলের বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিতে পারে। বিশ্বকাপে প্রথম একাদশ হাতে না পেলে যে কোনও অধিনায়কের কপালের ভাঁজ চওড়া হবে। হাসিম আমলা ইংল্যান্ডে এসেছিল চিন্তা নিয়ে। তার পর প্রস্তুতি ম্যাচে রান করল কিন্তু চোটও লাগল। অভিজ্ঞতার বদলে এই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে এখন তারুণ্যেরও ভিড় বাড়ছে। তাই মারক্রাম, ফেহলুকওয়েওদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলকে। এমনকি, কাগিসো রাবাডারও এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। ওকে নিয়ে যে রকম হইচই হচ্ছে, তা দেখে কে সেটা বলবে! একটা কথা বলি। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ভক্তরা নিশ্চয়ই এই বিশ্বকাপে এ বি ডিভিলিয়ার্সকে খুঁজবে। আমার পরামর্শ, এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এ বি-র বিকল্প চট করে পাওয়া যাবে না ঠিকই, তবে নতুনদের উপর ধৈর্য রাখাটাও দরকার। ওরা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভাল খেলেছে, কিন্তু বিশ্বকাপে চাপের মুখে পড়েছে। এই কারণেই অভিজ্ঞতার বিকল্প হয় না। তবু আমাদের দেশের জনতাকে মনে রাখতে হবে, খেলোয়াড় মাত্রেই এক দিন সে অবসর নেবে। এ বি আর মাঠে ফিরবে না। আমাদেরও ভবিষ্যতের রাস্তায় এগিয়ে যেতে হবে। (৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy