নজরে: ব্যাটিং অর্ডারে হার্দিককে নিয়ে নতুন ভাবনা গুরু রবি শাস্ত্রীর। এপি
টাইটানিকের যাত্রা শুরু হওয়ার শহরে বিরাট কোহালিদের জন্য হিমশৈল বলে যদি কিছু লুকিয়ে থাকে, তা হল চোট-আঘাতের অভিশাপ।
হিমশৈলে প্রথম আঘাত শিখর ধওয়নের ছিটকে যাওয়া। তাতে এখনও টাইটানিক ডুবির আশঙ্কা দেখা দেয়নি কারণ, ঋষভ পন্থের মতো বিকল্প হাতে রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ধাক্কা যেন লেগেই রয়েছে। ভুবনেশ্বর কুমারের ভবিষ্যৎ কী, কেউ জানে না। বিজয় শঙ্করের বাঁ পায়ে লেগেছে যশপ্রীত বুমরার ইয়র্কারে। এমনকি, কোচেদেরও তাড়া করছে চোটের আতঙ্ক।
ম্যাঞ্চেস্টারে ঋষভ পন্থের জোরাল শট এসে লেগেছিল ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরের পায়ে। এ দিন মহম্মদ শামির শট লাগল বোলিং কোচ বি অরুণের পায়ে। বেশ কিছুক্ষণ প্র্যাক্টিস থেকে দূরে বসে থাকতে হল তাঁকে। সহকারীরা এসে আইসপ্যাক বেঁধে দিলেন অরুণের পায়ে। মাঝামাঝি পর্বে তিনি ফিরে গেলেন প্র্যাক্টিসে। মাঠ ছাড়ার সময় অরুণ বলে গেলেন, ঠিক আছেন। কিন্তু সকলের মনে একটা রব উঠে গিয়েছে, প্র্যাক্টিসে কারও লাগল না তো? এক বার যুজবেন্দ্র চহাল জোর বাঁচলেন। নেট প্র্যাক্টিসে নেওয়া একটা শট এসে লাগতে পারত তাঁর গায়েও। আর যদি লাগত, তা হলে হাসতে হাসতে তাঁকে আর প্র্যাক্টিস ছেড়ে বেরোতে দেখা যেত না।
সাউদাম্পটনে কোহালিদের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। যারা টেবলে সবার নীচে রয়েছে। একটাও ম্যাচ জিততে পারেনি। আগের দিনই রশিদ খানদের তুলোধনা করে ইংল্যান্ড রেকর্ড রান তুলেছে। কিন্তু ভারতীয় শিবিরের দুশ্চিন্তা বাড়ার কারণ রয়েছে। চার নম্বর ব্যাটসম্যান কে হবেন, সেই ভূত ফিরে এসেছে শিখর ধওয়ন ছিটকে যাওয়ায়।
বিশ্বকাপের আগে থেকে এই চার নম্বর জায়গা নিয়ে জটলা শুরু হয়েছে। প্রস্তুতি পর্বে প্রথমে অম্বাতি রায়ডুকে এই ভূমিকায় ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের কাছাকাছি এসেই ফর্ম হারালেন তিনি। রায়ডুর বাদ পড়া নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। তিনি নিজে বিজয় শঙ্করের নির্বাচনকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘বিশ্বকাপ দেখার জন্য থ্রি ডি চশমা অর্ডার দিয়েছি।’’ তার আগেই নির্বাচকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদ যে বলেছেন, ‘‘বিজয় শঙ্কর থ্রি ডাইমেনশনাল ক্রিকেটার।’’ অর্থাৎ কি না, তিনি ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই অবদান রাখতে পারেন। সেই সময়ে টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করছিল, শঙ্করকেই চার নম্বর হিসেবে খেলাবে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজ়িল্যান্ডে শঙ্করের শৃঙ্খলাপরায়ণ ব্যাটিং দলের মস্তিষ্কদের আশাবাদী করে তুলেছিল। সমস্যা হচ্ছে, শিখর বাইরে যাওয়ার পাশাপাশি শঙ্করের সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কোহালিদের চার নম্বর ‘পাজ্ল’ সমাধান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন কে এল রাহুল। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য এর মধ্যে বলছিলেন, ‘‘রাহুলকে আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল, তোমাকে চারে ব্যাট করতে হতে পারে। সেই মতো প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল ও।’’ সেই প্রস্তুতি বিগড়ে গিয়েছে ধওয়নের চোট লাগায়। রাহুলকে ম্যাঞ্চেস্টারেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওপেন করতে হয়েছে রোহিত শর্মার সঙ্গে। এখন তাই পুরনো সেই প্রশ্ন ফিরে এসেছে, ভারতের চার নম্বর ব্যাটসম্যান তা হলে কে হবেন? এমনিতে চোট নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেও ভারতীয় শিবিরে খুব নুইয়ে পড়া শরীরী ভাষা দেখা যাচ্ছে না। আইসিসি-র উদ্যোগে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ক্রিকেট খেলায় খুব হইহই করে যোগ দিলেন কোহালিরা। বাচ্চা মেয়েদের বল করে উৎসাহ দিলেন স্বয়ং ভারত অধিনায়ক। পরে সকলের সঙ্গে ছবি তুললেন, অটোগ্রাফ দিলেন। টিম বাস ছেড়ে দিচ্ছে কিন্তু কোহালি তখনও বাচ্চাদের অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছেন। গ্রুপ ছবি তোলার সময় নিজের মোবাইল বের করে পরিচিত এক জনকে দিলেন ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। পরে সেই ছবি নিজে টুইটও করলেন।
কিন্তু এর মধ্যেই চলছে ক্রিকেটীয় মারপ্যাঁচ। কে হবেন তা হলে ভারতের চার নম্বর? সাউদাম্পটনে আসা ইস্তক প্র্যাক্টিসে যা দেখা গিয়েছে, হার্দিক পাণ্ড্য ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। তাঁকে শুরুতে ব্যাট করানো হচ্ছে, যার অর্থ নতুন বলে প্র্যাক্টিস করানো হচ্ছে তাঁকে। হার্দিককে নিয়ে আলাদা ক্লাস করতে দেখা গেল হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত দু’টি ম্যাচে হার্দিক ব্যাট করেছেন চার নম্বরে। কিন্তু সেটা করা হয়েছিল কারণ শুরুতে অনেক রান তুলে দিয়েছিলেন প্রথম তিন ব্যাটসম্যান। প্রশ্ন হচ্ছে, কোনও দিন যদি ভারত ১০ রানে দুই উইকেট হারায়, সে দিন চার নম্বর কে হবেন? এ দিন সাউদাম্পটনে দেখা গেল, হার্দিককে নতুন বলের সামনে অনুশীলন করানো হল। দেখে মনে হল, হার্দিককে উপরে ব্যাট করানোর ফাটকা খেলার দরজা খোলা রাখা হচ্ছে। আর নয়তো কার্তিক অথবা পন্থের মধ্যে কাউকে এই ভূমিকা দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বিজয় শঙ্করকে বাইরে বসতে হবে। আর একটা মত হচ্ছে, দ্রুত উইকেট পড়লে চার নম্বরে ধোনি বা কেদার যাদবকে তুলে এনে হার্দিক আর পন্থকে ‘ফিনিশার’ হিসেবে রাখো। ভারতীয় দলের প্র্যাক্টিসে এ দিন আরও একটা বিশেষ মহড়া দেখা গেল। টেনিস বলে ছুড়ে ছুড়ে ব্যাটসম্যানেরা আড়াআড়ি শট মারার অনুশীলন করছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ইংল্যান্ডের থেকে শর্ট বলের বৃষ্টি আশা করছেন হার্দিকরা। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য তৈরি হওয়ার ফাঁকে বড় প্রতিপক্ষদের খেলার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে কোহালির দলের।
হিমশৈলে ধাক্কা লেগে টাইটানিক ডুবে গিয়েছিল চার ঘণ্টায়। কোহালিরা তাঁদের বিশ্বকাপ তরীকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবেন?
সময় বলবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy