হিউম যখন ভোকাল টনিক।
ইয়ান হিউমই এখন হাবাসের টিমের মনোবিদ!
মাতেরাজ্জির টিমের কাছে বিশ্রী হারের পর ঘরে ঘরে ঘুরে সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করছেন আটলেটিকো কলকাতার স্ট্রাইকার। গত বার কেরল-চেন্নাই ম্যাচের অভিজ্ঞতার কথা বলে আশার প্রদীপে আলো জ্বালিয়ে টিমকে চাঙ্গা করতে চাইছেন প্রাক্তন কেরল ব্লাস্টার্স স্ট্রাইকার। রবিবার সন্ধ্যায় পুণে থেকে শহরে ফেরার বিমানে বসে হিউম বলছিলেন, ‘‘গত বার আমার সেমিফাইনাল ম্যাচে একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কেরলে নিজেদের মাঠে ৩-০ এগিয়ে ছিলাম আমরা। চেন্নাইয়ে গিয়ে সেটা ৩-৩ হয়ে গিয়েছিল। পরে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে ফাইনালে উঠেছিলাম। এটাই বোঝাচ্ছি সবাইকে। ঘরে, ডিনার টেবলে, লাঞ্চ টেবলে দেখা হলেই বলছি। দেখবেন আমরাই ফাইনালে যাব। ফুটবলে সব হতে পারে। আমি তো আশা ছাড়ছি না।’’
অঙ্কের বিচারে হতে পারে তো সবই। আশাও শেষ হয়ে যায়নি হাবাসের টিমের। কিন্তু আটলেটিকো দে কলকাতার টিমের যা অবস্থা! মেন্ডোজা-জেজেদের বিরুদ্ধে শনিবার যিনি চোট পেয়ে চলে যাওয়ার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল কলকাতার রক্ষণ, হজম করেছিল আরও দু’টো গোল, সেই বোরহা ফার্নান্ডেজ তো বুধবার খেলতেই পারবেন না। এ দিন দেখা গেল হাঁটুতে বরফ বেঁধে খোঁড়াচ্ছেন। কলকাতার বর্তমান অধিনায়ক বলেও দিলেন, ‘‘বুধবার খেলতে পারব না। ভাল করে তো এখনও হাঁটতেই পারছি না। খেললে চোটটা বেড়ে যাবে।’’
যুবভারতীতে বুধবার মাতেরাজ্জিরা শক্তি বাড়িয়ে ইলানো, মেহরাজদের নিয়ে নামবেন। কার্ডের জন্য যাঁরা প্রথম ম্যাচে ছিলেন না। তাঁদের মেন্ডোজা এবং ব্রুনোর সামান্য চোট থাকলেও— দু’জনেই খেলবেন বলে খবর। সেখানে বোরহা না খেললে হয়তো ভালদো এবং নাতোকে দুই স্টপারের সামনে খেলাবেন আন্তোনিও হাবাস।
হিউমের দলকে চাঙ্গা করার টোটকার পাশাপাশি দ্যুতি-অর্ণবদের আরও একটা পরিসংখ্যান দিয়ে চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে। সেটা অবশ্য সামনে এনে দিলেন সামিগ দ্যুতিই। ঘাড় এবং সারা গায়ে তাঁর ছোট ছোট ফোঁড়ার মতো মাংসের ঢিবি। কীভাবে এটা হল তা নিয়ে প্রশ্ন করলেই গুটিয়ে যান ছোট্টখাট্টো চেহারার ছেলেটি। তবে ৩-০ থেকে ৩-৩ করা সম্ভব কি না এই প্রশ্নে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডিও কিন্তু সরব। বলছিলেন, ‘‘তিন কেন? সেটা চারও তো হতে পারে। আমরা গোয়া এবং মুম্বইয়ের মতো টিমকে চার গোল দিয়েছি। এখানে এসে দেখলাম সব টিমের মধ্যে ফারাক সামান্যই। আরও নব্বই মিনিটের যখন সুযোগ আছে তা হলে তা নেওয়ার চেষ্টা করতেই হবে।’’ দ্যুতির কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় গ্যাভিলান, নাতো বা অমরিন্দর সিংহের সঙ্গে কথা বললেও।
তবে হিউম-দ্যুতিদের উল্টো সুরও যে টিমে নেই তা নয়। যেমন অর্ণব মণ্ডলের মন্তব্য বেশ বাস্তবোচিত। ‘‘তিন গোল আমরা করতে পারি। সে ক্ষমতা আমাদের টিমের আছে। কিন্তু যদি একটা গোল খেয়ে যাই। এটাই তো চাপের। কোনও মতেই গোল খাওয়া চলবে না।’’
ডুবে যাওয়ার মুখে খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা সবাই করে। ফাইনালে যাওয়ার প্রশ্নে ভেন্টিলেশনে যাওয়ার পর এটিকে করছে। পেশাদারিত্বে শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যেতে হয়। বুধবার যুবভারতীতে বেঁচে থাকার আরও নব্বই মিনিট পাওয়া যাবে, সে জন্যই হাবাসের টিমও নিজেদের চাঙ্গা করছে। জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা করছে আশার প্রদীপ।
আন্তোনিও হাবাস এ দিন হোটেলের লবিতে মুখে কুলুপ আটলেও পরে বিমানে ওঠার পর মুখ খুললেন। সেলফিতে ছবি তুলছেন প্রত্যাশীদের সঙ্গে। জোর করে মুখে হাসি এনে। হোটেলে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘কাল অনেক কিছু হয়েছে। মাঠের বাইরের ফ্যাক্টর কাজ করেছে আমাদের হারের পিছনে।’’ দেড় বছরের আটলেটিকোর মধুচন্দ্রিমায় প্রথমবার তাঁর নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তিনি মাঠের বাইরের ফ্যাক্টর বলে কী বোঝাতে চাইলেন, বোঝা গেল না। রেফারিংয়ের দিকেই হয়তো অভিযোগের তির। কিন্তু এর ঘণ্টা চারেক পর পুণে এয়ারপোর্টে বসে ন্যাড়া মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, ‘‘জানেন কাল সারারাত ঘুমোতে পারিনি। বুঝতেই পারছি না, তিন গোল কীভাবে হয়ে গেল। অ্যাওয়ে ম্যাচে হারতে পারে টিম। এক গোল হলে ঠিক ছিল। তা বলে তিন গোল।’’ কিন্তু চেন্নাই তো এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েও নিজেদের ঘরের মাঠে ৩-৩ করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে গিয়েছিল? হাবাস মাথায় ফের হাত দিলেন। ‘‘সব সিচুয়েশেন সব সময় এক হয় না। আমাদের অনেক কিছু ঠিক করে মাঠে নামতে হবে। এক্সট্রা লড়াই দিতে হবে।’’
এক সিনিয়র ফুটবলার বলছিলেন, ‘‘কোচ তো আমাদের বিরতিতে বলে দিয়েছিলেন, এক গোল ঠিক আছে। আর গোল যেন না হয়। তা সত্ত্বেও সবাই কেন হুড়মুড় করে উঠে গেল বুঝলাম না। তিন গোলটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। ফিরে আসা কঠিন।’’ ওই ফুটবলারের কথা শুনে মনে হল, হাবাসের স্ট্র্যাটেজি মেনে হয়তো খেলেনি টিম। সে জন্যই প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত এবং হতাশ হয়ে রয়েছেন তিনি। অনেকটা হিউমের মতো। এটিকের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিউম বিমানে বসে বলছিলেন, ‘‘অনেকে বলছে আমি নাকি গোল্ডেন বুটের জন্য খেলছি। না একেবারেই না। আমার কাছে টিম সবার আগে। মেন্ডোজার তো ১২টা গোল হয়ে গেল। ওর বুট পাকা। আমি ট্রফিটা চাই।’’
কেন এ ভাবে ভেঙে পড়ল আপনার টিম? প্রশ্ন শুনে অনর্গল কথা বলতে ভালবাসা হিউমের জবাব, ‘‘সেটাই তো খোঁজার চেষ্টা করছি আমরা।’’ সবাই বলছে, মাতেরাজ্জির টিম প্রথম থেকে পা চালিয়ে খেলে আপনাদের টিমকে ভয় খাইয়ে দিয়েছিল? হিউম মানতে রাজি হলেন না। ‘‘মাতেরাজ্জির টিম সব সময়ই এ রকম টাফ ফুটবল খেলে শুরুতে। ও সেই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে তো সফল। আমরা পারিনি।’’
হতাশা, আশা, আশঙ্কা মিলে মিশে একাকার। এই অবস্থায় রবিবার রাত সাড়ে দশটায় কলকাতায় ফিরল আটলেটিকো। হাতে আর মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা। তার পরই ৩-৪ করার লড়াই। ফাইনালে ওঠার জন্য আরও নব্বই মিনিট। কলকাতা পারবে?
ছোটবেলায় ভাল ছাত্র ছিলেন। ফুটবল খেলতে খেলতে এক বছর মাদ্রিদে ডাক্তারি পড়েছিলেন হাবাস। কিন্তু খেলার জন্য শেষ পর্যন্ত তা শেষ করা হয়নি। বিষয় ছিল মেডিসিন।
রবিবার সারা দিন হাবাসের থেকে এবং কথা বলে মনে হল এখনও এমন কোনও ওষুধ তিনি খুঁজে পাননি, যা থেকে চেন্নাইয়ানকে চার গোল দিয়ে ফাইনালে উঠতে পারে আটলেটিকো। ওষুধের খোঁজে যে আরও দু’দিন বিনিদ্র থাকতে হবে। খুঁজতে হবে টোটকা।
মনোবিদ হয়ে ওঠা হিউম নন। হাবাসই কিন্তু এই টিমটার ব্যান্ডমাস্টার। আসল ডাক্তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy