কী করে বাড়িতে বসে ধারাভাষ্য দেওয়া সম্ভব? ছবি: সংগৃহীত।
করোনা অতিমারির আতঙ্কে ধারাভাষ্যেও এ বার ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর ছোঁয়া। দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘থ্রি টিম ক্রিকেটে’ বডোদরার বাড়িতে বসেই ধারাভাষ্য দিলেন ইরফান পাঠান। ছিলেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর ও দীপ দাশগুপ্তও। তাঁরাও নিজেদের বাড়িতে বসেই ধারাভাষ্য দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই জোরালো হতে শুরু করেছে মত, আইপিএলেও এ বার বাড়িতে বসেই ধারাভাষ্য দেবেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন নামকরণও করা হয়ে গিয়েছে— ‘ভার্চুয়াল কমেন্ট্রি’।
ধারাভাষ্যের দুনিয়ায় কী করে এই বিপ্লব সম্ভব? ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেই থাকছেন ধারাভাষ্যকারেরা। তাই মাঠের কমেন্ট্রি বক্সে বসে ধারাভাষ্য দিতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু আইপিএলের সময় সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা সম্ভব হবে কি না, ঠিক নেই। কারণ, সেখানে মাঠের মধ্যে নেই হোটেল। এতগুলো দলকে একসঙ্গে রাখার সম্ভাবনাও কম। তাই বাড়ি থেকে ধারাভাষ্য দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কী করে সম্ভব হল বাড়ি থেকে কমেন্ট্রি করা?
আনন্দবাজারকে ফোনে ইরফান বললেন, ‘‘অভিনব উদ্যোগ। এ ভাবে কখনও ধারাভাষ্য দিতে হবে, ভাবিনি। তবে নতুন এই অভিজ্ঞতা খারাপ নয়। বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভাবলে অবশ্যই কার্যকরী।’’ যোগ করেন, ‘‘ধারাভাষ্যকার এবং সম্প্রচারকারী চ্যানেলে কর্মরতরাও বিশেষ লগ-ইন আইডি ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে। সেই ওয়েবসাইটে গিয়েই লাইভ ম্যাচ দেখতে পাচ্ছিলাম। সহ-ধারাভাষ্যকারকেও দেখা যাচ্ছিল স্ক্রিনে। ম্যাচ যে রকম এগিয়েছে, সে রকম ভাবেই চলেছে ধারাভাষ্য।’’ বেশ কিছু সমস্যার কথাও উল্লেখ করেছেন ইরফান। কমেন্ট্রি বক্সে থাকলে পুরো মাঠ চোখের সামনে দেখা যায়। ম্যাচের বাইরেও অনেক কিছু ঘটে যা ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। সে সব নিয়েও আলোচনা হয় ম্যাচ চলাকালীন। এমনকি ক্রিকেটারদের ঠিক মতো চিনতেও সমস্যা হয়েছে ইরফানদের। ব্যাটসম্যান কোনও বলে বড় শট নিলে তা ছয় হবে না ক্যাচ, ঠিক মতো অনুমান করা যাচ্ছে না। ইরফান বলছিলেন, ‘‘ধারাভাষ্যকারের কাজ, ম্যাচের গতির সঙ্গেই তা বিশ্লেষণ করা। বাড়িতে বসে স্ক্রিনে ম্যাচ দেখে যা ঠিক মতো করা যায় না। ক্রিকেটারদের ঠিক মতো চেনা যাচ্ছে না। ব্যাটসম্যান হাওয়ায় শট নিলে বল কতো উঁচুতে উঠল, বোঝা কঠিন। মাঠের চেয়েও বেশি মনঃসংযোগ করতে হচ্ছে।’’
সহ-ধারাভাষ্যকারের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করতেও সমস্যা হয় বাড়িতে বসে। সেই হার্ডলও টপকাতে হচ্ছে। ইরফান বলছিলেন, ‘‘কমেন্ট্রি বক্সে সতীর্থকে পাশে পাই। ম্যাচের পরিস্থিতি ও সতীর্থের আবেগ অনুযায়ী আমাকেও একই সুরে কথা বলতে হয়। বাড়ি থেকে কিন্তু তার আন্দাজ পাওয়া কঠিন। মাঠে থাকলে দুই শিবিরের মনোভাব সহজে বোঝা যায়। ভার্চুয়াল কমেন্ট্রিতে যা একেবারেই সম্ভব নয়।’’
ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, আইপিএলে ইংরেজি ও হিন্দি ধারাভাষ্য হবে মাঠের কমেন্ট্রি বক্স থেকেই। করোনা সাবধানতা জারি থাকবে বক্সে। তবে আঞ্চলিক ভাষায় ধারাভাষ্য হতে পারে বাড়িতে বসেই। যা এত দিন স্টুডিয়োতে বসে হয়েছে এবং তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। ইরফান বলছিলেন, ‘‘ম্যাচ বিশ্লেষণের কাজ বাড়িতে বসে সহজেই করা যেতে পারে। কিন্তু ‘ভার্চুয়াল কমেন্ট্রি’ ধারাভাষ্যের ভবিষ্যৎ কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নেট কানেকশনের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। নেট খারাপ হয়ে গেলে আওয়াজ ঠিক মতো শোনা যায় না। শব্দও স্পষ্ট হয় না। প্রযুক্তির উপরে এতটা নির্ভর করলে তার সমস্যার কথাও মাথায় রাখতে হবে।’’ করোনা অতিমারির মাঝে পরিবর্তিত নিয়মে চলছে ক্রিকেট। পাল্টে যাচ্ছে রিচি বেনোদের কমেন্ট্রি বক্সও। ‘ভার্চুয়াল কমেন্ট্রি’ থাকতেই এসেছে কি না, সময় বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy