মোহনের বাগানে কি তাঁর ‘প্রত্যাবর্তন’ ঘটছে? সৃঞ্জয় বসু বললেন, “আমি সারা বছর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। সমর্থকদের সঙ্গে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখি। এমন নয় যে, নির্বাচন আসছে বলে মাঠে নেমেছি।” বস্তুত, মোহনবাগান ক্লাবের দায়িত্বে এলে কী করবেন, সে পরিকল্পনাও করা হয়ে গিয়েছে তাঁর, “ফুটবলটা এখন সুপার জায়ান্ট দেখছে। ফলে ক্রিকেট, হকি, টেনিসের মতো খেলাগুলোর দিকে নজর দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের জন্য অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে। ক্লাবের পরিবেশ আরও উন্নত করব।”
ময়দানের সমস্ত ক্লাবেই অল্পবিস্তর রাজনীতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু মোহনবাগানে রাজনীতির লোকেদের পদচারণা সবচেয়ে বেশি। এক ক্রিকেট কর্তার কথায়, ‘‘সিএবি-র নির্বাচনেও রাজনীতি থাকে। কিন্তু মোহনবাগানের ভোটে তো সমস্ত রাজনীতির লোকেরাই থাকেন।’’ কথাটা খুব ভুল নয়। অরূপ বিশ্বাস, অরূপ রায়, অতীন ঘোষ, কুণাল ঘোষের মতো শাসকদলের মন্ত্রী-নেতারা মোহনবাগান প্রশাসনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সেই ক্লাবের অন্দরের রাজনীতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে সৃঞ্জয়ের প্রত্যাবর্তনের। সঙ্গে আসছে কিছু ‘সঙ্কেত’ও। যেমন, সোমবার কালীঘাট স্কাইওয়াকের উদ্বোধনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক পিছনেই সৃঞ্জয়ের বসে থাকা। যেমন, সৃঞ্জয় যে দৈনিকের সম্পাদক, সেখানে তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্র মুদ্রণের কাজ আবার শুরু হওয়া। যা পক্ষান্তরে মোহনবাগানের বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তের পক্ষে খুব সুখবর নয়।
প্রসঙ্গত, আইএসএল কাপ জেতার পরে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কাকে আবেগতাড়িত বার্তা পাঠিয়েছেন সৃঞ্জয়ের বাবা তথা প্রাক্তন মোহনবাগান সচিব টুটু (স্বপনসাধন) বসু। বর্তমান ক্লাবসচিব দেবাশিসকে তিনি কোনও অভিনন্দনসূচক বার্তা পাঠিয়েছেন, এমন কোনও খবর এখনও পর্যন্ত শোনা বা দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখে অবশ্য তাঁর ভবানীপুর ক্লাবেই বারপুজো করলেন সৃঞ্জয়। কিন্তু সব কিছু পরিকল্পনামতো এগোলে পরের বছর তাঁকে মোহনবাগানে বারপুজো করতে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। সবুজ-মেরুনের এ বারের নির্বাচনের যা গতিপ্রকৃতি, তাতে দেবাশিসকে হারিয়ে সৃঞ্জয়ের মোহন-সচিব পদে ফিরে আসা নিয়ে ক্লাবের অন্দরে খুব একটা অনিশ্চয়তা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
যেটুকু যা সংশয় ছিল, তা কার্যত ঘুচিয়ে দিয়েছে গত শনিবারের আইএসএল কাপ ফাইনাল। যে ম্যাচে জিতে কাপ জিতেছে মোহনবাগান। যে ম্যাচে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপকে। কলকাতা শহরে একটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা হবে আর তাতে ক্রীড়ামন্ত্রী আমন্ত্রিত থাকবেন না, এ ঘটনা প্রায় অভাবনীয়। সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে কুণাল প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলেন, কেন ক্রীড়ামন্ত্রীকে যুবভারতীর ফাইনালে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি? ঘটনাচক্রে, কুণাল মোহনবাগানের সহ-সভাপতিও বটে। তিনি আইএসএলের আয়োজক এফএসডিএল, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবের পাশাপাশি মোহনবাগান ক্লাবকেও অভিযুক্ত করেন। লেখেন, ‘আক্ষেপ, খেলবে ভারতসেরা মোহনবাগান। তাদের তরফেও ক্রীড়ামন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ করা হয়নি। ক্লাব সহ-সভাপতি হিসাবে এই খবর পেয়ে খারাপ লেগেছে।’ তিনি নিজে অরূপকে ফোন করেছিলেন জানিয়ে কুণাল লেখেন, ‘দুঃখপ্রকাশ করেছি। ঘরোয়া ফোন আর আনুষ্ঠানিক সসম্মান আমন্ত্রণ এক নয় বুঝি। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় তো নয়ই। তাঁর সিদ্ধান্ত বদল হচ্ছে না। সচিবকে জানাচ্ছি। এই আনুষ্ঠানিক সৌজন্যটা ক্লাবের দেখানো উচিত ছিল। যাঁরা আমন্ত্রণ বা টিকিটের বিষয়টি দেখছিলেন, একটা ফাঁক থেকে গিয়েছে।’
অরূপ ফাইনালে যাননি। সে অর্থে ‘বয়কট’ই করেন। যদিও কুণালকে মোহনবাগান তাঁবুতে দেবাশিসের সঙ্গে স্টু-টোস্ট খেতে দেখা গিয়েছিল। সেই ছবি পোস্ট করে কুণাল লেখেন, ‘সচিব (দেবাশিস) ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এফএসডিএলের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। তার পরে তাঁরা ক্রীড়ামন্ত্রীকে ইমেল পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করেন। যদিও এই বিলম্বিত আমন্ত্রণ অতীব অন্যায়ের। মোহনবাগান সচিব জানান, তাঁর ধারণা ছিল এফএসডিএল আগেই ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করেছে।’
মোহনবাগানের একটি সূত্রের দাবি, দেবাশিসের ‘ধারণা’র বিষয়টি উচ্চমহল খুব ভাল ভাবে নেয়নি। ওই সূত্রের বক্তব্য, ‘‘এমন একটা বড় ম্যাচের দিন সচিব নিজে ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাবেন না? যদি বা এফডিএসএল আমন্ত্রণ জানিয়েও থাকে, তা হলেও মোহনবাগান সচিবের ক্রীড়ামন্ত্রীকে অবশ্যই আমন্ত্রণ করা উচিত ছিল। আর উনি (দেবাশিস) এমন ধারণাই বা করে নিলেন কেন?’’
মোহনবাগান জনতা এবং ক্লাবের সঙ্গে জড়িতেরা মনে করছেন, সে দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, হাওয়া কোন দিকে। মোহনবাগানে নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম রায়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচনী বোর্ড সেই তারিখ ঘোষণা করবে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হলেই তা ঘোষিত হবে। আপাতত সদস্যপদ নবীকরণের কাজটি করছে নির্বাচনী কমিটি। কিন্তু ক্লাবের সঙ্গে জড়িতদের বড় অংশই মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে কোনও নাটকীয় মোচড় না তৈরি হলে নবান্নের রেফারি লম্বা বাঁশি বাজিয়ে খেলা ইতিমধ্যেই শেষ করে দিয়েছেন। বাকি আছে স্কোর বোর্ডে ফলাফল লেখা।