ঘরবন্দি মাউরো কোচিং লাইসেন্সের ক্লাস করছেন অনলাইনে। —নিজস্ব চিত্র।
সুপার কাপে চেন্নাই সিটি-র বারের নীচে দাঁড়িয়ে সুনীল ছেত্রীর পেনাল্টি থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। গত মরসুমের আই লিগে শেষ চারটি ম্যাচের জন্য চেন্নাই-এর গোল আগলেছিলেন। ‘ভারতসেরা’ হয়ে মরসুম শেষ করেছিলেন তিনি।
সেই দীর্ঘদেহী গোলকিপার মাউরো বোয়েরকিও এখন ইটালিতে গৃহবন্দি। তিন সপ্তাহ ধরে দেশে চলছে লকডাউন। জনজীবন স্তব্ধ। করোনার থাবায় সে দেশে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। সব চেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন সে দেশে।
ইটালির ব্রেসসা-তে থাকা চেন্নাই সিটি-র প্রাক্তন গোলকিপারের সঙ্গে রবিবার যখন যোগাযোগ করা হল, তখন ইটালির স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটা। আবেগের বাষ্প গলায় জড়িয়ে মাউরো বলছিলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির জন্য মোটেও তৈরি ছিল না আমার দেশ। হাসপাতালগুলোয় বেড নেই। রেসপিরেটর যন্ত্র নেই। ভাইরাস-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এগুলো যত শুনছি, ততই যেন মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়ছি। নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, এখন ভেঙে পড়ার অবস্থা নয়। কিন্তু শক্ত হতে পারছি কোথায়?’’ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন গোলকিপার।
আরও পড়ুন: ধোনির অবসর নিয়ে অন্য রকম কথা শোনালেন ব্র্যাড হগ
চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইটালি। ফুটবল মাঠে ‘আজুরি’দের কাতানেচ্চিও সিস্টেমের ভুলভুলাইয়ায় পথ হারিয়েছে অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু এই ‘অজানা দস্যু’র সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেনি পাওলো রোসির দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে ইটালির যে সব ছবি, তা দেখলে বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। ইটালির ছবি তুলে ধরে মাউরো বলছেন, ‘‘তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউন থাকায় মানুষ যেন হাঁপিয়ে উঠেছে। দোকানপাট সব বন্ধ। মানুষের ঘরে মজুদ করা খাবারও কমে এসেছে। হাতে টাকাও প্রায় নেই। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করছে। অনেকেই চান, স্বাভাবিক জনজীবন ফের শুরু করা হোক। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তা আত্মহত্যার সামিলই হবে। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, লকডাউন আরও বাড়ানো হবে।’’
গুরপ্রীতের সঙ্গে মাউরো।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ক্লাবে খেলে মণিপুরের ক্লাব নেরোকায় ২০১৮-১৯ মরসুমে সই করেছিলেন মাউরো। ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, মরসুমের প্রায় শেষের দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয় নেরোকা। ক্লাব পাচ্ছিলেন না তিনি। ঠিক সেই সময়ে চেন্নাই সিটি লোনে নেয় ইতালীয় গোলকিপারকে। তার পরেই উলটপুরাণ। চ্যাম্পিয়ন হয়ে মরসুম শেষ করেন মাউরো। ভবিষ্যতে কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চান। তাই কোচিং লাইসেন্স কোর্সের ক্লাস শুরু করেছিলেন। কিন্তু বাদ সাধে এই মারণ ভাইরাস। তিনি বলছিলেন, ‘‘বাড়ির বাইরে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। কম্পিউটারের সামনে বসে কোচিং লাইসেন্সের ক্লাস করছি। এছাড়া তো কিছু করারও নেই।’’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে খানিকক্ষণের জন্য থামলেন মাউরো। তার পরে যোগ করেন, ‘‘আমাদের এখানে কেবল খাবারের দোকান খোলা রয়েছে। এক জনের বেশি গেলে আবার পুলিশ জরিমানা করছে। গ্লাভস, মাস্কও কমে এসেছে দেশে। অর্থনীতিও ভেঙে পড়ার মুখে।’’
চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি। মধ্যমণি যখন মাউরো।
ইটালির আজকের এই পরিস্থিতির নেপথ্যে কি কোনও ফুটবল ম্যাচ? চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আটলান্টা বনাম ভ্যালেন্সিয়া ম্যাচে বিপুল জনসমাবেশ হয়েছিল।
আরও পড়ুন: করোনার জের, ইস্টবেঙ্গলের টনি স্পেনে ফিরে বসছেন ওষুধের দোকানে
লম্বার্ডি অঞ্চলের বার্গামোতেই আটলান্টা ক্লাব অবস্থিত। সরকারি হিসাব বলছে, সে দিন মিলানের সান সিরো স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন চল্লিশ হাজারের উপর ফুটবলভক্ত। বার্গামো থেকে দলে-দলে মানুষ যান খেলা দেখতে। পরে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসে ইটালিতে সব চেয়ে আক্রান্ত শহর এই বার্গামোই। এই শহর থেকে খানিক দূরেই ব্রেসসা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেই ম্যাচই কি আভিশাপ হয়ে নেমে এল ইটালিতে? মাউরো মানতে নারাজ। বললেন,‘‘দেখুন এই ম্যাচের অনেক আগেই তো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল এই ভাইরাস। ওই ম্যাচটার জন্য আজ ইটালির এই অবস্থা তা আমার মতো অনেকেই মানেন না এখানে। যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে আমাদের। কঠিন লড়াই করছেন সবাই। আরও লড়াই বাকি আছে।’’
দিনো জফ, ওয়াল্টার জেঙ্গা, বুঁফোর মতো গোলকিপারদের জন্ম দিয়েছে ইটালি। লড়াকু গোলকিপারদের দেশে লড়াই শুধু যে আর গোলরক্ষা করার নয়, ভারত ফেরা মাউরোর কথাতেই তা স্পষ্ট। এ লড়াই যে আরও কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy