ম্যাচের পর কাঁদলেন রোনাল্ডো। ছবি: রয়টার্স
তাঁকে নিয়ে গত এক মাস ধরে অনেক জল্পনা, অনেক রটনা হয়েছে। শনিবারের পর থেকে হয়তো আর তা থাকবে না। স্তিমিত হয়ে যাবে সব আলোচনা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিশ্বকাপটাই যে শেষ হয়ে গেল। কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর কাছে ০-১ গোলে হেরে গেল পর্তুগাল। ৩৭ বছর বয়সী রোনাল্ডো যে আর বিশ্বকাপ খেলবেন, এই অলীক স্বপ্ন কেউই দেখছেন না। ফলে শনিবার বিশ্বকাপ শেষ বারের মতো দেখে ফেলল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। কাঁদতে কাঁদতে সাজঘরে ঢুকে যাওয়ার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ামাত্রই আকুল গোটা বিশ্ব। সমাজমাধ্যমে রোনাল্ডোকে সান্ত্বনা দিলেন মেসি-ভক্তরাও। রোনাল্ডোর মতোই প্রিয় তারকাকে চোখের জলে বিদায় জানালেন তাঁর অনুরাগীরা।
ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। শনিবারও পর্তুগালের প্রথম একাদশে রাখা হয়নি রোনাল্ডোকে। যে দল সুইৎজ়ারল্যান্ডকে আধ ডজন গোল দিয়েছিল, সেই দলই নামিয়েছিলেন ফের্নান্দো সান্তোস। ওয়ার্ম-আপে নেমে বেশ ছুটোছুটি করলেন রোনাল্ডো। ভাল করে গা ঘামালেন। ম্যাচ শুরুর আগে দলের সঙ্গে ফিরলেন সাজঘরে। তার পর যথারীতি গোমড়া মুখে এসে ডাগআউটে বসে পড়লেন। আগের ম্যাচে ক্যামেরা যত বার তাঁর দিকে ফোকাস করেছিল, ততটা এ দিন করেনি। তবু যে কয়েক বার তাঁকে দেখা গেল, প্রতি বারই গোমড়া মুখে বসেছিলেন তিনি।
প্রথমার্ধেই গোল করে মরক্কোকে এগিয়ে দেন এন-নেসিরি। গোলের পরেই ক্যামেরা ধরল রোনাল্ডোকে। মুখ দিয়ে শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। বছর কয়েক আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে গোলের কথা মনে পড়ে গেল কি? রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় এ ভাবেই তো নিজের মার্কারকে এড়িয়ে অনেকটা লাফিয়ে গোল করেছিলেন। এখন কি আর পারবেন না বলেই দীর্ঘশ্বাস! বোঝা গেল না ঠিক।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই খেলতে নামেন তিনি। ভাবা গিয়েছিল, বেশি ক্ষণ খেলার সুযোগ পেয়ে হয়তো কাজে লাগাতে পারবেন তিনি। তা আর হল কই? বল যে পাননি তা নয়। কিন্তু এই রোনাল্ডো আর আগের বিশ্বকাপের রোনাল্ডোর মধ্যে অনেক তফাত। তখন ৩৫ গজ দূরের ফ্রিকিক থেকে অবলীলায় গোল করে দিতে পারতেন। অনেকটা লাফিয়ে হেড দিতে পারতেন। বল নিয়ে চোখের নিমেষে বিপক্ষের ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারতেন। এ দিনও সবই করলেন। কিন্তু বয়সের ছাপ প্রতি মুহূর্তে ধরা পড়ল।
It hurts me to see Ronaldo like this man 💔 pic.twitter.com/MbRGnTcRO2
— WolfRMFC (@WolfRMFC) December 10, 2022
রোনাল্ডোর পা থেকে সহজেই বল কেড়ে নিল প্রতিপক্ষ। দূর থেকে ক্রস ভাসাতে গেলেও তা চলে গেল গোললাইনের বাইরে। ইনসাইড কাট করে ভেতরে ঢুকতে গেলে ডিফেন্ডার ট্যাকল করে বল ক্লিয়ার করে দিলেন। সুযোগ একটা নিজে তৈরি করেছিলেন রোনাল্ডো। তখন ম্যাচের সংযুক্তি সময় চলছে। পিছন থেকে সতীর্থের পাস পেয়ে গোল না দেখেই শট নিয়েছিলেন রোনাল্ডো। মরক্কো গোলকিপার ইয়াসিন বোনো সতর্ক থেকে বল ধরে ফেলেন। আগে একই ধরনের গোল রোনাল্ডোকে করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই রোনাল্ডোর সঙ্গে আগের রোনাল্ডোর তুলনা টানা বৃথা। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা ম্যাচে ১০ বার বল পেয়েছেন তিনি। গোলে শট মাত্র এক বার।
ম্যাচের পর চোখমুখ ইস্পাতকঠিন করে যখন তিনি বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন পাশে দাঁড়ানোর জন্য ছিলেন না কোনও সতীর্থ। বিপক্ষের দু’-একজন ফুটবলার এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেলেন অবশ্য। টানেলে ঢোকার পরেই আর আবেগ বাঁধ মানল না। চোখ ফেটে বেরিয়ে এল জল। এই রোনাল্ডোকে আগে কোনও দিন দেখেনি বিশ্ব। এ ভাবে তিনি কাঁদতে পারেন, সেটাও অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। কিন্তু রোনাল্ডো যে আবেগপ্রবণ, তার প্রমাণ আগে বার বার দিয়েছেন। চোখের জলও বেরল সবার অলক্ষেই। টানেল দিয়ে সাজঘরে ঢোকার সময় পাশে হেঁটে যাচ্ছিলেন শুধু ফিফার এক কর্মী। সাপোর্ট স্টাফ, কোচ, সতীর্থ— কেউ ছিল না।
বিশ্বকাপ হয়তো আর কোনও দিন হাতে তোলা হবে না। কিন্তু এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে অতীতে বেশ কয়েক বছর রোনাল্ডোকে দেখবেন বলেই পর্তুগালের খেলা দেখতে টিভির সামনে বসতেন ফুটবলপ্রেমীরা। ২০১০, ২০১৪ বা ২০১৮ বিশ্বকাপেও দলকে একার কাঁধে টেনেছেন রোনাল্ডো। স্পেনের বিরুদ্ধে গত বিশ্বকাপে তাঁর সেই হ্যাটট্রিক কে ভুলতে পারবে? এখন যাঁরা প্রতি মুহূর্তে সমালোচনায় ভরিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরাই অতীতে রোনাল্ডোর স্কিল দেখে হাততালি দিতেন।
সব থাকল, শুধু বিশ্বকাপটাই থাকল না ক্যাবিনেটে। চিরশত্রু লিয়োনেল মেসি এখনও টিকে রয়েছেন বিশ্বকাপে। নেমারের হাত ধরেই চোখের জলে বিশ্বকাপকে বিদায় জানালেন রোনাল্ডো। তাঁর অগণিত ভক্তরাও বিদায় জানাল চোখের জলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy