Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ট্রাউকে উড়িয়ে প্রথম জয় মোহনবাগানের

পরপর দু’দিন মণিপুরের দুটি ক্লাব এ ভাবে কলকাতার দুই প্রধানের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে এই দৃশ্য দেখেনি ভারতীয় ফুটবল। 

নায়ক: কল্যাণীতে জোড়া গোল গঞ্জালেসের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নায়ক: কল্যাণীতে জোড়া গোল গঞ্জালেসের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২১
Share: Save:

মোহনবাগান ৪ • ট্রাউ ০

চব্বিশ ঘণ্টা আগে ইস্টবেঙ্গলের সূর্যোদয় ঘটেছিল পাহাড়ে।

বুধবার সমতলে পূর্ণিমার চাঁদ যেন দেখা দিল মোহন-আকাশে।

আরও চমকপ্রদ ঘটনা, আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলের চার গোলের পাল্টা চার গোল দিয়েই শেষ পর্যন্ত থামল কিবু ভিকুনার ছেলেরা। বলা যায়, চারের বদলা চার। পার্থক্য অবশ্য একটা আছে, ইস্টবেঙ্গল এক গোল খেয়েছিল নেরোকার কাছে, মোহনবাগানে এ দিন তা-ও হয়নি।

পরপর দু’দিন মণিপুরের দুটি ক্লাব এ ভাবে কলকাতার দুই প্রধানের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে এই দৃশ্য দেখেনি ভারতীয় ফুটবল।

চার্চিলের কাছে বিশ্রী হারের পরে মোহনবাগান সমর্থকরা এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে, কল্যাণী স্টেডিয়ামের অর্ধেকও ভর্তি হয়নি। সাড়ে আট হাজারের বেশি কিছু দর্শক, যাঁরা আশায় বুক বেঁধে এসেছিলেন তাঁরা অবশ্য আই লিগে এই মরসুমে ফ্রান গঞ্জালেসদের সেরা জয়টা দেখলেন। পাশাপাশি ট্রাউয়ের বিরুদ্ধে এ দিনের এক তরফা জয় শুধু কিবুর কলকাতায় কোচিং জীবনের মেয়াদ বাড়াল না, পুরো মোহনবাগান ড্রেসিংরুমের গুমোট ভাবটাই বদলে দিল। সেটা এতটাই যে, ম্যাচের সেরা গঞ্জালেস পুরস্কার নেওয়ার সময় স্ত্রী আর পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে উঠতে চাইলেন। তাঁর সেই ইচ্ছা ফেডারেশনের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। তবে শেষ গোলটি দেওয়ার পরে শুভ ঘোষ যে ভাবে রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে এসে কোচকে সেনা-কায়দায় স্যালুট করে গেলেন, তা থেকে স্পষ্ট কী পাহাড় প্রমাণ চাপ নিয়ে পাহাড়ি দলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল কিবু-বাহিনী। মোহনবাগান কোচ অবশ্য ম্যাচের পরে রীতিমতো দার্শনিক হলেন। বলে দিলেন, ‘‘যদি খেলার বিচার করেন তা হলে আগের চার্চিল ম্যাচে আমরা হারলেও সে দিন আজকের চেয়েও ভাল খেলেছিলাম।’’

ডগলাস দা সিলভার দল কেমন খেলল? দু’টো তথ্য দিলে তা পরিষ্কার হবে। এক) প্রথমার্ধে মোহনবাগান গোলকিপার শঙ্কর রায় মাত্র দু’বার বল ধরলেন। দুই) ডগলাসের কোচিংয়ে থাকা ক্লাব ১০০-র মধ্যে ৭০টা ভুল পাস করেছে। মোহনবাগান দলে এ দিন দুটি পরিবর্তন করেছিলেন কিবু। গোলে দেবজিৎ মজুমদারের জায়গায় শঙ্কর। আর মাঝমাঠে ব্রিটো পি-র জায়গায় জেসুরাজ। চোট পেয়ে জেসু বেরিয়ে আসেন তিরিশ মিনিটে। আর শঙ্কর দ্বিতীয়ার্ধে ট্রাউয়ের মার্সেল সিলভার একটি শট বাঁচালেন দক্ষতা দেখিয়ে। তবে দল নামানোয় সেরা চমক এই প্রথম সালভা চামোরোর জায়গা হয়নি প্রথম আঠারোয়।

পাহাড় থেকে নেমে আসা এ দিনের ট্রাউ সম্পর্কে ‘নির্বিষ’ শব্দটা প্রয়োগ করা যেতে পারে। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য দশ দিন আগেই কলকাতায় চলে এসেছিল ট্রাউ। কিন্তু মাঠে তার কোনও প্রভাব ছিল না। ডগলাসের মতো ক্ষুরধার বুদ্ধির ফুটবলার, কোচ (তালিকায় অবশ্য কোচের নামের জায়গা ফাঁকা ছিল) হিসাবে রিজার্ভ বেঞ্চে হাজির। অথচ পুরো দলটির খেলায় কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। ময়দানের ছোট দলগুলো যে ভাবে সাত-আট জন মিলে রক্ষণ সামলায়, সে ভাবেই শুরু থেকেই গুটিয়ে থাকল আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে উঠে আসা ট্রাউ। আগের চার্চিল ম্যাচে ধরাশায়ী কিবুর দলের চাপ তাই অনেকটাই কমে গিয়েছিল। মোহনবাগানের কাছে সেটাই ‘অক্সিজেন সিলিন্ডার’ হয়ে গেল। আর সেই সুযোগটা শুরু থেকে কাজে লাগিয়ে আই লিগের প্রথম জয়ের সরণিতে উঠলেন ফ্রান মোরান্তেরা। সেট পিস থেকে প্রথম গোলটা হয়ে গেল পাঁচ মিনিটেই। দুই স্পেনীয়র যুগলবন্দিতে। বেইতিয়ার কর্নার থেকে হেডে গোল করে গেলেন ফ্রান গঞ্জালেস। কোনও প্রতিরোধই হল না। আশুতোষ মেহতা উইং ধরে অবলীলায় উঠে গিয়ে সুহেরকে বল বাড়ালেন। কেরলের ছেলেকে কেউ বাধা দিল না। ২-০ হয়ে গেল। বিরতির পরের মিনিটেই পালতোলা নৌকার সওয়ারিদের তিন নম্বর গোলটা আরও মজার। বেইতিয়ার ফ্রি-কিক যখন ট্রাউ বক্সে পড়ল, তখন ডগলাসের দলের পুরো রক্ষণ অফসাইড ভেবে দাঁড়িয়ে। পঞ্চাশ নম্বর জার্সির ফ্রান গঞ্জালেস তাঁর দ্বিতীয় গোলটা করে ফেললেন। সংযুক্ত সময়ে বিরাটির ছেলে শুভ শেষ গোলটা করলেন আর এক বদলি শেখ ফৈয়জের ক্রস থেকে।

চার গোলের মসৃণ জয়। কিবু এবং তাঁর বাহিনীর চাপমুক্ত হয়ে ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’ দিয়ে মাঠ ছাড়া— এ সব দেখে স্বস্তি পেতে পারেন মোহনবাগান সমর্থকরা। কিন্তু বেইতিয়াদের আসল পরীক্ষা পরের সোমবার। শক্তিশালী গোকুলমের সঙ্গে। যে ক্লাব ডুরান্ড ফাইনালে শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাবকে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে গিয়েছিল

কলকাতা থেকে।

মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা, ড্যানিয়েল সাইরাস, ফ্রান মোরান্তে, গুরজিন্দর কুমার, রোমারিও জেসুরাজ (শেখ সাহিল), জোসেবা বেইতিয়া (শেখ ফৈয়জ), ফ্রান গনঞ্জালেস, নংদাম্বা নওরেম, ভি পি সুহের (শুভ ঘোষ), জুলেন কলিনাস।

ট্রাউ: গুরপ্রীত সিংহ, দিনেচন্দ্রম মিতাই, সন্দীপ সিংহ, ইসিনিদি ইসাক, প্যাট্রিক উচে, তন্ময় ঘোষ (দীপক দেবরানি), অ্যাঙ্গুসানা লুয়াং, লোকেন মিতেই (কৃষ্ণানন্দ সিংহ), মিতেই মিসাংগেরাম, কোফি টেটে (প্রিন্সওয়েল এমেকা), মার্সেল সিলভা।

অন্য বিষয়গুলি:

Football I League 2019 Mohun Bagan TRAU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy