রাশিয়ার সঙ্গে ফুটবল খেলতে নারাজ ইউরোপের একাধিক দেশ। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ
ফুটবল বিশ্বে রাশিয়াকে একঘরে করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলি এ ব্যাপারে মোটামুটি এককাট্টা। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যুদ্ধে লিপ্ত রাশিয়াকে নিরপেক্ষ দেশে খেলতে বলেছে ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আরও বলেছে, রাশিয়া তাদের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীত ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু ‘এ টুকু শাস্তি’ মানতে নারাজ ইউরোপীয় দেশগুলি। তাদের দাবি, রাশিয়াকে পুরোপুরি নির্বাসিত করুক ফিফা।
ইংল্যান্ড সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলবে না তারা। ভয়ঙ্কর বিপদে থাকা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইংল্যান্ড। সে দেশের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা এফএ সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা করে জানিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও পর্যায়ের কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলবে না ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের এই ঘোষণার আগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে না খেলার কথা জানিয়েছে পোলান্ড, সুইডেন এবং চেক প্রজাতন্ত্র। আগামী কাতার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে এই তিন দেশের বিরুদ্ধে খেলা রয়েছে রাশিয়ার। ফ্রান্সও দাবি করেছে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের।
ফিফা কী ভাবে রাশিয়াকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলার অনুমতি দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পোলান্ডের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার সভাপতি। ফুটবল থেকে রাশিয়াকে নির্বাসিত করার দাবিও করেছে পোলান্ড। আগামী ২৪ মার্চ মস্কোয় পোলান্ড-রাশিয়া ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। সেই ম্যাচের জয়ী দলকে খেলতে হত চেক প্রজাতন্ত্র এবং সুইডেন ম্যাচের জয়ীর বিরুদ্ধে।
পোলান্ড খেলতে অস্বীকার করার পর চেক প্রজাতন্ত্র এবং সুইডেনও জানিয়ে দিয়েছে ফিফার নির্দেশ মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই তিন দেশই এক সঙ্গে ফিফাকে অনুরোধ করেছে, রাশিয়াকে প্রতিযোগিতা থেকেই বহিষ্কার করার জন্য।
পোলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেজারি কুলেজা ফিফার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘ফিফার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে আগ্রহী নই। নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া যে নামেই মাঠে নামুক আমরা খেলব না।’’
চেক প্রজাতন্ত্রের ফুটবল সংস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে জানিয়েছে, নিরপেক্ষ কেন্দ্রেও রাশিয়ার সঙ্গে খেলবে না তারা। তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে খেলার কোনও প্রশ্নই নেই। আমাদের সব কর্তা, ফুটবলার এ নিয়ে সহমত। আগে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান দরকার। তার পর খেলার কথা ভাবা যাবে।’’
রাশিয়া-ইউক্রেন সামরিক সংঘর্ষ অব্যাহত। সামরিক অভিযান বন্ধের কোনও ইঙ্গিত এখনও দেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নানা ভাবে ইউক্রেনকে সাহায্য করলেও সরাসরি রাশিয়াকে প্রতিহত করার পথে হাঁটেনি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হুঁশিয়ারিও কানে তোলেননি পুতিন। আমেরিকা এবং ইউরোপের তাবড় শক্তিধর দেশগুলি রাশিয়াকে প্রতিহত করার উপায় খুঁজতে ব্যস্ত। ঠিক এই সময়ই বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা-র নির্দেশকেও গুরুত্ব দিতে নারাজ ইউরোপের দেশগুলি।
ফিফা রাশিয়ার ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেও কিছুটা ধীরে চল নীতি নিয়েছে। ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব শান্তি স্থাপনের আবেদন করেছে। ইউক্রেনের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ফিফা কর্তারা।
ফিফা রাশিয়াকে নিরপেক্ষ দেশে খেলার নির্দেশ দিলেও তাদের ম্যাচ আয়োজন করার আগ্রহ দেখায়নি কোনও দেশ। স্বভাবতই সূচি অনুযায়ী রাশিয়ার পরবর্তী ফুটবল ম্যাচগুলি বিশবাঁও জলে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে দেশগুলি খেলতে অস্বীকার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার জায়গায় নেই ফিফা। তাতে জটিলতা আরও বাড়তে পারে। আরও বহু দেশ সরাসরি রাশিয়াকে বয়কটের কথা বলতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে না খেলার সিদ্ধান্ত এই দেশগুলি বজায় রাখলে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব বা মহিলাদের ইউরো কাপের ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য মহিলাদের ইউরো কাপ ২০২২-এর জন্য আগেই যোগ্যতা অর্জন করেছে রাশিয়া। আগামী জুলাইয়ে উয়েফার এই প্রতিযোগিতার আয়োজক ইংল্যান্ড। কিন্তু, রাশিয়ার মহিলা ফুটবল দলকে দেশে ঢোকার অনুমতি ব্রিটিশ সরকার দেবে কি না, তাও এখন অনিশ্চিত। যোগ্যতা অর্জন করা কয়েকটি দেশও রাশিয়ার সঙ্গে এক প্রতিযোগিতায় খেলতে চায় না। ফলে এই প্রতিযোগিতা ঘিরেও জটিলতার আশঙ্কা থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy