প্রতীকী ছবি।
সত্তরের দশকে কলকাতা ডার্বির নায়ক ছিলেন তাঁরা। অসুস্থতার কারণে পুরনো স্মৃতি প্রায় সবই ভুলে গিয়েছেন মহম্মদ হাবিব। কিন্তু ‘বড়ে মিয়াঁ’-র ভাই মহম্মদ আকবর এখনও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান মহারণের প্রসঙ্গ উঠলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
আকবর কয়েক বছর আগেই পাকাপাকি ভাবে ছেলের কাছে আমেরিকায় চলে গিয়েছেন। মাসখানেক আগে অবশ্য হায়দরাবাদে ফিরেছেন ছুটি কাটাতে। প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও সময় পেলেই টেলিভিশনের সামনে বসে পড়েছেন আইএসএলে কলকাতার দুই প্রধানের ম্যাচ দেখতে। শনিবার গোয়ায় এটিকে-মোহনবাগান বনাম এসসি ইস্টবেঙ্গল দ্বৈরথ দেখবেন? শুক্রবার বিকেলে হায়দরাবাদ থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে আকবর বললেন, ‘‘ডার্বি তো দেখতেই হবে। এই ম্যাচের কথা মনে পড়লেই উত্তেজনা বেড়ে যায়। মনে পড়ে যাচ্ছে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সদ্য প্রয়াত সুভাষ ভৌমিকের কথা। ও ডার্বিতে নায়ক হওয়ার জন্যই জন্মেছিল। কলকাতা ময়দানে লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে খেলার সুযোগ পাওয়াটাই ছিল জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। যদিও সেই আবেগটাই হারিয়ে গিয়েছে ডার্বি থেকে।’’
ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান, দুই প্রধানের হয়েই অসংখ্য ডার্বি খেলেছেন আকবর। ১৯৭৬ সালে মোহনবাগানের হয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে করা ১৭ সেকেন্ডে গোলের ডার্বিকেই সেরা মনে করেন তিনি। বললেন, ‘‘ছিয়াত্তরে আমাদের খুব খারাপ সময় চলছিল। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে মোহনবাগান সমর্থকেরাও জেতার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। দাদা বলেছিলেন, এই ম্যাচটা জিততে না পারলে আমাদের সকলেরই উচিত খেলা ছেড়ে দেওয়া। ওঁর কথা শুনে পুরো দলটাই উজ্জীবিত হয়ে গিয়েছিল। মাঠে নামার আগেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, শুরু থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ব ইস্টবেঙ্গলের উপরে। যাতে ওরা নিজেদের গুছিয়ে নিতে না পারে।’’ আরও বললেন, ‘‘দাদা আমাকে বলে দিয়েছিলেন, সেন্টার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়তে। রেফারি খেলা শুরু করার বাঁশি বাজাতেই দেখলাম, দাদা বাঁ প্রান্ত দিয়ে দ্রুত উঠে আসা উলগানাথনকে বল দেয়। ও ইস্টবেঙ্গলের কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে গিয়ে সুধীর কর্মকারকে কাটিয়ে নিখুঁত সেন্টার করল পেনাল্টি বক্সে। আমি তৈরিই ছিলাম। হেড করে বল জালে জড়িয়ে দিলাম। পরে শুনেছিলাম মাত্র ১৭ সেকেন্ডে
গোল করেছিলাম।’’
আকবরের সেই নজির চলতি আইএসএলেই হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ১২ সেকেন্ডে গোল করে ভেঙে দিয়েছেন মোহনবাগানের ডেভিড উইলিয়ামস। যদিও তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই কিংবদন্তি তারকার। বলছিলেন, ‘‘রেকর্ড তো গড়াই হয় ভাঙার জন্য। আমি খুশি, আমার পুরনো ক্লাবের এক ফুটবলার নতুন নজির গড়ায়।’’
শনিবারের দ্বৈরথে জিতবে কে? আকবর বলছিলেন, ‘‘ডার্বির ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। তবে কাগজ-কলমে মোহনবাগান অবশ্যই একটু এগিয়ে থাকবে।’’
কেন? আকবরের ব্যাখ্যা, ‘‘মোহনবাগানের আক্রমণভাগ দারুণ শক্তিশালী। রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস, হুগো বুমোস, লিস্টন কোলাসোর মতো দুর্ধর্ষ ফুটবলার রয়েছে। ওরা যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। শুনছি কৃষ্ণ নাকি অনিশ্চিত। মনে হয় না, তাতে খুব একটা সমস্যা হবে মোহনবাগানের। চিন্তা সবুজ-মেরুনের রক্ষণ নিয়েই।’’
ইস্টবেঙ্গলের কি কোনও সম্ভাবনাই নেই ডার্বি জেতার? লাল-হলুদ জার্সি গায়ে অসংখ্য স্মরণীয় ম্যাচ খেলা আকবর বললেন, ‘‘ম্যাচ জেতার জন্য দলে ভারসাম্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই ইস্টবেঙ্গলের তা নেই। এই কারণেই লিগ টেবলে সবার শেষে রয়েছে। জিতেছে মাত্র একটি ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গল গোল করে এগিয়ে গেলেও তা কতক্ষণ ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’’ যোগ করলেন, ‘‘হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচটা দেখেছিলাম। বিপক্ষের আক্রমণের চাপ সামলাতে না পেরে চারটে গোল খেয়েছিল। মোহনবাগানের আক্রমণভাগ কিন্তু অনেক বেশি শক্তিশালী হায়দরাবাদের চেয়ে। তবে ভুললে চলবে না, পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল সব সময়ই ভয়ঙ্কর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy