মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুর মূল ফটক। ফাইল চিত্র
মোহনবাগান ক্লাবে ডামাডোল ক্রমশ চরমে উঠছে। রবিবার ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্তের বাড়ির সামনে এক দল সমর্থক মোহনবাগানের নাম থেকে ‘এটিকে’ সরানো নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়। এই নিয়ে ক্লাবের অন্দরেই মতপার্থক্য, জটিলতা তৈরি হল। আইএসএলে প্রথম ম্যাচে হারের মধ্যেই বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতিতে সরগরম সবুজ-মেরুন।
দেবাশিসের বাড়ির সামনে প্রতিবাদ, বিক্ষোভের নিন্দা করে প্রথমে মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়। সেই বিবৃতির একাংশের বিরোধিতা করে পাল্টা বিবৃতি দেন ক্লাবের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসু। তাঁর সঙ্গে ক্লাবের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর মতপার্থক্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু তাৎপর্যের ব্যাপার হল, ক্লাবেরই সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষও ক্লাবের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।
সেমবার রাতে প্রথমে মোহনবাগান ক্লাবের সহ-সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘‘রবিবার সচিব দেবাশিস দত্তের বাড়ির সামনে অগণতান্ত্রিক এবং হিংসাত্মক পদ্ধতিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে, ক্লাব তার তীব্র নিন্দা করছে। সচিব এবং ক্লাব-সভাপতি স্বপন সাধন বসুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ভারতের জাতীয় ক্লাবের বদনাম করার জন্যই এগুলো করা হচ্ছে। যে অশালীন ভাষায় প্রতিবাদ করা হয়েছে, তা শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের সংস্কৃতির পরিপন্থী।’’
বিবৃতির এই অংশের সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করে সৃঞ্জয় তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমি নিজেও মনে করি, ময়দানের কোনও প্রতিবাদ, ময়দান ছাড়িয়ে কারও ব্যক্তিগত বাড়ির সামনে প্রদর্শন করাটা ঠিক নয়। তাই মোহনবাগান ক্লাবের প্রতিবাদের সঙ্গে আমিও একমত।’’
ক্লাবের বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘‘এটিকে-র সঙ্গে মোহনবাগানের সংযুক্তিকরণ যখন হয়েছিল, তখন দেবাশিস দত্ত সচিব ছিলেন না। গত মার্চে যখন নতুন কমিটি তৈরি হল এবং দেবাশিস সচিব হলেন, তখন আগের কমিটির চুক্তিকে মান্যতা দেওয়া ছাড়া তাঁর আর কিছু করার ছিল না। ফলে সংযুক্তিকরণের জন্য কোনও ভাবেই দেবাশিসকে দায়ি করা যাবে না।’’
ক্লাবের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে সৃঞ্জয় বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘‘ক্লাবের তরফে বিজ্ঞপ্তিতে যা লেখা হয়েছে তার সব কিছুর সঙ্গে একমত হতে পারছি না। বলা হয়েছে, এটিকের সঙ্গে যখন মার্জার হয়েছিল, তখন সচিবের চেয়ারে ছিলেন না দেবাশিস দত্ত। ফলে তিনি যখন সচিব হয়েছেন, আগের কার্যকরী কমিটিতে পাস হওয়া সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু বলতে পারি, এখানে সম্পূর্ন ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। সংযুক্তিকরণের সময় ক্লাবের কার্যকরী কমিটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগ সদস্য এবারও কমিটিতে আছেন। ফলে অনেকেই জানেন, আসল সত্যটা।’’
দেবাশিস কী করে সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলছেন, প্রশ্ন তুলে সৃ়ঞ্জয় বলেন, ‘‘ক্লাবের কার্যকরী কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে আর দেবাশিস দত্তকে দায়িত্ব দিয়েছিল, পুরো ইস্যুটা নিয়ে এটিকের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। ফলে সেই আলোচনায় সমান দায়িত্ব দেবাশিস দত্তেরও ছিল। তাছাড়া চুক্তিপত্রে ফুটবল টিমের তৎকালীন কোম্পানি (মোহনবাগান ফুটবল ক্লাব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড)-এর তরফে ডিরেক্টর হিসোবে আমরা দু’জনেই সই করেছিলাম। চুক্তির সময় কে সচিব আর কে অর্থ সচিব (দেবাশিসের তৎকালীন পদ) সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।’’
সৃঞ্জয়ের আরও দাবি, ‘‘পদত্যাগ করার আগে ফুটবল দলের নাম বদল নিয়ে আমি ও দেবাশিস দত্ত একসঙ্গেই ইনভেস্টর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম।ক্লাব যদি চায়, আমি আজও যে কোনও আলোচনায় যেতে প্রস্তুত। সদস্য-সমর্থকরাই ক্লাবের মেরুদণ্ড। বিশ্বাস করি, তাঁদের আবেগ এবং চাহিদাকে ক্লাব এবং ইনভেস্টর কর্তৃপক্ষ যথাযথ সম্মান দেবে।’’
সৃঞ্জয়ের সঙ্গে একমত হয়ে কুণাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘ক্লাবের সদস্য, সমর্থকদের আবেগকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া তখনও প্রয়োজন ছিল, এখনও প্রয়োজন।’’
সত্যজিৎ যে কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন, তার বিরোধিতা করে ক্লাবের সহ-সভাপতি কুণাল বলেন, ‘‘মোহনবাগান ক্লাবের বিবৃতির সঙ্গে অনেকাংশেই একমত নই। এ বিষয়ে কার্যকরী কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা ও পদক্ষেপের প্রয়োজন আছে।’’
সব মিলিয়ে মোহনবাগান ক্লাবে ডামাডোল এখন চরমে। প্রাক্তন কর্তাদের সঙ্গে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ঝামেলা ক্রমশ বাড়ছে। এখনকার শাসকগোষ্ঠীর কর্তাদের মধ্যেও মতপার্থক্য বাড়ছে। দ্বিতীয়টিই বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy