মঙ্গলবার সকালেই আনন্দবাজার ডট কমে লেখা হয়েছিল মোহনবাগানের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জল্পনার কথা। সে জল্পনা আরও বাড়ল মঙ্গলবার, পয়লা বৈশাখে আমন্ত্রণ পেয়েও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মোহনবাগানের বারপুজো এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে না-যাওয়ায়। অথচ, তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনুষ্ঠানে গেলেন ক্রীড়ামন্ত্রী। শুধু গেলেনই না, দীর্ঘ ক্ষণ সময়ও কাটালেন।
মোহনবাগানের পরবর্তী সচিব কে হবেন, তা নিয়ে ময়দানে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনা এই নিয়ে যে, বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তের হাতেই ক্ষমতা থাকবে, না সৃঞ্জয় বসুর ‘প্রত্যাবর্তন’ ঘটবে। সৃঞ্জয় নিজে আত্মবিশ্বাসী। এই পরিস্থিতিতে ক্রীড়ামন্ত্রীর কোথাও যাওয়া এবং না-যাওয়াও ‘বাড়তি সঙ্কেত’ বহন করে। বছরের প্রথম দিনে মোহনবাগানে না-গিয়ে ইস্টবেঙ্গলে গেলেন অরূপ, এ-ও এক ধরনের ‘বার্তা’ বইকি।
অরূপের গরহাজির থাকা নিয়ে সচিব দেবাশিস বলেন, ‘‘ওঁর না আসাটা দুঃখজনক। কষ্ট পেয়েছি। এফএসডিএলের (আইএসএলের আয়োজক) ভুল কাজের খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, মোহনবাগানের সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ক্লাবের তরফে ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলেই শুনেছি। তিনি শুধু রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী নন, ক্রীড়াপ্রেমীও। উনি এর আগে মোহনবাগানের সহ-সভাপতিও ছিলেন। সেই তিনি কেন আমন্ত্রিত হয়েও মোহনবাগানের অনুষ্ঠানে এলেন না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’ মোহন-সচিব দেবাশিসের বক্তব্য শুনে অবশ্য মনে হচ্ছে, খতিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই। তিনি দুষছেন আইএসএল কাপ ফাইনালের ‘আমন্ত্রণ বিভ্রাট’কে।
আরও পড়ুন:
গত শনিবার আইএসএল কাপ ফাইনালে যুবভারতীতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপকে আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য কুণাল আইএসএলের আয়োজক এফএসডিএল, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবের পাশাপাশি মোহনবাগান ক্লাবকেও অভিযুক্ত করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, মোহনবাগান সচিবের উচিত ছিল ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো। মঙ্গলবার দেবাশিস অবশ্য দাবি করলেন, ‘‘আমি আমন্ত্রণ জানাইনি, এই তথ্য ঠিক নয়। আমি ফাইনালের এক দিন আগে ক্রীড়ামন্ত্রীকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমি লিখিত ভাবে আমন্ত্রণ জানাতে পারি না। সেই অধিকার আমার নেই এখন। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস যদি আয়োজক হত, তা হলেও কথা ছিল।’’ দেবাশিসের বক্তব্য, ‘‘ফাইনালের আয়োজক ছিল এফএসডিএল। আমি এফএসডিএল-কে অনুরোধ করি। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসকেও অনুরোধ করি। সুপার জায়ান্টসের হয়ে বিনয় চোপড়া কথা বলেন। এফএসডিলের বক্তব্য, গত বছর তারা কোনও আমন্ত্রণ পাঠায়নি। তা সত্ত্বেও ক্রীড়ামন্ত্রী এসেছিলেন। যদিও আমি মনে করি, যে রাজ্যে খেলা হচ্ছে, তার ক্রীড়ামন্ত্রীকে অবশ্যই আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল। এটা অনুচিত হয়েছে।’’
শনিবার ফাইনাল শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে কুণালই প্রথম ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না করার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। তিনি আইএসএলের আয়োজক এফএসডিএল, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবের পাশাপাশি মোহনবাগান ক্লাবকেও অভিযুক্ত করেন। সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘আক্ষেপ, খেলবে ভারতসেরা মোহনবাগান। তাদের তরফেও ক্রীড়ামন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ করা হয়নি। ক্লাব সহ-সভাপতি হিসাবে এই খবর পেয়ে খারাপ লেগেছে।’ তিনি নিজে অরূপকে ফোন করেছিলেন জানিয়ে কুণাল লেখেন, ‘দুঃখপ্রকাশ করেছি। ঘরোয়া ফোন আর আনুষ্ঠানিক সসম্মান আমন্ত্রণ এক নয় বুঝি। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় তো নয়ই। তাঁর সিদ্ধান্ত বদল হচ্ছে না। সচিবকে জানাচ্ছি। এই আনুষ্ঠানিক সৌজন্যটা ক্লাবের দেখানো উচিত ছিল। যাঁরা আমন্ত্রণ বা টিকিটের বিষয়টি দেখছিলেন, একটা ফাঁক থেকে গিয়েছে।’
অরূপ ফাইনালে যাননি। সে অর্থে ‘বয়কট’ই করেন। যদিও তার পরে কুণাল মোহনবাগান তাঁবুতে দেবাশিসের সঙ্গে স্টু-টোস্ট খাওয়ার ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘সচিব (দেবাশিস) ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এফএসডিএলের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। তার পরে তাঁরা ক্রীড়ামন্ত্রীকে ইমেল পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করেন। যদিও এই বিলম্বিত আমন্ত্রণ অতীব অন্যায়ের। মোহনবাগান সচিব জানান, তাঁর ধারণা ছিল এফএসডিএল আগেই ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করেছে।’
মঙ্গলবার অবশ্য আমন্ত্রণ পেয়েও এড়ালেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ। নতুন বছরের প্রথম দিনেই ভোট-জল্পনা আরও ডানা মেলল মোহন-আকাশে।