রিচার্লিসনের জাদু গোল।
রোনাল্ডো নাজ়ারিয়ো লিমার যোগ্য উত্তরসূরি কি অবেশেষে পেয়ে গেল ব্রাজিল?
বৃহস্পতিবার রাতে লুসেল স্টেডিয়ামে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ৭৩ মিনিটে বাইসাইকেল কিকে রিচার্লিসনের অনবদ্য গোল দেখে শুধু ফুটবলপ্রেমীরা নন, বিস্মিত নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র, গ্যারি লিনেকার, লুইস ফিগোর মতো কিংবদন্তিরাও। নেমার বলেছেন, ‘‘বিশ্বাস হচ্ছে না কী দেখলাম। অসাধারণ গোল।’’ উচ্ছ্বসিত লিনেকার বলেছেন, ‘‘বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলের মধ্যে একটি করে গেল রিচার্লিসন। কী ভাবে মাথা এত ঠান্ডা রাখল, জানি না।’’ আপ্লুত ফিগো বলেছেন, ‘‘প্রথম বার বিশ্বকাপে খেলতে নেমে এ রকম গোল করা সহজ নয়। যে পরিস্থিতি থেকে ও উঠে এসেছে, তাতে আর কিছুই হারানোর নেই ওর। যা আছে, সবই প্রাপ্তির।’’
তবে একেবারেই অবাক নন রিচার্লিসনের প্রাক্তন কোচ আবেল ব্রাগা!জানালেন, এ রকম গোল আগেও অসংখ্যবার করেছেন ব্রাজিলীয় তারকা। রিয়ো থেকে ফোনে ফ্লুমিনেসের কোচ বলেই দিলেন, ‘‘২০০২ বিশ্বকাপ ছিল রোনাল্ডোর। এ বার রিচার্লিসনের।’’
বৃস্পতিবার রাতে লুসেল স্টেডিয়ামে সাংবাদিক বৈঠকে যখন এলেন রিচার্লিসন, মুখে শিশুর সারল্য। ব্রাজিলের নায়ক বললেন, ‘‘দেরিতে সাংবাদিক বৈঠকে আসার জন্য ক্ষমা চাইছি। আসলে আমাকে ডোপ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’’ হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘গোল করে ভাল লাগছে ঠিকই, কিন্তু এমন গোল তো আমি এর আগেও করেছি।’’ প্রাক্তন ছাত্রের গোল নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন ব্রাগাও। বলছিলেন, ‘‘রিচার্লিসনের সবচেয়ে বড় গুণ হল, বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে প্রচণ্ড ছটফট করে। ডিফেন্ডাররা বুঝতেই পারে না, ওকে কী ভাবে আটকাবে। এটা সম্ভব হয়েছে অসাধারণ ফিটনেসের জন্যই।’’ রিচার্লিসনের উত্থান আমেরিকা মিনেরোর যুব দল থেকে। এক বছরের মধ্যেই সিনিয়র দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে যোগ দেন ফ্লুমিনেসে। পরের বছরই কোচ হয়ে আসেন ব্রাগা। ফ্লুমিনেস থেকেই রিচার্লিসন যোগ দেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়াটফোর্ডে। এখন খেলেন টটেনহ্যাম হটস্পারে।
রোনাল্ডো লিমার সঙ্গে এখনই কি রিচার্লিসনের তুলনা করা ঠিক? ব্রাগা বললেন, ‘‘কেন নয়? আমি মনে করি, রিশা (রিচার্লিসনকে এই নামেই ডাকেন ব্রাগা) রোনাল্ডোর চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। গত বছর অলিম্পিক্সে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওর জন্যই। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করেছে।’’
রোনাল্ডোর সঙ্গে রিচার্লিসনের খেলার কী মিল রয়েছে? ফ্লুমিনেস কোচ বললেন, ‘‘আমি খেলার ধরন নিয়ে বলছি না। প্রত্যেক ফুটবলারের খেলার পদ্ধতি আলাদা। রোনাল্ডোর মতো রিশাও গোলের গন্ধ পায়। ওর মতোই আগ্রাসী। ডিফেন্ডারদের চোখে ধুলো দিতে পারে। ভাল স্ট্রাইকার হওয়ার জন্য যা যা গুণ দরকার, সবই রয়েছে রিশার মধ্যে। ওর দ্বিতীয় গোলটার কথা মনে করুন, ভিনিসিয়াসের কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ পায়ের আলতো টোকায় তুলে নিয়ে শরীর ঘুরিয়ে ডান পায়ের ভলিতে গোল করল। ছোটবেলায় জিমন্যাস্টিক করত বলেই এত ফিট।’’ জিমন্যাস্টিক করতেন রিচার্লিসন? ব্রাজিল তারকার প্রাক্তন কোচ বলে চললেন, ‘‘অনেকেই জানেন না, শৈশবে রিশা জিমন্যাস্টিক করত। এই কারণেই শরীর এত নমনীয়। অবশ্য ব্রাজিলের অনেক ফুটবলারই জিমন্যাস্টিক করে ফিট থাকতে। রিশা জিমন্যাস্টিক শুরু করেছিল শৈশবে। যে কোনও জায়গা থেকে গোল করার ক্ষমতা ধরে।’’
বছর পঁচিশের রিচার্লিসনের জন্ম ব্রাজিলের দক্ষিণপূর্বে নোভা ভেনেসিয়ায়। একাধিক মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের জন্য পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য। কিন্তু অন্ধকার নামলেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এই শহর। শৈশবে একবার প্রাণও হারাতে বসেছিলেন রিচার্লিসন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই শুনিয়েছিলেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা, ‘‘এক ড্রাগ পাচারকারী আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছিল। ট্রিগার টিপলেই শেষ হয়ে যেতাম আমি।’’ রিচার্লিসনের জীবন বদলে যায় ব্যবসায়ী রেনাতো ভেলাসকোর সান্নিধ্যে আসার পরে। তিনিই ব্রাজিলীয় তারকাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন রিয়াল নরোয়েস্তেতে। তার পরেই উল্কার গতিতে উত্থান রিচার্লিসনের।
অভিষেকের বিশ্বকাপে জোড়া গোলের রহস্য কী? রিচার্লিসন বলছেন, ‘‘আমাদের কোচ প্রফেসর তিতে বলেন, গোলের গন্ধ পেতে হয়। এখন আমরা সেটাই পাচ্ছি। তবে আমাদের আসল লক্ষ্যে পৌঁছতে এখনও ছ’টা ম্যাচ বাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy