Advertisement
E-Paper

লিঙ্গভিত্তিক হেনস্থা ও হিংসা দমনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতা শিবির, ইউজিসি-র কর্মসূচি নিয়ে অনেক প্রশ্ন

কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা দোষীদের কঠোর শাস্তি, পরিস্থিতির যথাযথ পর্যালোচনা এবং নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও মতামত পেশ করেছেন।

Awareness Campaign Against Workplace Gender Violence.

প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০৭
Share
Save

বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের মতো জায়গায় মহিলাদের বিভিন্ন কারণে হেনস্থার বিষয়টি নিয়মিত শিরোনামে দেখা যায়। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সেই বিষয়টির উপর জোর দিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে সচেতনতা শিবিরের ব্যবস্থা করতে হবে। এই শিবিরের মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক হেনস্থা ও হিংসা দমন, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষিত রাখার মতো বিষয়গুলি নিয়ে সচেনতা বৃদ্ধি করা হবে।

ইউজিসি-র তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকায় কোন কোন নম্বরে ফোন করলে দ্রুত সহযোগিতা মিলবে, কোন আইনের অধীনে কী ধরনের অপরাধের শাস্তি রয়েছে, ‘শি বক্স’ কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, প্রয়োজনে সমাজমাধ্যমের সাহায্য কী ভাবে নেওয়া যেতে পারে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি পড়ুয়াদেরও এই কর্মসূচিতে শামিল করার মতো একাধিক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২৫ নভেম্বর বিশ্ব নারী নিযার্তন প্রতিরোধ দিবস। চলতি বছর এই দিনটিকে ঘিরে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে ‘ইউনাইট ক্যাম্পেন’ শুরু হয়েছে, যা চলবে ১০ ডিসেম্বর (আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস) পর্যন্ত। এই বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত এক মহিলা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, কাজের জায়গায় অতিরিক্ত চাপের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মহিলাদের বক্রোক্তি, পুরুষতান্ত্রিক চাপেরও শিকার হতে হয়। কাজের জায়গায় এই বিষয়ে তাই কোনও বিশেষ দিন উপলক্ষে নয়, বরং নিয়মিত ভাবে কাউন্সেলিং এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার ব্যবস্থা রাখা দরকার।

কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা সহমত পোষণ করেছেন। কিন্তু, একই সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় নিয়েও প্রশ্নও রেখেছেন তাঁরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যাপিকা জয়তী কুমার বলেন, “বিশাখা কমিটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়ে এসেছে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সেই সমস্ত কমিটি মহিলাদের উপর হেনস্থার অভিযোগকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, এবং মহিলারাই বা কতটা সাবলীল ভাবে সমস্যার বিষয়ে কথা বলতে পারছেন, সেটা দেখার মতো লোক কোথায়?”

ইউজিসির তরফে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কলেজের অধ্যক্ষদের সচেতনতা শিবির সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে বেথুন কলেজের মনোবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নীলাঞ্জনা বাগচী জানিয়েছেন, কাজের জায়গায় কোনটা হেনস্থা এবং কোনটা নির্যাতন— এই বিষয়টি বহু মহিলাই বুঝে উঠতে পারেন না। তাই এই বিষয় নিয়ে সচেনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ধরনের কর্মসূচি অতি অবশ্যই প্রয়োজন। একই সঙ্গে এই কর্মসূচির ফলাফল কী, তা-ও উচ্চস্তরে জানানো দরকার। তবে শুধু খাতায়কলমে নয়, কর্মক্ষেত্রে নির্দেশিকাগুলি কার্যকারীও করতে হবে।

ইউজিসি (যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ) বিধি ২০১৫ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এই আইনে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হলে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই। সে ক্ষেত্রে মহিলাদেরই নিজে থেকে নীরবতা ভাঙতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে নিজের স্বার্থে, মত সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর তপোলগ্না দাসের। তিনি আরও বলেন, “কর্মরত মহিলাদের ক্ষেত্রে হেনস্থা এবং তার প্রতিরোধ সম্পর্কিত বিষয়ে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোন সমস্যার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা কর্মচারীদের জানানোর দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানেরই।”

কর্মরত পুরুষেরা এই ধরনের কর্মসূচির বিষয়টিকে কী ভাবে দেখছেন? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক অধ্যাপক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে এই ধরনের কর্মসূচি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজিক্যাল স্টাডিজ় বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জয়ন্তকুমার বিশ্বাসের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে পদের ভিত্তিতে সব কর্মীদের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং সম্মানের সহাবস্থান ভীষণ প্রয়োজন। শুধুমাত্র কর্মসূচি পালন করে নয়, সার্বিক ভাবে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তাই এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ এবং কঠোর হতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত এক আধিকারিকও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র কর্মসূচি পালনেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, পুরুষদের আত্মতুষ্টির অভ্যাসও ছাড়তে হবে এবং লিঙ্গবৈষম্য সংক্রান্ত ধারণা স্পষ্ট করতে হবে।

UGC Workplace Women Safety Work Place Professors

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।