মুরলীধরনের ক্লাসে সৌরাশিস লাহিড়ী। রবিবার সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আগের রাতে শহরে পা রেখে মুরলী এ দিন সকালেই নেমে পড়লেন ভিশন ২০২০-র স্পিনার-ছাত্রদের নিয়ে। জুনিয়রদের উন্নতি দেখে বেশ খুশি মুরলী মূলত তাঁদের বোলিং অ্যাঙ্গলে বৈচিত্র বাড়ানোর পরামর্শ দেন। ছবি: উত্পল সরকার
ক্রিকেটবিশ্ব জুড়ে চাকার ধরার জাল পেতেছে আইসিসি? না, তা মানতে রাজি নন বিশ্বের সেরা অফ স্পিনার মুথাইয়া মুরলীধরন। যাঁকে এক সময় এই চাকিংয়ের দায়ে প্রচুর নাকানি চোবানি খাইয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা। সাম্প্রতিক এই উদ্যোগে বরং আইসিসি-র চেয়ে আম্পায়ারদের বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন তিনি।
আজমল, নারিনদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মুরলী চিন্তিত নন। কারণ, তাঁর বিশ্বাস ওঁরা নিজেদের অ্যাকশন শুধরে ফিরে আসতে পারবেন।
রবিবার শহরের স্পিন-প্রতিভা অন্বেষণের দ্বিতীয় সফরে এসে এমনই বললেন আটশো টেস্ট উইকেট শিকারি এই কিংবদন্তি অফ স্পিনার। যিনি নিজের বোলিং অ্যাকশন শোধরানোর লড়াই করেই ক্রিকেট জীবনের অনেকটা কাটিয়েছেন।
মুরলীকে যে সময় বারবার তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে, সেই সময় স্পিন বোলারদের কনুই ভাঙার সীমা ছিল ৫ ডিগ্রি। এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ ডিগ্রিতে। তা সত্ত্বেও আজমল, নারিনরা সন্দেহের তালিকায় ঢুকে পড়ায় সামান্য হলেও অবাক মুরলী। সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে রবিবার বলেন, “জানি না কী করে ওদের অ্যাকশন সন্দেহের তালিকায় চলে এল। তবে মনে হয় ওরা ফিরে আসতে পারবে। জীবনে কিছুই অসম্ভব নয়। আমিও তো পেরেছি। নিয়ম, সীমার মধ্যে নিজেকে রাখার চেষ্টা করলেই এটা সম্ভব।”
চাকিং নিয়ে আইসিসি-র উদ্যোগ কথাটাতেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন একাধিকবার। বললেন, “আইসিসি করছে বলছেন কেন? করছে তো আম্পায়াররা। কাদের অ্যাকশন সন্দেহজনক, সে তো খঁুজে বের করছে ওরাই। তার পর সেই বোলারদের বায়োকেমিক টেস্টে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই বোঝা যাচ্ছে কোথায় ভুল হচ্ছে তাদের। আর ভুলটা ঠিকমতো বের করে নিতে পারলেই তো তা ঠিকভাবে শোধরানো যায়। আজমলদেরও তাই নিজেদের শোধরাতে অসুবিধা হবে না।”
ঊনিশ বছর আগে, ১৯৯৫-এ মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে ড্যারেল হেয়ার সাত বার তাঁর বল ‘নো’ ডেকেছিলেন অ্যাকশনের জন্য। যা নিয়ে পরে স্যর ডন ব্র্যাডম্যান বলেছিলেন, “মুরলীর অ্যাকশনে কোনও গলদ ছিল না। এ আমার দেখা জঘন্যতম আম্পায়ারিং।” ফের তাঁর অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রয় এমারসন। কোনও বারই তাঁর বায়োমেকানিক্যাল টেস্টে কিছু পাওয়া যায়নি বলে মুরলীর গায়ে দাগ লাগাতে পারেনি আইসিসি। ২০০৪-এর মার্চে তাঁর দুসরার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেন ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। সেবার পরীক্ষার পর দেখা যায় দুসরা করতে গিয়ে তাঁর কনুই ১৪ ডিগ্রি পর্যন্ত ভাঙছে। পরে আইসিসি অনুমোদিত এক গবেষণায় দেখা যায় স্পিনারদের ৫ ডিগ্রির বেশি কনুই না ভাঙার বিধিনিষেধ কার্যত অবাস্তব। তার পর থেকে আইসিসি বোলারদের কনুই ভাঙার সীমা বাড়িয়ে করে ১৫ ডিগ্রি।
এই কয়েক বছরে সহ্য করা মানসিক নির্যাতন নিয়ে তিনি বলেন, “একজন বোলারকে বল করতে না দিলে সে ছটফট করবেই। কিন্তু আমাকে যা বলা হয়েছিল, তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। জানতাম আমাকে সীমা, নিয়মের মধ্যে থেকেই সব করতে হবে। আজমলদেরও সে ভাবে লড়তে হবে।”
সম্প্রতি বাংলার ক্রিকেটেও চাকারদের শোধরানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে সিএবি। সেই দায়িত্বও নিতে রাজি মুরলী। বললেন, “ভাল, নিখঁুত স্পিনার তৈরির দায়িত্ব নিয়েছি যখন, তখন এই দায়িত্ব নিতে তৈরি আমি।”
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের স্পিন সামলানোর টিপস দিয়ে আসা মুরলীধরন ভারতের আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফর প্রসঙ্গ উঠতে বললেন, “অসিরা নিজেদের দেশের উইকেটে হয়তো সেটা পারবে। কিন্তু উপমহাদেশে স্পিনারদের সামলানোর বিদ্যা রপ্ত করতে সময় লাগবে। কারণ, ওদের বেশিরভাগই অনভিজ্ঞ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy