হতাশ: হীরাকে টেনে তুলছেন সতীর্থ ফ্রানিয়ো। আইএসএল
কিয়ান নাসিরির রূপকথার উত্থান। অষ্টম আইএসএলের ফিরতি ডার্বিতে শনিবার এটিকে-মোহনবাগানের কাছে ১-৩ গোলে বিপর্যয়ের রাতেও উজ্জ্বল ছিলেন লাল-হলুদের ‘হিরে’। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও হারের যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে পারেননি ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হীরা মণ্ডল!
শনিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে খেলা শেষ হওয়ার পরে ড্রেসিংরুমে ফিরেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন হীরা। কোচ মারিয়ো রিভেরা, গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য-সহ বাকি ফুটবলাররা শান্ত করে টিম বাসে তুলেছিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের অন্যতম ভরসাকে। শনিবার রাতে কিয়ানের চোখ ধাঁধানো হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি ফুটবলপ্রেমীরা দেখেছিলেন ২৫ বছর বয়সি এক বঙ্গ ডিফেন্ডারের অদম্য লড়াই।
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচের দশ মিনিটের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের রাইটব্যাক অঙ্কিত মুখোপাধ্যায় চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। পরিস্থিতি সামলাতে বাধ্য হয়ে মিডফিল্ডার অমরজিৎ সিংহ কিয়ামকে রক্ষণে নামিয়েছিলেন মারিয়ো। লাল-হলুদ সমর্থকদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। আদিল খানকে সঙ্গে নিয়ে হীরার হার-না-মানা লড়াই যাবতীয় আশঙ্কা দূর করে দিয়েছিল। লিস্টন কোলাসো, ডেভিড উইলিয়ামস থেকে হুগো বুমোস— বারবার আটকে গিয়েছেন হীরার কাছে। কখনও তিনি কড়া ট্যাকলে বল কেড়ে নিয়েছেন। কখনও আবার হেড করে বল বিপন্মুক্ত করেছেন। হীরার জন্য ডার্বিতে অনেক চাপমুক্ত হয়ে আক্রমণে উঠতে পারছিলেন আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচরা। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে ড্যারেন সিডোয়েলের গোলে এগিয়েও গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ৮৬ মিনিটে লিস্টনের শট গোললাইনে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য ভাবে হীরাই হেড করে বাঁচান। কিন্তু তার পরেই পরিবর্ত হিসেবে নেমে কিয়ান নাসিরি হ্যাটট্রিক করে মশাল নিভিয়ে দেন। যা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না হীরা।
চলতি আইএসএলে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে হীরার ভুলেই গোল খেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের পরে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটান হীরা। অপরিহার্য হয়ে ওঠেন লাল-হলুদ রক্ষণে। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকা সমরেশ চৌধুরী বলেই দিলেন, ‘‘হীরা অনবদ্য খেলেছে। ও ছিল বলেই মোহনবাগানের আক্রমণভাগ শুরু থেকে সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল। খেলতেই পারছিল না ডেভিড, বুমোস, লিস্টন ও মনবীর।’’ কিন্তু ইস্টবেঙ্গল তো ১-৩ গোলে হেরেছে। ডিফেন্ডার হীরা কি দায় এড়াতে পারেন? শ্যাম থাপা বললেন, ‘‘তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই হীরার কিছু করার ছিল না। আমার মতে মার্সেলোকে তুলে নেওয়াটাই ভুল সিদ্ধান্ত ছিল মারিয়োর। ও উঠে যাওয়ার পরে পেরোসেভিচও নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। আক্রমণের ঝাঁঝও কমে যায় ইস্টবেঙ্গলের। চাপমুক্ত হয়ে খেলতে শুরু করে মোহনবাগানের ফুটবলাররা। হীরার জন্যই বেশি খারাপই লাগছে।’’
সমরেশ উচ্ছ্বসিত ইস্টবেঙ্গলের খেলা নিয়েও। বললেন, ‘‘অনেক দিন পরে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে ভাল লাগল। সীমিত ক্ষমতা নিয়ে দুর্দান্ত লড়াই করল ওরা। মার্সেলো ও হানামতে গোল করলে, মোহনবাগানের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হত। কারণ, ওদের খেলায় কোনও ছন্দই ছিল না কিয়ান নামার আগে পর্যন্ত।’’ কেমন লাগল ডার্বির নতুন নায়ককে? সমরেশের কথায়, ‘‘জামশিদের মতোই কিয়ান সুযোগসন্ধানী। ও তিনটি গোলই খুব ঠান্ডা মাথায় করেছিল। কিয়ান প্রতিভাবান। ওকে এখনও অনেক দূর যেতে হবে।’’
ডার্বিতে হারের যন্ত্রণার মধ্যেই ইউটিউবে ইটালির পাওলো মালদিনি, ব্রাজিলের মার্সেলোর খেলার ভিডিয়ো দেখে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করছেন হীরা। ২ ফেব্রুয়ারি ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ চেন্নাইয়িন। নতুন লড়াই। নতুন পরীক্ষা হীরার সামনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy