বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের ভাঙা দরজা। যা নিয়ে বিতর্ক। ছবি: টুইটার
শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে আজ, রবিবার ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। কিন্তু ট্রফির লড়াই বা মুশফিকুর রহিমদের নাগিন নাচকে ছাপিয়ে শনিবারেও শিরোনামে রয়েছে শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের উত্তপ্ত আবহ।
শুক্রবার রাতে শেষ ওভারের রুদ্ধশ্বাস নাটকের পরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। কিন্তু মাঠের মধ্যে দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় নিয়ে উত্তাল ক্রিকেট দুনিয়া। ‘নো’ বল না দেওয়ায় দল তুলে নিতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শাকিব-আল-হাসান।
ঝামেলা মাঠের বাইরে পর্যন্ত গড়ায়। শুক্রবার রাতের দিকেই সোশ্যাল মিডিয়া একটি ছবি চাঞ্চল্য ফেলতে শুরু করে। দেখা যায়, বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের কাচের দরজা ভাঙা। অভিযোগের আঙুল উঠছে বাংলাদেশের দিকে, যে-হেতু তাদের ড্রেসিংরুমের দরজা ভেঙেছে। তবে সত্যিই দরজাটি বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা ভেঙেছেন কি না, তার প্রমাণ শনিবার রাত পর্যন্ত মেলেনি।
আইসিসি ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড ঘটনার তদন্ত করছেন। তিনি সিসিটিভি ফুটেজ দেখছেন বলে জানা গিয়েছে। ক্রিকেটারদের খাদ্য সরবরাহ করা কর্মীদের কয়েক জনের সঙ্গে ব্রড কথা বলেছেন। সম্ভবত তাঁরা ড্রেসিংরুমের আশেপাশেই ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন কে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিন্তু ব্রড শুধুমাত্র সেই কর্মীদের কথার ভিত্তিতে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছেন না বলে জানা গিয়েছে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান থিলঙ্গা সুমাথিপালাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এমন আচরণ দুর্ভাগ্যজনক। একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
শুক্রবারের ম্যাচটি যারা জিতত, সেই দলই ফাইনালে খেলত। সেই কারণে এমনিতেই উত্তেজনার আবহ তৈরি ছিল। শেষ ওভারে জেতার জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ১২ রান। শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানার বলে স্ট্রাইক নিচ্ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। মাথার উপর দিয়ে যাওয়া দু’টি বলের একটিতেও ‘নো’ ডাকেননি আম্পায়ার। ওভারে একটি বাউন্সার দেওয়ার নিয়ম আছে। দ্বিতীয়টি কেন ‘নো’ হবে না, তা নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন মাহমুদুল্লাহ্।
তাঁকে স্ট্রাইক দিতে গিয়ে রান আউট হন মুস্তাফিজুর। বাংলাদেশের ডাগ-আউট থেকে এই সময় মাঠে নুরুল হাসান জল নিয়ে ছুটে আসেন। তাঁর সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরার। কেন নুরুল মাঠে ঢুকেছেন, সম্ভবত সেটা নিয়ে সওয়াল করতে থাকেন পেরেরা-রা। তত ক্ষণে আবার বাংলাদেশের অধিনায়ক শাকিব-আল-হাসানকে দেখা যায়, সাইডলাইনের ধার থেকে ইঙ্গিত করছেন, দলকে বেরিয়ে আসার জন্য। মাঠের মধ্যে শান্ত ছিলেন মাহমুদুল্লাহ্। তিনি অধিনায়কের নির্দেশ অমান্য করেই মাঠে থেকে যান এবং দুরন্ত জয় ছিনিয়ে নেন। তৃতীয় বলে চার মেরে দেন বাংলাদেশের নায়ক। চতুর্থ বলে নেন দু’রান। শেষ দুই বলে ছয় রান দরকার, এই অবস্থায় পঞ্চম বলেই ছক্কা মেরে দেন মাহমুদুল্লাহ্। তিনি অপরাজিত থেকে যান ১৮ বলে ৪৩ রান করে। তার পরেই মাঠে ঢুকে বাংলাদেশের গোটা দল শুরু করে দেয় নাগিন নৃত্য। তখন আবার শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের কয়েক জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ কোর্টনি ওয়ালশ এসে তাঁর ক্রিকেটারদের সরিয়ে নেন।
বাংলাদেশের অধিনায়ক শাকিব এবং মাঠের মধ্যে জল নিয়ে এসে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া নুরুল হাসান-কে ম্যাচ ফি-র ২৫ শতাংশ জরিমানা করেছেন ম্যাচ রেফারি। শাকিব ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে বলে যান, তাঁর উচিত হয়নি মাথা গরম করা। ‘‘আবেগের বশে আমি হয়তো বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব। আসলে দ্বিতীয় বলটা আমাদের মনে হয়েছিল নো হওয়া উচিত। সেটা না দেওয়াতেই মেজাজ হারিয়েছিলাম।’’ প্রসঙ্গত, এই টুর্নামেন্টে সব ম্যাচই পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন শ্রীলঙ্কান আম্পায়াররা।
এ দিকে, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড শাকিবদের আচরণের সমালোচনা করলেও বাংলাদেশ বোর্ড পুরস্কার ঘোষণা করে দিয়েছে তাঁদের জন্য। এই জয়ের জন্য তাদের ক্রিকেটারদের এক কোটি টাকা বোনাস দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শাকিবদের দেশের বোর্ড কর্তারা। সঙ্গে বলেছেন, ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে ট্রফি জিততে পারলে আরও বড় পুরস্কার অর্থ অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy